Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘রোমান্টিক’ মামুনুলের চার ‘প্রেমের’ ফোনালাপ প্রকাশ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ এপ্রিল ২০২১, ১২:২৪ PM
আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২১, ১২:২৪ PM

bdmorning Image Preview


হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জে নারীসহ অবরুদ্ধ হওয়ার পর থেকে তাদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ হচ্ছে না। গ্রামের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে আলোচনা-সমালোচনা চললে জাতীয় সংসদেও। যদিও শুরু থেকেই ওই নারীকে দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে আসছিলেন মাওলানা মামুনুল হক।

তিনি জানান, ওই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী, নাম আমিনা তৈয়বা। যদিও জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার নাম জান্নাত আরা ঝর্না। ঝর্নার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দেশের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম।

এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও গণমাধ্যমে প্রচারের পর ওই নারীর গ্রামেও এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। ঝর্নার আগে আরেকটি বিয়ে হয়েছিল; দুটি সন্তান আছে-এ কথা সবাই জানলেও তার দ্বিতীয় বিয়ের খবর জানেন না এলাকাবাসী।

ঝর্নার বাবা বলেন, জান্নাত আরা ঝর্নার নয় বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল হাফেজ শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। তার বাড়ি বাগেরহাটের চিতলমারীর চর-কচুড়িয়া গ্রামে। শহীদুল্লাহ ও ঝর্না দম্পতির আব্দুর রহমান (১৭) ও তামীম (১২) নামে দুই পুত্রসন্তান রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে আড়াই বছর আগে শহীদুল্লাহ ও ঝর্নার ডিভোর্স হয়ে যায়। দুই বছর আগে পরিবার থেকে পাত্র দেখে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পরে নিজেই বিয়ে করেছে ঝর্না। তবে কাকে বিয়ে করেছে তা আমাদের জানায়নি।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের ঘটনার পর থেকে একের পর এক মাওলানা মামুনুল হকের কণ্ঠের মতো অডিও ফাঁস হচ্ছে। এসব অডিও ইতোমধ্যে সামাজিকমাধ্যম ইউটিউব ও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

সম্প্রতি মামুনুল হকের কণ্ঠের ন্যায় চারটি অডিও ফাঁস হয়েছে। তবে এসব অডিওতে যে কণ্ঠ উঠে এসেছে তা মামুনুল হকের কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায় নি। একইভাবে নারী কণ্ঠের যে অডিও ফাঁস হয়েছে সেটি রিসোর্টে অবরুদ্ধ নারী জান্নাত আরার কি না তাও নিশ্চিত হওয়া যায় নি।

চারটি অডিওর কথোপকথন হুবহু তুলে ধরা হলো।

অডিও-১:

নারী: আসসালামু আলাইকুম।
পুরুষ: ওআলাইকুম আসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ, কী খবর?

নারী: বেঁচে আছেন আপনি?
পুরুষ: না আমি তো মইরা গেছি।

নারী: খুব ভালো আছেন মনে হইতাছে। 
পুরুষ: জান্নাতে আছি জান্নাতে আছি।

নারী: আপনেরে কী করা উচিত আপনেই কন।
পুরুষ: কী করা উচিত, কী করতে চাও বল, আমি হাজির হই।

নারী: আছেন কই? আপনাদের মিটিং-মিছিল সব শেষ হইছে না আরও বাকি আছে?
পুরুষ: এইগুলা এই জীবনে শেষ হইব না। 

নারী: না, তা কী আর শেষ হয়।
পুরুষ: কিছুদিন কমবে, কিছুদিন বাড়বে, এইভাবেই চলবে।

নারী: গলা ভাঙে নাই, চিল্লাইছেন তো।
পুরুষ: না, গলা ভাঙে নাই। 

নারী: নেট কি হইছে? হোয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার কিচ্ছু চলে না কারণ কী?
পুরুষ: নেট স্লো কইরা দিছে সরকার, ফেসবুক বন্ধ কইরা দিছে। 

নারী: আমি এহন মিনিট কিনতাছিলম, টাকা ঢুকাইতাছিলাম ফোনে। আপনেরে ফোন দিয়া ইচ্ছামতো বকতাম এহন।
পুরুষ: কী হইছে, আমারে বকা দিবা ক্যা?

নারী: আপনার কোনো খোঁজ খবর আছে, খুইজা পাইতাছি আপনারে? শরীফরে কত ফোন দিছি, শরীফ তো ফোনই ধরে না। আপনের ফোনে তো ফোনই যায় না।
পুরুষ: তুমি ম্যাসেজ দিতা, আমি রিপ্লাই দিচ্ছি। 

নারী: আমার তো ম্যাসেজও সেন্ড হইতাছে না এহন আর। 
পুরুষ: মোবাইল থেকে ম্যাসেজ দিতা, টেক্সট করতা।
 
নারী: আরে, আমার ফোনে জানি কি হইছে। আমি তো এইডাও পারতাছিনা। এহন সিম-ব্যাটারি সব খুইলা আবার অন করলাম। তারপর ফোনডা দিছি।

পুরুষ: কী অবস্থায় আছ, বল। 
নারী: আমার অবস্থা ভালোই।
পুরুষ: শরীর স্বাস্থ্য ভালো আছে?
নারী: জ্বি আলহামদুলিল্লাহ।

পুরুষ: যুদ্ধ-টুদ্ধ বন্ধ হইছে?
নারী: না, জিহাদের ডাক দিলেন আপনে, বন্ধ হইব কেমনে? শুরু হইতাছে, যুদ্ধের ডাক না দিলেন আপনে।

পুরুষ: আমি তো যুদ্ধের ডাক দিছি দেশব্যাপী।
নারী: আমি নাগরিক না, আমার দায়িত্ব আছে না? মামুনুল হক ডাক দিলে আমার যাইতে হইব না? কালকে বন্ধ পাইছি, পরশু দিন আবার ক্লাস। বন্ধ দেয় নাই। বৃহস্পতিবার ছুটি নিমু।

পুরুষ: কিসের ছুটি নিবা?
নারী: ডাক্তার দেখাইতে হইব, চোখে ব্যাথা। আমার দুইদিন রেস্টের দরকার আছে। ইচ্চা কইরাই যামু না। আপনার কি মাহফিল নাই?

পুরুষ: না, এখন মাহফিল কম। মাহফিল নেওয়া বন্ধ কইরা দিছি। আধা আধা লকডাউন দিচ্ছে।
নারী: এইরকম তো কিছু শুনলাম না, সব বন্ধ কইরা দিব?

পুরুষ: এটা বলা যায় না পুরা। আপনে কি রান্না করছেন আজকে? আসি খাইতে?
নারী: আসেন, টমেটোর চাটনি করছি, মলা মাছ রান্না করছি। আপনে কি আসলেই আসবেন? না কি ঝাড়ি দিতাছেন আপনে। 

পুরুষ: না, আসা গেলে আসব। 
নারী: আসেন, নাকি ভয় পাইতাছেন?

পুরুষ: না, ভয় না। 
নারী: তাইলে আসেন।
পুরুষ: দেখি...

নারী: কবুতর রান্না করি। কিন্তু আপনেরে রাত্রে থাকতে দিতে পারতাম না। 
পুরুষ: তাইলে কি পারবা?
নারী: খাওয়াতে পারুম।
 
পুরুষ: কী খাওয়াইবা?
নারী: কন আপনে কী খাইতে চান।

পুরুষ: চিনি কাবাব।
নারী: ১ কেজি আছে, দিয়া দিমুনি।

পুরুষ: এই চিনি না, যুদ্ধের চিনি। 
নারী: এইটা কি আমি আনব?
পুরুষ: হুম
নারী: হা হা হা
পুরুষ: আজকে তো শবে বরাত, এই উপলক্ষে...

নারী: এহন আপনে আসলে বলেন, শিওর কইরা জানান। আপা কবুতর নিয়া আইছিল বাসা থেকে। আপনের উদ্দেশে আনা। কিন্তু আপনে অনেক ঝামেলায় ছিলেন। দুলাভাইয়ের লগে এইবার অনেক ঝামেলা হইছে। 

পুরুষ: সমস্যা নাই তো। 
নারী: না, মনে হয় না। সমস্যা মনে করলেই সমস্যা। না করলে কিচ্ছু না। 
পুরুষ: আচ্ছা, রাখি তাইলে।
নারী: রাখলাম।

পুরুষ: কতক্ষণ পর্যন্ত আসা যাবে?
নারী: ওরা গেট বন্ধ করে ১০টা ১১টা। চাবি নিয়া রাখলাম, সমস্যা নাই। 
পুরুষ: চাবি রাখা যায়?
নারী: বললাম, মেহমান আসবে।
পুরুষ: আচ্ছা, রাখি তাইলে, আসসালামু আলাইকুম।

অডিও-২:

নারী: আসসালামু আলাইকুম।
পুরুষ: ওলাইকুম আসসালাম, আমি আসছি।

নারী: চইলা আসছেন?
পুরুষ: হ্যাঁ।

নারী: গেট খুইলা লই।
পুরুষ: গেট খুইলা আমারে রিসিভ করার ব্যবস্থা কর।

নারী: হ্যাঁ, কিছুই বুঝি না। আচ্ছা রাখলাম।
পুরুষ: আসতেছি কিন্তু।

নারী: আচ্ছা।
পুরুষ: কেউ আছে কি না দেখ আগে।

অডিও-৩:

পুরুষ: চলে আসছি, বুঝছ?
নারী: ঠিক আছে, শুনছি।

পুরুষ: চোরের মতো কথা কও ক্যা, জোরে কথা কইতে পার না?
নারী: জোরে জোরে কমু, সমস্যা কী?

পুরুষ: গুড নাইট। ফ্রেশ হইয়া নামাজ পরবা না?
নারী: হুম।

পুরুষ: নামাজ পইরা আমার জন্য দোয়া কইর।
নারী: বাসায় পৌঁছায়ে একটা ম্যাসেজ দিয়েন।

পুরুষ: আর ম্যাসেজ দিয়া কী হইব? বাসায় পৌঁছাইয়া গেছি আমি।
নারী: আচ্ছা যান, আসসালামু আলাইকুম।

অডিও-৪:

নারী: আসসালামু আলাইকুম।
পুরুষ: ওআলাইকুম আসসালাম, কী অবস্থা? ঝামেলা নাকি?
নারী: না, বলেন।

পুরুষ: কথা এমনে কইতাছ ক্যা, মনে হয় ঘুমাইয়া ঘুমাইয়া কথা কইতাছ?
নারী: ক্লাসে আছি।

পুরুষ: ক্লাসে থাকলে কী হইছে? ক্লাসে থাকলে কি প্রাণ খুইলা কথা কওয়া যায় না?
নারী: আপনে একটু অফিসে বসেন, আমি আসতেছি।

পুরুষ: কেন অফিসে বসব আমি, আমি অফিসে বসব না। আমি এখনই কথা বলব। যা ইচ্ছা তাই বলব।
নারী: বাড়াবাড়ি বেশি করতেছেন না আপনে?

পুরুষ: কিসের বাড়াবাড়ি? কথা বলতে চাইছি, বাক স্বাধীনতা মানুষের অধিকার।
নারী: আমার যখন থাকে, আমার অধিকার আপনে হরণ করছেন। পুলাপানের সামনে এহন কিছু কইতে পারতাছিনা। 

পুরুষ: হা হা হা....
নারী: মজা নিতাছেন? (এ সময় তৃতীয় কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছিলেন নারী)

পুরুষ: এটা ঠিক না, এটা ঠিক না। একজনকে লাইনে রাইখা আরেকজনের লগে কথা বলা ভদ্রতার পরিপন্থি কাজ। 
নারী: দুইটা মিনিট বসেন আমি আসতাছি। 

পুরুষ: আমি কথা বলতেছি, আবার বসতে বলে।
নারী: কন আপনে কন, পরীক্ষা চলে তো, বুঝছেন। পুরা মাদ্রাসার দায়িত্ব। দৌড়াইতে দৌড়াইতে, এদিক দিয়ে নিজের ক্লাস আছে।
 
পুরুষ: কী অবস্থা এখন, ফ্রি? ওনারা কি আছে না চইলা গেছে?
নারী: দুলাভাই সকালে বিদায় নিছে, আপা আছে।

পুরুষ: ওনারা তো থাকবে। ওনাদের রাইখা তো কোনদিকে যাওয়া যাইব না।
নারী: ফুর্তিতে আছেন মনে হইতাছে? এতো ঝামেলার মধ্যে এতো রস আহে কোত্থেকে?

পুরুষ: যেইটা জিজ্ঞাসা করছি সেইটা বল।
নারী: হ, যাওয়া যাইব।

পুরুষ: কেমনে?
নারী: সে চিন্তা আপনার না আমার?

পুরুষ: রিয়েলি, ফাইনাল কিন্তু।
নারী: তাই, না? আইচ্ছা, পরে জানাইতাছি আপনারে। কবে, কোনদিন?
পুরুষ: আজকে।

নারী: কহন?
পুরুষ: বিকালে, সন্ধ্যায়।
নারী: আরে না।

পুরুষ: এইটই। আসসালামু আলাইকুম। মামুনুল হক আমার নাম। তো ঠিক আছে, তুমি জানাও।
নারী: আইচ্ছা।

গত শনিবার (৩ এপ্রিল) বিকেলে সোনারগাঁওয়ের রয়েল রিসোর্টের ৫০১ নম্বর কক্ষে নারীসহ মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে স্থানীয়রা। পরে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। 

Bootstrap Image Preview