প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, ‘আমরা আপনার শত্রু নই। আপনার শত্রু আপনার ঘাড়ে বসে আছেন। যারা কোনো ধর্ম মানে না, যারা নাস্তিক তারাই ইসলামের শত্রু। তারাই আপনার শত্রু।’
চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে শুক্রবার জুমার নামাজের পর আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি একথা বলেন।
ডাকবাংলো চত্বরের সামনে সমাবেশে বাবুনগরী বলেন, ‘সরকার আমার নামে অনেক মামলা দিয়েছে। আরও মামলা দিতে পারে। আমি জেলে গিয়েছি। তাই আমি জেলখানায় যেতে ভয় পাই না। যে কোনো মুহূর্তে জেলখানায় যেতে আমি প্রস্তুত আছি।
গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিতে নিহতদের সংগঠনের কর্মী দাবি করে বাবুনগরী বলেন, ‘গত শুক্র, শনি ও রোববার সারা দেশে যেসব হেফাজতের নেতা-কর্মীরা শহিদ হয়েছেন। তাদের ক্ষতিপূরণ সরকারকে দিতে হবে। ছাত্রলীগ, পুলিশের হামলায় হেফাজতের যেসব নেতাকর্মী আহত হয়েছেন তাদের সুচিকিৎসা দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।
‘ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামে হেফাজত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা মামলা দায়ের হয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার করে নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব হেফাজত নেতা-কর্মী পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদেরকে মুক্তি দিতে হবে। নয়তো হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী কেউ আলেম নয়। কোনো পীর আউলিয়া তাকে হত্যা করেনি। তাকে হত্যা করেছে তার আশপাশে থাকা লোকজন। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলব, আপনি আপনার শত্রুকে চিনে নিন।’
হেফাজতের এই বিক্ষোভ সমাবেশকে কেন্দ্র করে জুমার নামাজের পর চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
মহাসড়কের হাটহাজারী বাজার কাচারি রোডের মুখে শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। ফলে সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ঘটনাস্থলে থেকে হাটহাজারী মডেল থানার এসআই আলমগীর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জুমার নামাজের পর হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে ডাকবাংলোতে হেফাজতের বিক্ষোভ সমাবেশ করার কথা রয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে তাই সড়কটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পরিস্থিত স্বাভাবিক হলে সড়ক যান চলাচল চালু করা হবে।’
গত শুক্রবারও জুমার নামাজের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধীতায় হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা থেকে কয়েক হাজার হেফাজত কর্মী মিছিল নিয়ে বের হয়। এ সময় তারা হাটহাজারী থানা, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও ডাকবাংলোতে হামলা চালায়। পাশাপাশি তারা ভূমি অফিসে আগুনও দেয়। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ভূমি অফিসে প্রবেশে বাধা দেয় হেফাজতের কর্মীরা।
এসময় হেফাজত ও পুলিশের সংঘর্ষে গুলিতে চারজন নিহত হন। তাদের মরদেহ পুলিশি পাহারায় নিজ নিজ এলাকায় পৌঁছে দেয় পুলিশ।
পরদিন শনিবার সকালে হেফাজত কর্মীরা মাদ্রাসা গেটে অবস্থান নিয়ে দেয়াল তুলে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক অবরোধ করে রাখে। রাতে ডাকবাংলোতে ফের আগুন দেয় হেফাজতের কর্মীরা। পাশাপাশি তারা দুইটি মোটরসাইকেলও পুড়িয়ে দেয়।
তিনদিন পর তারা দেয়াল তুলে নিলে স্বাভাবিক হয় চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে।