Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

যেভাবে ভেস্তে গেল বিএনপি থেকে জামায়াতকে দূরে ঠেলার উদ্যোগ!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩১ মার্চ ২০২১, ০৪:২৯ PM
আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২১, ০৪:২৯ PM

bdmorning Image Preview


২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াতকে দূরে ঠেলতে বিএনপির একটি অংশ অনেকদূর অগ্রসর হলেই দলের অন্য একটি অংশ সেটি ভণ্ডুল করে দেয়; এমন পরিস্থিতি কয়েক মাস ধরেই বিএনপিতে চলছে। সর্বশেষ গত শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেওয়া এমন একটি সিদ্ধান্ত ভণ্ডুল হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আর এ ঘটনার জন্য অভিযোগের আঙুল উঠছে স্থায়ী কমিটিরই একজন সদস্যের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং বেশ কয়েকজন নেতা মারা যাওয়ার ঘটনায় ২০ দলীয় জোটের শরিকরা নিজ অবস্থান থেকে পৃথক পৃথক বিবৃতি দেবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এমন সিদ্ধান্তের মূল কারণই ছিল—জামায়াতকে বিএনপির কর্মসূচি থেকে পৃথক করা বা দূরে রাখা এবং এভাবে আস্তে আস্তে জোট ভেঙে দিয়ে নতুনভাবে বৃহত্তর ঐক্যের প্রেক্ষাপট তৈরি করা। ওই দিন ভার্চুয়াল বৈঠকে জামায়াতকে দূরে রাখার এমন কৌশলে সম্মতি দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাঁর এমন সিদ্ধান্তে স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বৈঠকে বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। তাহলে তো কাজ হয়েই গেল।’ অর্থাৎ জামায়াতকে পৃথক করার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় তাঁরা সেদিন বৈঠকে সন্তোষ প্রকাশ করেন বলে জানা যায়।

কিন্তু ২৭ মার্চ শনিবার ২০ দলীয় জোটের একসঙ্গে বা যৌথ বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। এর অর্থ হলো—জামায়াত বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটেই আছে। ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান। শুধু তা-ই নয়, বিএনপির দলীয় প্যাডে ওই বিবৃতি পাঠান তিনি। বিষয়টি নিয়ে দুই দিন ধরে বিএনপিতে তোলপাড় চলছে বলে জানা গেছে। কারণ স্থায়ী কমিটির প্রায় সব সদস্যই পরের দিন রবিবার গণমাধ্যমে ওই বিবৃতি দেখে ক্ষুব্ধ হন। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে লন্ডনে তারেক রহমানকে জানানো হয়। তিনি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র একাধিক সদস্যকে এ ঘটনা সঠিকভাবে জেনে পরিস্থিতি নিষ্পত্তি করতে বলেছেন। পাশাপাশি একাধিক সদস্যকে তিনি এ-ও বলেন, এটি পুরোপুরি দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। সিনিয়র নেতারা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কাজ করলে তিনি কাকে ট্রাস্ট করবেন—নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তারেক রহমান এমন প্রশ্নও তোলেন বলে জানা যায়।

এদিকে ঢাকায় সিনিয়র নেতারা রবিবার টেলিফোনে নিজেদের মধ্যে আলাপকালে এ ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেন। কেউ কেউ এমনও বলেন যে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সিদ্ধান্ত এভাবে উল্টে দিলে আলোচনা বা রাজনীতি করেই লাভ কী! বেশ কয়েকজন নেতা তারেক রহমান এবং দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে বিষয়টি জানান। তবে এমন ঘটনায় ফখরুলও অন্যদের মতো বিস্মিত ও বিব্রত হন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো থেকে জানা যায়।

যদিও মহাসচিব থাকার কারণে দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির আশঙ্কায় এ প্রশ্নে কালের কণ্ঠকে কোনো কথা বলতে রাজি হননি মির্জা ফখরুল। একই কারণে কথা বলতে রাজি হননি দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তবে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় স্বীকার করেন, ‘মানুষ হত্যার প্রতিবাদে ২০ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলোর বিবৃতি পৃথকভাবে দেওয়ার সিদ্ধান্তই হয়েছিল। ওইভাবে দেওয়া হলে বেশি দল এবং বিবৃতিও সবাই প্রকাশ করত। কিন্তু নজরুল ভাই হয়তো অর্গানাইজ করতে পারেননি।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির আরেকজন নেতা বলেন, ‘ওই ঘটনায় নজরুল ইসলাম খানের কিছু কারিগরি তো আছে। তাঁরও নানাভাবে ম্যানেজ করে চলতে হয়।’

তবে স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তের বাইরে কিভাবে যৌথ বিবৃতি গণমাধ্যমে গেল সে প্রশ্ন এড়িয়ে যান নজরুল ইসলাম খান। সোমবার সন্ধ্যায়  তিনি বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সেটি দলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে জানানো হয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি সেটি জানাতে পারি না।’

উল্টো প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘পৃথক বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত ২০ দলীয় জোটের মধ্যে হয়েছে? হয়নি তো। আর বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে হলে সেটি আমি বলতে পারব না।’ রবি ও সোমবার দুই দিনে অন্তত ১০ বার চেষ্টার পর কথা বলা সম্ভব হয় নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে। সাংবাদিকরা অতি উৎসাহী হয়ে কেন এসব লিখছেন তা নিয়েও এ সময় প্রশ্ন তোলেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে আলাপ করে বিবৃতির বিষয়ে শুধু তাদের মতামত নেন নজরুল ইসলাম খান। কাউকে পৃথকভাবে বিবৃতি দেওয়ার কথা তিনি বলেননি। যৌথ বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নজরুল ইসলাম খান এককভাবে নেন বলে জানা গেছে। সাম্প্রতিককালে জামায়াতের ব্যাপারে তাঁর ‘বিশেষ দুর্বলতা’ নিয়ে বিএনপির ভেতরে-বাইরে অনেক আলোচনা আছে।

জোটের শরিক এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ জানান, ‘নজরুল ইসলাম খান ফোন করে বিবৃতির বিষয়ে কেবল মতামত নিয়েছেন। পৃথক নাকি যৌথভাবে সেটি আমরা জানি না।’

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০ দলের বিবৃতির ব্যাপারে আমরা অবহিত। এর চেয়ে বেশি কিছু জানা নেই।’

হেফাজতের ডাকা হরতালে বিএনপি সমর্থন না করলেও জামায়াতে ইসলামী নৈতিক সমর্থন দিয়েছিল। জামায়াতের এই পৃথক অবস্থান নিয়েও বিএনপিতে আলোচনা আছে।

এর আগে গত জানুয়ারি মাসে বিএনপি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলাদাভাবে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিলেও শেষ পর্যন্ত সেটি ভণ্ডুল হয়ে যায়। ১৪ জানুয়ারি হঠাৎ করেই জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের কয়েকটি শরিক দলকে নিয়ে ঢাকায় একটি স্মরণসভার আয়োজন করেন নজরুল ইসলাম খান। তখনো এ নিয়ে বিএনপিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় বলে জানা যায়। কেউ কেউ অবশ্য তখন সন্দেহ করেন, তাঁর ওই আয়োজনে হয়তো তারেক রহমানের সম্মতি থাকতে পারে। তাঁর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার স্থপতি বলে উল্লেখ করেন।

সূত্র: কালের কণ্ঠ 

Bootstrap Image Preview