পৌরসভার অনুমোদন না নিয়ে গোপনে দোতলা বাড়ির গাঁথুনির কাজ করাচ্ছিলেন যশোর মণিরামপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিসের পেছনের বাসিন্দা আসমা ড্রাগ হাউজের মালিক আব্দুল হক। একতলা বাড়ির ছাদের ওপর দিয়ে গেছে পল্লী বিদ্যুতের উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন সংযোগের তার। ঝুঁকি নিয়ে কোন মিস্ত্রি কাজ করতে না চাইলেও রাজমিস্ত্রি আল আমিন (২৫), মামুন হোসেন (১৯) এবং অন্য এক শ্রমিক দিয়ে চলছিল ওই বাড়ির কাজ।
৩-৪ দিন কাজ চলার পরই বিপত্তি ঘটে ২৩ মার্চ বিকেল তিনটার দিকে। দোতলার লিন্টেলের কাজের জন্য রড বাঁধাই করে ওপরে তুলতে গিয়ে ছাদের উপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের তারে স্পর্শ করে রড। বিদ্যুতের আগুনে দগ্ধ হন মামুন। আহত হন আল-আমিনও। তাদের উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয় মামুনকে।
শনিবার (২৭ মার্চ) রাতে মৃত্যু হয় দগ্ধ মামুনের। এরপর ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ বাড়িতে এনে পরদিন রাতে দাফন করা হয়।
অসুস্থ-দরিদ্র বাবা-মায়ের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন তিনি। তাকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখতেন বাবা নাজির আহম্মদ ও মা সুফিয়া খাতুন। একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তারা। তবে ছেলের মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করছেন না তার পরিবার। ঘটনাটিকে নিজেদের ভাগ্য বলে মেনে নিয়েছেন। নিহতের বাবা বিনা ক্ষতিপূরণেই বাড়ির মালিকের সঙ্গে সমঝোতা করে নিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) মামুনের বাড়িতে গিয়ে লোকজনের ভিড় চোখে পড়ে। সেখানে ছিলেন বাড়ির মালিক আব্দুল হকও।
মামুনের বাবা মা বলেন, ‘ছেলেরে বিয়ে দিতে চাইছি। তার মধ্যি ও চলে গেল। আমার ছেলের মৃত্যু এভাবে লেখা ছিল।’
আব্দুল হক বলেন, ‘মামুনের চিকিৎসার সব খরচ দিয়েছি। তার কাফনের কাপড় পর্যন্ত কিনে দিয়েছি। এখন থেকে তারা আমার পরিবারের একটা অংশ। তাদের দায়িত্ব আমার।’
স্থানীয়রা বলছেন, আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে একটি তাজা প্রাণের মূল্য হয় না। মামুনের পরিবার সেটা বুঝেছেন। তবে বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে মালিক বা শ্রমিকদের আরও সচেতন হওয়া দরকার। কঠোর হওয়া দরকার পল্লী বিদ্যুৎ বা পৌর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের।
মণিরামপুর পৌরসভার কামালপুর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাবুল আকতার বলেন, ওই বাড়ির একতলা পর্যন্ত অনুমোদন ছিল, দোতলার অনুমোদন নেই। তবে আহত থাকাকালীন মামুনের চিকিৎসার সব খরচ দিয়েছেন আব্দুল হক। নিহতের স্বজনরা ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ ফেরত চেয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী তার লাশ বাড়িতে এনে দাফন করা হয়েছে। কোনও সমস্যায় পরে মামুনের বাবা-মা আব্দুল হকের কাছে এলে তাদের সহায়তা দেওয়ার জন্য তাকে বলা হয়েছে।
স্থানীয় খানপুর ইউপি চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ বলেন, ‘সকালে আব্দুল হক লোকজন নিয়ে আমার কাছে এসেছিলেন। আমি তাকে মামুনের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। দুস্থ হলেও এই পরিবারটির মতো ভালো পরিবার ওই মহল্লায় নেই। ওরা মামলা করতে চায়নি।
যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ মণিরামপুর সদর দপ্তরের জেনারেল ম্যানেজার অরুণ কুণ্ডু বলেন, ‘যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে ওই বাড়ির ছাদের ওপর দিয়ে ৩৩ হাজার ভোল্টেজ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ অতিক্রম করেছে। নিয়ম অনুযায়ী পল্লীবিদ্যুৎ সংযোগ হতে কমপক্ষে দশ ফুট দূরত্বে ঘর নির্মাণ করতে হবে। বাড়ির মালিক সেটা অমান্য করে কাজ করাচ্ছিলেন। ঘটনাটি শোনামাত্র আমরা সতর্কতার জন্য মাইকিং করেছি। ওইঘর আর না গাঁথার জন্য বাড়ির মালিককে চিঠি দেয়া হবে।’