চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা এলাকার আলোচিত লেডি গ্যাং লিডার তাহমিনা সিমি ওরফে সিমরান সিমিকে আটক করেছে পুলিশ। বাসায় ঢুকে এক তরুণীকে পিটিয়ে জেলে যাওয়ার ৬ মাসের ব্যবধানে আরেক তরুণীকে মৃত্যুর হুমকির পাশাপাশি সহযোগীকে দিয়ে মার খাওয়ানোর ঘটনায় তাকে আটক করা হয়।
শনিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে নিজ বাসা থেকে সিমিকে পুলিশ আটক করেন। অভিযুক্ত সিমি খুলনার বাগেরহাটের কামাল হোসেনের মেয়ে। তবে তারা দীর্ঘদিন ধরে নগরীর ইপিজেড থানার সিমেন্ট ক্রসিং বড়বাড়ি এলাকায় পরিবারের সাথে বসবাস করছেন।
জানা যায়, শনিবার ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও’র জেরে সিমিকে আবারো আটক করা হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, নেভাল এলাকায় এক তরুণীকে বেধড়ক চড় থাপ্পড় দিচ্ছে সিমি ও তার এক সহযোগী।
ওই সময় সিমিকে বলতে শোনা যায়, ‘তুই আমাকে চিনস? আমি বললে, এখান থেকে তোকে কেউ বাঁচিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না।’
পতেঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর আমরা দুপুরে নিজ বাসা থেকে সিমিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করি। ওই ঘটনার ভিকটিম ওয়াসিকা থানায় বাদী হয়ে রাতে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা দায়ের করেন।
সেই মামলার একমাত্র আসামি হিসেবে সিমিকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। জানা যায়, পতেঙ্গা এলাকার বাসিন্দা তাহমিনা আক্তার সিমি ছোটকাল থেকেই ডানপিটে ছিলো। তবে ছয় বছর আগে বাবা কামাল হোসেনের মৃত্যুর পর স্থানীয় একটি কলেজের এই শিক্ষার্থী বেপরোয়া হয়ে উঠে।
এরমধ্যে গত বছরের ২৪ আগস্ট বাসায় ঢুকে এক তরুণীকে বেধড়ক মারধরের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর আলোচনায় আসেন এই তরুণী। ওই ঘটনার দায়ের করা মামলার জেরে সেসময় আটক হয়ে কারাগারে গিয়েছিলেন এই লেডি কিশোর গ্যাং নেত্রী।
পুলিশ জানায়, গ্যাং কালচার বিরোধের জের ধরে অধরা আহমেদ (২২) নামের এক তরুণীকে ২৪ আগস্ট তার বাসায় ঢুকে বেধড়ক মারধর করে কিশোরি লেডি গ্যাং লিডার সিমি গ্রুপের দল। মারধর ছাড়াও তারা ওই তরুণীর বুকের দিক থেকে জামা টেনে ছিঁড়ে ফেলে।পরে হামলাকারীরাই মারধরের ঘটনা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে। ইপিজেড থানার বন্দরটিলা কসাই গলি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
অধরা জানান, অনলাইনে পরিচয়ের পর শাখাওয়াত নামের এক কিশোরের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান এবং ওই কিশোরের অনৈতিক বিভিন্ন প্রস্তাবের প্রতিবাদ করায় লেডি গ্যাং লিডার সিমির নেতৃত্বে পাঁচ জন মিলে তার বাসায় হামলা করে।
এরমধ্যে সিমি ও শাখাওয়াত ছাড়া তানিয়া(১৭), শাওন(২২) ও আরেফিন(২২) নামে তিন জন রয়েছে। অভিযুক্ত শাখাওয়াতের বাসা আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ এলাকায়। তিনি জনৈক রফিকের সন্তান। তানিয়া পড়াশোনা করে নগরীর বন্দরটিলা সিটি করপোরেশন কলেজে। আর সিমরান সিমির বাসা নগরীর সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায়।
অধরা জানান, তার গ্রামের বাড়ি খুলনা বাগেরহাটে। ৬ বছর আগে পিতা মারা গেছেন। এক ভাই ও মাকে নিয়ে এই বাসায় ভাড়া থাকেন। পাশেই বড় বোনের বাসা। ঘটনার সময় তার ভাই গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। আর মা ছিলেন বাইরে। ওই সময় ঘরে একাই ছিলেন অধরা।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে অধরা বলেন, ঘটনার দিন শাখাওয়াত কল করে তাকে নিচে নামতে বলেন। নিচে না যাওয়ায় তারা দুই তলার ওপর উঠে আসে। এ সময় সিমি প্রথমে তাকে মারধর শুরু করে। পরে শাখাওয়াতসহ অন্যরাও হামলায় অংশ নেয়।