Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৬ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

আর কখনো নির্বাচনে অংশ নিবে না বিএনপি, সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটির সিদ্ধান্ত

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ মার্চ ২০২১, ০২:২৯ PM
আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২১, ০২:৩০ PM

bdmorning Image Preview


একের পর এক পরাজয়ের ফলে বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নাও নিতে পারে বিএনপি। দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে। যদিও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে আসন্ন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের উপনির্বাচনে ধানের শীষের কোনো প্রার্থী থাকছে না। সর্বশেষ শনিবার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের চেয়ারপারসনের চিকিৎসা, আগামীতে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি, ভবিষ্যৎ আন্দোলনে দলের নেতাকর্মীদের সক্রিয় করার বিষয়েও আলোচনা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ব্যাপারে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্যদের প্রায় সবাই একমত হয়েছেন। গত কয়েক বছরের নির্বাচনে নজিরবিহীন ভোট জালিয়াতির পর বর্তমান সরকার ও ইসি’র অধীন আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়া যায় না। কারণ, সব নির্বাচনের ফলাফলই পূর্বনির্ধারিত এবং নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাও একই থাকবে।তাই শুধু শুধু নির্বাচনে গিয়ে এই সরকার ও ইসিকে বৈধতা দেয়ার কোনো অর্থ হয় না।

জানতে চাইলে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সরকার নির্বাচনী ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছে। আমরা আপাতত সকল নির্বাচন থেকে দূরে রয়েছি।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছি আমাদের মৌলিক অধিকার এবং ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসেও এই সরকার আমাদের সকল অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এই অবৈধ সরকার এবং নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের আগের রাতেই ভোটের ফল নির্ধারণ করে দেয়। আর এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তো কোনো ফল আসছে না। আমাদের এখন একটাই দাবি- নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার এবং নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন।

সূত্র মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি অনেক আগে থেকেই জানিয়ে আসছে বিএনপি। সম্প্রতি দেশের অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকেও একই প্ল্যাটফরমে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে দলটি। এই লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন সংস্কারের প্রস্তাব উত্থাপন ছাড়াও সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার চেষ্টা চালাবে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, বর্তমান সরকার যে নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে, এটি সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোর মধ্য দিয়ে জনমনে স্পষ্ট হয়ে গেছে। ফলে পরিস্থিতির ন্যূনতম উন্নতি না হলে দেশের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলও আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে না। তাই সরকারের বাইরে থাকা ওই দলগুলোকে কাছে টানতে ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে বৃহত্তর ঐক্য গঠনের চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্তমান সরকারকে চাপে ফেলে ন্যূনতম দাবি আদায় না করতে পারলে বিদ্যমান প্রশাসনিক কাঠামোর মধ্যে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নিয়ে লাভ নেই। এ কারণেই আর নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

এর আগে স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপি’র অংশ না নেয়ার বিষয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা মনে করেছিলাম, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অন্তত সরকার একটা সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করার ব্যবস্থা করবেন, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। এসব নির্বাচনে যা হয়েছে- তা এত ফ্রাস্ট্রেটিং যে, আগামীতে অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি আমরা দলীয়ভাবে। বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলেই চরম প্রতিকূল অবস্থায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। সামপ্রতিক অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, এই নির্বাচন কমিশন কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত করার যোগ্য নয়।

সর্বশেষ ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। যদিও পরে বিএনপি’র জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে এই সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অংশ নেয়। এ ছাড়া সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনেও ধানের শীষের প্রার্থী ছিল। সামনে যেসব পৌর এবং উপজেলা নির্বাচন হবে তাতে দলীয় প্রার্থী না দেয়ার ঘোষণা এসেছিল আগেই। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ধানের শীষের প্রার্থী দেয়া হবে না বলে বিএনপি’র তরফে জানানো হয়।

সুত্র: মানবজমিন

Bootstrap Image Preview