সরকারি চাকরি পাওয়ার পর মাত্র ৭ বছরে ২’শ বিঘা জমির মালিক হয়েছেন পাবনার কাস্টমস কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম। শুধু জমি নয়, স্ত্রীর নামে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান আর কানাডায় টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছে দুদক ও রাজস্ব বোর্ড।
পাবনা কাস্টমসের উপ-কমিশনার জাহিদুল ইসলাম ২০১১ সালে বিএসএস ক্যাডার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের জাহিদুল কাস্টমস কর্মকর্তার প্রভাব খাটিয়ে শুরুতে এক ভাইকে জেলে পাঠান ও অন্য ভাইদের ভয় দেখিয়ে মায়ের সম্পত্তি লিখে নেন।
স্বজনদের অভিযোগ রাজস্ব ফাঁকি দিতে দানস্বত্ত দলিল করে জাহিদুল এবং আত্মীয়-স্বজনদের মামলা ভয় দেখিয়ে কম দামে জমি ক্রয় করে নেন তিনি। শুধু পারিবারিক জমি দখল নয়, ২০১২ থেকে ১৮ সাল পর্যন্ত পাবনার ভাঙ্গুরা, মাগুরা, মেন্দা, চৌবাড়িয়া, ভবানীপুর এবং সিরাজগঞ্জ জেলায় প্রায় ২শ বিঘা জমি কিনেন তিনি।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত জাহিদুল ইসলামের ভাতিজা হাসিনুর ইসলাম বলেন, শুধু মাত্র আমার এলাকাতেই ২শ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। তার ভাগ্নেরা গত তিন বছর আগেও খাবার খেতে পারতো না। তারা এখন কোটি টাকার গাড়িতে চলে আর কোটি টাকার বাড়িতে থাকে। তার শ্বশুর-শাশুড়ির নামেও প্রচুর জমি কিনেছেন। জাহিদুলের শ্বশুর একজন স্কুল শিক্ষক। জামাইয়ের কারণে তিনিও এখন কোটিপতি শ্বশুর।
একই বিষয়ে অভিযুক্ত জাহিদুল ইসলামের ছোট ভাই সাইদুল ইসলাম বলেন, জাহিদুল আমার বড় ভাই হয়। আমি তার ছোট ভাই। আমার নামে চারটা মিথ্যা মামলা দিয়েছে। ভাই হয়ে আমাকে জেল খাটিয়েছে। আর তার মাস্তান দিয়ে অনেকবার মেরেছে। এখনো আমাকে হুমকি দেয় আমার আপন ভাই। এর চেয়ে কষ্ট আর কী হতে পারে।
অভিযুক্ত জাহিদুল ইসলামের বড় ভাই সামছুল ইসলাম বলেন, আমি আর মেজ ভাই মিলে তাকে পড়িয়েছি। অনেক সময় আমরা দুই ভাই না খেয়ে ছিলাম তার জন্য। তার পরীক্ষার টাকার জন্য নিজেদের জন্য কখনো নতুন জামা কিনতাম না কারণ ভাইয়ের তো যে কোনো সময় টাকা লাগতে পারে। আজ সেই ভাই আমাদের নামে মামলা দেয়। অনেক সময় আমাদের গায়ে হাত তুলেছে।
অভিযুক্ত জাহিদুলের মেজ ভাই সাইদুল ইসলাম বলেন, জমির অর্ধেক মালিক জাহিদুল আর অর্ধেক আমি। আমার যা ছিল চাপ প্রয়োগ করে সবটুকু দানস্বত্ত দলিল হিসেবে লিখে নিয়েছে। সরকারি কর্মকর্তার এত টাকা কি করে আসে? স্ত্রীর নামে কোম্পানি খুলেছে। শালা কানাডা যাওয়ার পর এখান থেকে টাকা পাঠান জাহিদুল। আর তার শালা সেই টাকা দেশে পাঠায় রেমিটেন্স হিসাবে।
নাম প্রকাশ না করে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা বলেন, আমার মার কাছ থেকে ক্ষমতা প্রয়োগ করে মার্কেট লিখে নিয়েছে। আমার ব্যাংক একাউন্ট থেকেও টাকা তুলে নিয়ে গেছে।
আরেকজন বলেন, আমার জমি সামনে আর তার জমি পিছনে। কিন্তু তার জমি বাউন্ডারি করার সময় আমার জমিটুকুও জোড় করে দখল করে নিয়েছে। এছাড়া জমি বিক্রির খোঁজ পেলেই মামলার ভয় দেখিয়ে কম দামে জমি কেনেন জাহিদুল। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অংকের ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া নিজ জেলা পাবনায় কর্মক্ষেত্র হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।
তবে ইতিমধ্যে জাহিদুলের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ জমা পড়েছে দুদক ও রাজস্ব বোর্ডসহ রাজশাহী বিভাগীয় কাস্টমস দপ্তরে। এই বিষয়ে মোবাইল ফোনে অভিযুক্ত জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমি এসব বিষয়ে যুক্ত নয়। ৪৫ বিঘার মতো সম্পত্তি আছে মনে হয়! তবে কতটুকু আছে মনে নেই। আমার ২শ বিঘা জমির কথা কে বলেছে? ৭২টা দলিলে মানুষের ২শ বিঘা সম্পত্তি হতে পারে নাকি।