Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৩ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পরকীয়া প্রেমিককে নৃশংসভাবে হত্যাঃ চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন নিহতের মা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ১২:৪৯ PM
আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ১২:৪৯ PM

bdmorning Image Preview
ছবিঃ সংগৃহীত


রাজধানীর সায়েদাবাদে ৫০ বছর বয়সী কথিক প্রেমিকার হাতে যুবক খুন হওয়ার পর থেকেই বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এবার নিহত সজিব হাসানের মা সূর্য নেছা দিলেন ভিন্ন তথ্য। তার দাবি, সজিব তার কথিত স্ত্রী শাহনাজ পারভীনকে ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনে না দেওয়ায় তাকে হত্যা করা হয়েছে।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, সজিবের গ্রামের বাড়িতে জমি বিক্রি করতে চাপ দিচ্ছিল তার কথিত স্ত্রী শাহনাজ। কিন্তু সজিব সেটিতে রাজি হয়নি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শাহনাজ তাকে ছুরি দিয়ে খণ্ড-বিখণ্ড করে হত্যা করে।

সজিবের মা আরো জানান, প্রায় ১১ বছর আগে সজিব-শাহনাজ স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে নিহতের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডের তাহেরহুদা ইউনিয়নের নারায়ণকান্দি আসে। প্রথমে পরিবার মেনে নিতে না চাইলে একসময় মেনে নেয়। কিন্তু ওই নারীর নাম যে শাহনাজ, তা তারা জানতেন না। পরিবার ও এলাকাবাসী তাকে সাদিয়া ইসলাম মৌ নামে চেনে এবং ওই নামেই তিনি পরিচয় দিয়েছেন। সজিবকে হত্যার পর শাহনাজ নামটি তারা জানতে পারেন বলেও জানান সজিবের মা সূর্য নেছা।

সজিব হাসানের মা সূর্য নেছার দাবি, তার ছেলে ঢাকায় কোথায় থাকে তা কখনো জানাত না। মাঝে মাঝে বউ নিয়ে বাড়ি আসত এবং আত্মীয়দের বাড়িতে বেড়াতে যেত। ওই মেয়ে জানায়, তাদের গ্রামের বাড়ি যশোরের সোনাপুর। ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে বাসা। তারা ছয় ভাইবোন। বড় ভাই ব্যাংকে চাকরি করে। ছোট ভাইবোনরা কানাডায় থাকে।

বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সায়েদাবাদের কে এম দাস লেনের একটি ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় সজীবের খণ্ড খণ্ড মরদেহ। তখন পাশেই বেসে ছিলেন প্রেমিকা শাহনাজ। পরে, সেখান থেকেই তাকে আটক করে পুলিশ। পরে, ওয়ারী থানা-পুলিশ বাদী হয়ে প্রেমিকাকে একমাত্র আসামি করে মামলা করেছে। শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওয়ারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম।

নারায়ণকান্দি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আনিছ মিয়া গণমাধ্যমকে জানান, তাদেরকে ১০-১২ বছর ধরে স্বামী-স্ত্রী হিসেবেই জানি। এলাকায় এসে প্রতিবার সপ্তাহখানেক থাকত। হত্যাকাণ্ডের পরে নানা ধরনের চাঞ্চল্যকর তথ্য শুনতে পাচ্ছি।

এদিকে গ্রেফতারের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন শাহনাজ। প্রেমিককে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর ৫ খণ্ড করেন শাহানাজ। নিহত সজিবের সঙ্গে তার পাঁচ বছর ধরে অবৈধ সম্পর্ক চল‌ছিল।

প্রতিবেশীরা বলছেন, ৫ থেকে ৬ বছর ধরে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে সায়েদাবাদের কে এম দাস লেনের ৬তলা ভবনের চতুর্থ তলায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন ৫০ বছর বয়সী শাহনাজ ও বাসের টিকিট কাউন্টারের কর্মী ৩২ বছরের সজিব। এদিকে স্ত্রী নিখোঁজ থাকায় মঙ্গলবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) ওয়ারী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন আটককৃত শাহনাজের আসল স্বামী।

ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার ইফতেখারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, পারভিন তিন দিন ধরে নিখোঁজ জানিয়ে তার স্বামী ওয়ারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পুলিশ তাকে (পারভিন) খুঁজতে গিয়ে এই (সজিবের) মৃতদেহ পায়।

পুলিশ জানায়, সজিবের সঙ্গে পারভিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সে কারণে পারভিন তার স্বামীর বাসা থেকে তিন দিন আগে টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে সজিবের বাসায় ওঠেন। জিডি হওয়ার পর মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে পারভিনের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে সজিবের বাসায় যায় পুলিশ। সেখানে পারভিনকে পাওয়ার পাশাপাশি সজিবের লাশও মেলে।

পারভিনকে সন্দেহের কারণ জানতে চাইলে উপকমিশনার ইফতেখার বলেন, সজিবের সঙ্গে থাকতে গিয়ে পারভিন বুঝতে পারে, সজিবের অন্য মেয়েদের সঙ্গেও সম্পর্ক রয়েছে এবং সজীবের মুখ্য উদ্দেশ্য পারভিনের টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার।

পারভিনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ‍তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে ঝগড়ার সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। তিনি বলেছেন, সজিবের সঙ্গে তার প্রথমে ঝগড়া হয়, তখন সজিব তাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। পরে ধস্তাধস্তির মধ্যে ছুরি পারভিনের হাতে চলে আসে। তখন তিনি সজিবকে ছুরি মারলে সে মারা যায়। এরপর পারভিন রান্না ঘরের বটি দিয়ে সজিবের মৃতদেহ পাঁচ টুকরা করার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। পারভিনের হাতেও কেটে যাওয়ার জখম থাকার কথা জানান তিনি।

প্রাথমিক অনুসন্ধানের জানা গেছে, শাহানাজ স্বামীবাগ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা। তার দুই ছেলে ও মেয়ে র‌য়ে‌ছে। নিহত সজিবের সঙ্গে শাহনাজের চার পাঁচ বছর ধরে অবৈধ সম্পর্ক চল‌ছিল। তারা একটি বাসায় মাঝে মাঝে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হ‌তেন। বৃহস্প‌তিবারও দুজ‌ন দেখা ক‌রে শারীরিক সম্পর্ক শে‌ষে টাকা ও সোনা গহনা পাওনা নি‌য়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হন। বাগ্বিতণ্ডার একপর্যা‌য়ে স‌জিব শাহনাজ‌কে চড়-থাপ্পড় মার‌লে শাহনাজ ক্ষিপ্ত হ‌য়ে ছু‌রিকাঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থ‌লেই স‌জি‌বের মৃত্যু হয়। মৃতদেহ লুকাতে শাহানাজ মরদেহ ৫টি খণ্ড ক‌রেন।

সূত্র জানায়, গত ২ দিন আগে হত্যাকারী শাহানাজ পারভিন তার প্রকৃত স্বামীর ঘর সংসার ছেলে মেয়ে রেখে স্বর্ণালঙ্কার কাপড়চোপড় ও টাকা-পয়সা এবং লাগেজ নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে সজিব হাসানের সঙ্গে দেখা করেন। তার স্ত্রী পরিচয় দিয়ে সজিবের বাসায় অবস্থান করা শুরু করেন।

ওই নারী পুলিশের কাছে বলেছেন, এমন পরিস্থিতিতে সজিব হাসান তার টাকাপয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে বিক্রি করতে চাইলে কথা-কাটাকাটি হয়। এরই জেরেই সজিব হাসান তাকে ছুরি দিয়ে হত্যা করতে চাইলে ওই ছুরি কেড়ে নিয়ে উল্টো সজিব হাসানের বুকের নিচে আঘাত করেন। হত্যাকারী শাহনাজ পারভিন প্রেমিক সজিবের তুলনায় শারীরিক গঠনে খুবই ভালো। হত্যা শেষে ছুরি দিয়ে সজিবের দু’হাত, দু’পা বিছিন্ন করে হত্যা করা হয়। এ কাজে ব্যবহৃত ছুরি ও শিল উদ্ধার করেছে পুলিশ।

Bootstrap Image Preview