রাজশাহীর উপকণ্ঠ কাটাখালীর যুবক মো. ডলার। পেশায় রাজশাহী সুগার মিলের পাম্প চালক তিনি। অবসর সময়ের অধিকাংশই কাটে ইউটিউব ও ফেসবুকের ভিডিও দেখে। সে থেকেই মাথায় চিন্তা আসে চাকরির পাশাপাশি ব্যতিক্রমী কিছু করার। শখের বসে একবার নগরীর উপশহর আবাসিক এলাকার পান বিক্রেতা চঞ্চলের কাছে থেকে খেয়েছিলেন স্পেশাল ‘আগুন পান’। তারপর থেকেই সিদ্ধান্ত নেন চাকরির পাশাপাশি তিনিও হরেক রকমের বাহারি পান বিক্রি করবেন।
নগরীর কাটাখালীর রাজতিলক সিনেমা হলের পাশেই তার দোকান। নাম নিউ রুবাইয়া ভ্যারাইটি স্টোর। দু’বছর ধরে ভালোই জমিয়েছেন তিনি। কিন্তু করোনাকালে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় ব্যবসা আগের তুলনায় একটু কম হচ্ছে। তবে খাবার হোটেলের পাশে পানের দোকান হওয়ায় মোটামুটি চালিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসা। তারপরও দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ কিছু মানুষ আসেন তার রসালো সুস্বাদু স্পেশাল পান খেতে। বিশেষ করে স্পেশাল ‘আগুন পান’ খেতে।
নানা ধরনের ব্যবসা থাকার পরও পান ব্যবসায় আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, সর্বপ্রথম ফেসবুকে ইন্ডিয়ার ‘আগুন পান’ এর একটি ভিডিও দেখেন। দূর-দূরান্ত থেকে ওই পান দোকানির পান খেতে লোকে পাড়ি জমায়। ব্যবসা করে কপালও খুলেছে সেই ভারতীয় পান দোকানির। সেই ভিডিওটি তার মনে গাঁথে।
কিন্তু কালক্রমে নিজ শহরে একদিন চঞ্চলের কাছে পেয়ে যান ‘আগুন পান’। পরবর্তীতে চঞ্চল নামের ওই যুবকের কাছে শিখতে চান পান বানানোর রহস্য। প্রথমে না শেখাতে চাইলেও পরবর্তীতে ডলারের নাছোড়বান্দা হয়ে লেগে থাকায় তাকে শেখান ‘আগুন পান’-এর রহস্য। তবে শর্তজুড়ে দেন চঞ্চল- ‘কাউকে না শেখানোর’।
চঞ্চলকে গুরু মেনে শুরু করেন পানের ব্যবসা। চাকরির ডিউটির সময় শেষে পরের সময়গুলো কাজে লাগান পানের দোকানে। এখন জমিয়ে ফেলেছেন স্পেশাল ‘আগুন পান’ এর জমজমাট ব্যবসা।
চঞ্চল জানান, কিছুদিন আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে স্পেশাল ‘আগুন পান’ খেতে এসেছিলেন এক এসপির কন্যা। রোমাঞ্চকর ও রসালো সুস্বাদু এই পান খাওয়ার পর ক্রেতা দিয়েছেন অতিরিক্ত বখশিস।
৬০ রকমের বাহারি দেশি-বিদেশি মসলার সমন্বয়ে তৈরি হয় স্পেশাল ‘আগুন পান’। চেরি, কিসমিস, সুইট বল, কাজু বাদাম, মোরব্বা, ইন্ডিয়ান হীরা-পান্না, ইন্ডিয়ান রয়েল মিক্সড, ইন্ডিয়ান শাহী মসলা, ইন্ডিয়ান পাস-পাস, পান বিলাস, গোলাপ চাটনি, পাকিস্তানি শাহী মোয়া, স্পেশাল সুগন্ধি, তবক পেপার ও বিদেশি স্পেশাল জেলির মতন কিছু ব্যতিক্রম ধরনের উপাদানও থাকে এ পানের মধ্যে।
এছাড়াও এতে থাকে- ধনিয়া, মহুরি, যাওন, কালোজিরা, দারুচিনি, নারিকেল বাহারি মিষ্টি জর্দ্দার মতোন নানান পদের মসলা। সব মসলা দেয়ার পর তবক পেপার ও তার ওপর একটি স্পেশাল পানের জেল মিশিয়ে নেন। সেখানে আগুন দিলেই জ্বলতে থাকে পান। জ্বলন্ত আগুন পানটি হাতে নিয়ে গ্রাহককে বড় করে মুখ হা করতে বলেন, পরে পুরে দেন মুখের ভেতর। মুখ বন্ধ করলেই আগুনও নিভে যায়। তারপর মিলে এক অসাধারণ সুঘ্রাণ সমৃদ্ধ রসালো পানের আমেজ।
এই স্পেশাল ‘আগুন পান’ এর মূল্য মাত্র ৪০ টাকা। মাসে প্রায় দুই থেকে তিনশত আগুন পান বিক্রি হয় তার। প্রতিদিন সব ধরনের পান মিলিয়ে বিক্রি হয় প্রায় ২-৩ হাজার টাকা। প্রতিদিন লাভ হয় প্রায় ৮০০ থেকে হাজার খানেক টাকা। তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) চলাকালীন প্রতিদিন ৫-৬ হাজার টাকার পানই বিক্রি হতো তার। লাভও থাকতো ২-৩ গুণ।
ডলারের কাছে খুব বেশি পানের ধরন নেই। বর্তমানে স্পেশাল ‘আগুন পান’ এর পাশাপাশি রয়েছে- মিষ্টি পান, মসলা পান ও সাধারণ পান। তবে তিনি জানিয়েছেন, খুব অচিরেই নিয়ে আসবেন- বম্বে শাহী পান, বউ সোহাগী পান, ভালোবাসার পান, হাসা-হাসি পান।
ওই পানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ‘ধোঁয়া পান’। এই ধোঁয়া পানের বিশেষত্বের বিষয়ে তিনি জানান, এই পান যতই চাবাবেন ততই ধোঁয়া বের হবে। কারণ এতে দেয়া থাকবে একটা স্পেশাল কেমিক্যাল জাতীয় মসলা। তবে তিনি জানান, এ ধোঁয়া পানের কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।
ডলার জানান, করোনার সময় অনেক স্পেশাল মসলা শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই নানা ধরনের প্রয়োজনীয় মসলা তিনি আনতে পারছেন না ইন্ডিয়া ও পাকিস্তান থেকে।
এক কন্যার জনক ডলার। চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করে ভালোই সচ্ছলভাবে যাচ্ছে তার জীবন। এ পান ব্যবসা করেই তার দোকানের পাশেই ছোট ভাইকে গার্মেন্টেসের দোকান করে দিয়েছেন তিনি। বাবা-মা পরিবারসহ ভালোভাবেই চালিয়ে নিচ্ছেন সংসার। তার আশা শুধু রাজশাহীই নয়, পুরো বাংলাদেশে পান নিয়ে হইচই ফেলবেন তিনি।