মাছ বিক্রি করাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মাছের মেলা। তবে এটা কেবল শুধু মেলাই নয় বরং তার চেয়েও বেশি কিছু। নামে মাছের মেলা হলেও কী নেই এতে। বড় বড় আর লোভনীয় মাছের বিশাল সংগ্রহ, সংসারের যাবতীয় প্রয়োজনীয় উপকরণ, বিনোদনের জন্য সার্কাস, নাগরদোলা, পালাগান ইত্যাদি।
অর্থনৈতিকভাবেও এই মেলার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতি বছর এ মেলায় কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। লেনদেনের বড় অংশ উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত হওয়ায় এর গুরুত্ব আরও অনেক বেশি। প্রতি বছরের শীতের শেষে অনুষ্ঠিত হয় বগুড়ার পোড়াদহের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। গাবতলি উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের পোড়াদহ বটতলা (গোলাবাড়ী) এলাকায় এ মেলার আয়োজন করা হয়।
প্রতি বঙ্গাব্দের মাঘ মাসের শেষ তিনদিনের মধ্যে আগত বুধবার অথবা ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার এ মেলা শুরু হয়। মেলার দিন বুধবারের পরদিন বৃহস্পতিবার বসে ‘বৌ’ মেলা। এদিন গ্রামের নববধূরাসহ গ্রামের মেয়েরা স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। বধূরা তাদের স্বামীকে নিয়ে মেলায় ঘুরতে আসেন।
গেলো বুধবার পোড়াদহ মেলায় গিয়ে দেখা গেছে, নানা প্রজাতির বড় বড় মাছ মেলায় উঠেছে। বিশেষ করে নদীর বড় বড় বাঘাইর, আইড়, বোয়াল, কাতলা, পাঙ্গাস, সামুদ্রিক টুনা, ম্যাকরেলসহ আরও অনেক প্রজাতির মাছ। মাছের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত মেলায় সবচাইতে বড় মাছ ৬৫ কেজি ওজনের একটি বাঘাইর মাছ। মাছটির দাম চাওয়া হচ্ছে ১ লাখ টাকা।
এছাড়াও মেলায় উঠেছে কাঠের আসবাবপত্র, বাঁশ ও বেতের সামগ্রী, লৌহজাত দ্রব্যাদি, ফলমূল, নানা ধরনের মিষ্টি। বিনোদনের জন্য রয়েছে সার্কাস, নাগরদোলা ও পালাগানের আয়োজন।
মেলায় ঘুরতে আসা আলম হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এবারের মেলায় গতবারের তুলনায় বড় মাছ উঠেনি। পোড়াদহ মেলা বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। বন্ধুদের সঙ্গে এসেছি, সামর্থ্য অনুযায়ী মাছ নিয়েই বাড়ি ফিরবো।
মেলায় মাছের দরদাম করছেন বেলাল। কয়েকটা মাছের দোকান ঘুরেও তার মাছ কেনা হচ্ছে না। কোনোটা দামে আবার কোনোটা মনে মিলছে না। বেলাল বলেন, মেলায় মাছ কিনবো বলে মাস দুয়েক আগেই কিছু টাকা রেখেছি। দেখছি, পছন্দ হলেই কিনে নিব। ওদিকে বাড়িতে সবাই অপেক্ষা করছে।
স্থানীয়রা ও মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, অনেক মাছচাষি কেবল মেলায় অধিক লাভে বড় মাছ বিক্রয়ের জন্য মাছ বড় করেন। মেলায় বিক্রয়ের জন্য বেশ আগে থেকেই নদী থেকে বাঘাইর, আইড় ইত্যাদি মাছ ধরে পুকুরে বা জলাশয়ে বেঁধে রাখা হয়। মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের গ্রামগঞ্জের সবাই তাদের জামাই-ঝি’কে নিমন্ত্রণ করেন ও বড় আকৃতির মাছ দ্বারা আপ্যায়ন করেন।