Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

সমালোচনায় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ১০:১১ AM
আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ১০:১১ AM

bdmorning Image Preview
ছবি: সংগৃহীত


রাজধানীর জাতীয় চিড়িয়াখানায় অজগর সাপের খাঁচার গ্রিল ধরে অসহায়ভাবে চেয়ে আছে একটি খরগোশ। তার পাশ দিয়ে ঘোরাফেরা করছে একাধিক অজগর সাপ। সম্প্রতি এমন ছবি ও ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় শুরু হয় বাকবিতণ্ড।

শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যাওয়া কোনো এক দর্শনার্থী এমন একটি ছবি তুলে ফেসবুকে প্রকাশ করেন।

অজগরের খাঁচায় থাকা খরগোশটি ক্ষুধার্থ দাবি করে বাইরে থেকে খাবারও দিতে দেখা যায় দর্শনার্থীদের। খবর পেয়ে পরদিন চিড়িয়াখানায় যায় বাংলাদেশ র‌্যাবিট গ্রুপ নামে একটি খরগোশপ্রেমী সংগঠনের কয়েকজন সদস্য। তারাও গিয়ে খরগোশটিকে দেখতে পায় এবং সেটিকে মুক্ত করে দেওয়ার দাবি তুলে। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডাও হয় উভয়পক্ষের মধ্যে।

খরগোশপ্রেমী সংগঠনটির নেতারা বলছেন, আধুনিক যুগে এসে জীবিত একটি প্রাণীকে এভাবে প্রকাশ্যে হিংস্র প্রাণীর খাঁচায় ফেলে রাখা হত্যার চেয়ে বেশি অমানবিক। তা ছাড়া অজগরের খাদ্য হিসেবে দেওয়া ছোট প্রাণীটিকে অজগরের খাবারে পরিণত হওয়া পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না খাবার কিংবা চিকিৎসা, যাকে মধ্যযুগীয় বর্বরতা বলছে বাংলাদেশ র‌্যাবিট গ্রুপ। এতে দর্শনার্থীদের মনেও হিংস্রতার বিজ বপন হচ্ছে বলেও মনে করছে তারা।

খরগোশপ্রেমীদের দাবি, যেকোনো মাংসাশী প্রাণীকে খরগোশসহ অন্য যে কোনো প্রাণী খেতে দিতে হলে তা সহজভাবে হত্যা করে তারপর খাওয়াতে হবে। একই সঙ্গে খাবার হিসেবে সরবরাহের পূর্ব পর্যন্ত ওই প্রাণীকে খাদ্য, চিকিৎসাসহ তার প্রাপ্য সব অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

তবে এভাবে জীবিত প্রাণী খেতে দেওয়া অমানবিক বলে স্বীকার করলেও চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছে মাংসাশী প্রাণীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থেই জীবিত খরগোশ দিতে হচ্ছে তাদের।

জাতীয় চিড়িয়াখানার প্রাণী চিকিৎসক (জ্যু ভেটেরিনারিয়ান) ডা. নাজমুল হুদা বলেন, মাংসাশী প্রাণীরা বন্যপরিবেশে নিজে শিকার ধরে খেয়ে অভ্যস্ত। চিড়িয়াখানার পরিবেশে অধিকাংশ সময় আমরা তাদের জবাই করা গবাদিপশুর মাংস দিচ্ছি, যা তাকে অলস করে দিচ্ছে। ফলে পরিশ্রম কমে যাওয়ায় এসব প্রাণী দ্রুত অসুস্থ হয়ে যায়। যার কারণে সপ্তাহে দু-একদিন জীবিত প্রাণী দেওয়া হয় যেন কিছুটা হলেও নিজস্ব পরিবেশ পায় এবং একটিভ থাকে।

বিশ্বের অধিকাংশ চিড়িয়াখানায় এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় বলে জানিয়ে, শিকার ধরে খেলে মাংসাশী প্রাণীর প্রজনন ক্ষমতাও বাড়ে বলেও দাবি এ প্রাণী চিকিৎসকের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাপ বিশেষজ্ঞ ইউএসএর আশেকো ফেলো আবু সাইদ জানান, বন্যপ্রাণীরা শিকার ধরে খেয়ে অভ্যস্ত হলেও চিড়িয়াখানার এ পদ্ধতি সত্যিই অমানবিক। বিশেষ করে মানুষের সামনে প্রদর্শন হওয়ায় মানসিক চাপ তৈরি করার শঙ্কা বেশি। এ জন্য বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন।

পুরো চিড়িয়াখানা প্রথাই সব প্রাণীর জন্য অমানবিক বলে মন্তব্য করে দ্রুত ঢাকা চিড়িয়াখানাকে সাফারি বা ওপেন জ্যু পদ্ধতিতে যাওয়ার পাশাপাশি সাময়িক সমস্যা সমাধানে কিছু পরামর্শও তুলে ধরেন এ বন্যপ্রাণী গবেষক।

তার মতে, প্রশিক্ষিত কর্মী দিয়ে খাদ্যে পরিণত হওয়া প্রাণীটিকে হত্যা করে তাজা খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তবে এ জন্য প্রথমে চিড়িয়াখানার কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তারপর ওইসব মাংসাশী প্রাণীকেও অভ্যস্ত করাতে হবে। এ পদ্ধতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন বলে জানিয়ে, আপাতত সাপের মতো নিশাচর প্রাণীদের রাতে খাবার দিয়ে দর্শনার্থী প্রবেশের আগেই তুলে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. আব্দুল লতিফ সময় সংবাদকে বলেন, সাপ শীতকালে কম খায় এবং জুবুথবু হয়ে পড়ে থাকে। গরমের দিনে খাবার দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেয়ে ফেলে। যার কারণে দর্শনার্থীদের দৃষ্টিতে আসে না। কিন্তু শীতকাল হওয়ায় সাপ খরগোশটিকে খায়নি বলেই এ আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

সমালোচনা শুরুর পর থেকে আশপাশের বিভিন্ন দেশের চিড়িয়াখানার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে দাবি করে তিনি জানান, ভারতসহ অধিকাংশ প্রতিবেশী দেশের চিড়িয়াখানা একই পদ্ধতি গ্রহণ করছে। তবে যেই দাবি উঠেছে সেটাকে একদমই অযৌক্তিক বলা যায় না। আমরা বিষয়টি ভাবছি।

গবেষকদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত একটা সমাধান বের করা সম্ভব হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন চিড়িয়াখানার শীর্ষ এ কর্মকর্তা।

২০১৯ সালে জুন মাসে অল্প বয়সী একটি সিংহের অসুস্থ হয়ে পড়াকে কেন্দ্র করে প্রাণীদের যথাযথ খাবার না দেওয়ারও অভিযোগ উঠে চিড়িয়াখানার বিরুদ্ধে। সেই সময়ও সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। চিড়িয়াখানা বন্ধের দাবিতে নানা কর্মসূচিও পালন করে প্রাণীপ্রেমিরা।

Bootstrap Image Preview