Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

গাড়ল পালন করে নিজের ভাগ্য বদলালেন মাস্টার্স পাশ যুবক

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ০৭:৩৬ PM
আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ০৭:৩৬ PM

bdmorning Image Preview
ছবিঃ সংগৃহীত


দেশে যত কর্মক্ষম শিক্ষিত যুবক বেকার আছেন এত সংখ্যক চাকুরী অথবা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। একটি পদের চাকুরীতে মেধার জন্য লড়তে কয়েক হাজার বেকারদের সাথে। ফলে চাকুরী পাওয়া এখন সোনার হরিণের মত। এটা বুঝতে পেরেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল বিষয়ে মাষ্টার্স শেষ করে বাড়িতে এসে মাঠে গাড়লের খামার করেছেন। যেখান থেকে তিনি লাভবান হয়ে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌর শহরের আড়পাড়া গ্রামের মোস্তাক আহম্মেদ লাভলু পার্শ্ববর্তী ইশ্বরবা গ্রামের বিলের ধারে নিজেদের জমিতে এ খামার গড়ে তুলেছেন। তার দাবি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বানিজ্যিকভাবে গাড়ল পালন করা হলেও এ উপজেলাতে তিনিই প্রথম। সফলতা ও কম খরচে বেশি লাভবান হওয়া যায় বুঝতে পেরে অনেকেই তার খামার থেকে বাচ্চা কিনে ঘরোয়াভাবে শুরু করছেন।

তিনি বলেন, গাড়ল পালনই হতে পারে বেকার যুবকদের স্বকর্মসংস্থান তৈরীর একটি উত্তম পথ।

সরেজমিনে ইশ্বরবা গ্রামের বিলে গেলে দূর থেকে নজরে আসে বিলের ধারে একটি সেট। নিকটে গিয়ে দেখা যায় সেখানে পালন করা হচ্ছে গাড়ল। তবে উন্মুক্ত পরিবেশে। ছোট বড় গাড়লগুলো ফাঁকা মাঠে চরে বেড়াচ্ছে। গাড়লের ছোট ছোট বাচ্চাগুলো তাদের মায়ের পিছু পিছু ঘুরছে। মাঝেমধ্যে মা গাড়লগুলো বাচ্চাদেরকে দুধ খাইয়ে দিচ্ছে। আবার আপন গতিতে চলছে ঘাস লতাপাতা খেতে। আর দূর থেকে দেখভালে রাখা রাখাল নজরদারিতে রাখছেন।

এ সময় কথা হয়, খামারের মালিক মোস্তাক আহম্মেদ লাভলুর সাথে। তিনি জানান, নিজে ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে চাকুরী খুঁজেছেন। কিন্তু তা ভাগ্যে জোটেনি। তাই নিজের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গাড়ল পালন করছেন। ভেড়ার সাথে গাড়লের অনেকটা সাদৃশ্য রয়েছে। কিন্তু গাড়লের লেজ ভেড়ার চেয়ে অনেক লম্বা। আকারেও বেশ বড় হয়। গাড়ল বা ভেড়ার মাংস খাওয়া বিশ্বের অনেক দেশে একটি নিত্যদিনের অভ্যাস। কিন্তু আমাদের দেশে তেমনটা নয়। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেকার যুবকেরা গাড়ল পালন করে লাভবান হচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, গণমাধমের মাধ্যমে দেখে উৎসাহিত হয়ে ইশ্বরবা বিলের ধারে নিজেদের বেশ কিছু জমিতে প্রথমে একটি টিনের সেটের ঘর তৈরী করেন। এরপর প্রায় ১ বছর আগে অন্য জেলা থেকে বাচ্চা ছোট বড় মিলে মোট ৬০ টি গাড়ল প্রায় ৫ লাখ টাকায় কিনে পালন শুরু করেন। এরমধ্যে অনেকগুলো ছিল গর্ভধারন অবস্থায়। এগুলো কিছুদিন পর বাচ্চা দেওয়া শুরু করে। এখন সে বাচ্চাগুলো বেশ বড় হয়ে গেছে। সুস্থ সবল গাড়লে বছরে ২ বার বাচ্চা দেয়। সাধারনত একটি থেকে তিনটি পর্যন্ত বাচ্চা দেয়। তবে একের অধিক বাচ্চা দিলে সে বাচ্চা অপেক্ষাকৃত দুর্বল হয়ে যায়। বেড়ে উঠতে অনেক সময় লেগে যায়। তবে একটি বাচ্চা হলেই ভালো। এ বাচ্চা গুলো খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে। কিছু দুর্বল বাচ্চা দেখে প্রতিটি ৬ হাজার সাড়ে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। সুস্থ সবল বাচ্চাগুলো বিক্রি না করে খামার বাড়াতে রেখে পালন করছেন।

শিক্ষিত আত্মপ্রত্যাশী এই যুবক জানান, গাড়ল পালন আমাদের এ এলাকায় হয় না। আমিই প্রথম পালন শুরু করেছি। তৃণভোজী গৃহপালিত পশু গারল। এর মাংশ খুব সুস্বাদু ও দামী। তাড়াতাড়ি মাংশ বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, সুস্থ সবল ও উন্নত জাতের গাড়লে ৬০ থেকে ৭০ কেজি পর্যন্ত মাংশ হয়। প্রতি কেজি মাংশ সাতশো থেকে সাড়ে সাতশো টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। ফলে খামারে অনেক লাভ হবে এমন আশা করছি। ইতোমধ্যে অনেকে এখান থেকে বাচ্চা নিয়ে ঘরোয়া পরিবেশে পালন শুরু করেছেন। অনেকে বাচ্চা চাচ্ছেন ফলে বোঝায় যাচ্ছ এ এলাকায় গাড়ল পালন ক্রমেই বাড়বে। খামারে গাড়লগুলোর পরিচর্যার জন্য সারাবছরের জন্য একজন শ্রমিক রেখেছি। যিনি সার্বক্ষনিক নজরদারিতে রেখে থাকেন। প্রথম দিকে বিশেষ প্রযুক্তিতে সৌদি জাতের অজোয়া খেঁজুরের চারা বাড়িতে উৎপাদন করেছি। যা জমিতে লাগিয়েছেন। এ বছর বেশ কিছু গাছে খেঁজুরও ধরেছিল। কিন্তু ছোট গাছ বলে ফল ভেঙে দিয়েছেন। আশা করছি আগামীতে খেঁজুরের সফলতাও ঘরে আসবে।

কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডঃ আতিকুজ্জামান জানান, স্বাদ ও পুষ্টিগুণে দেশের গৃহপালিত সকল পশুর মধ্যে গাড়লের মাংশের জুড়ি নেই। এর মাংসে মানব শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল অপেক্ষাকৃত কম। তাই বাজারে চাহিদা বেশি হওয়ায় দামও বেশি। গাড়লের দুধ ও মাংস দেশের আমিষের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখছে। তৃণভোজী হওয়ায় গাড়ল পালন অনেক সহজ ও কম ব্যয় সম্পন্ন। বর্তমানে বেকারদের স্বকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় অনেকেই বাণিজ্যিক ভাবে গাড়লের খামার গড়ে তুলে সফল হয়েছেন। এ এলাকায় প্রথম মোস্তাক আহম্মেদ লাভলু শুরু করেছেন। তিনি সাধ্যমত মত পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করে যাচ্ছেন।

এই প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বলেন, গাড়ল পালনে লাভবান হতে হলে অবশ্যই উচ্চ ফলনশীল জাতের হতে হবে। প্রথমে পালন শুরু করলে ৭- মাস থেকে এক বছর বয়সী সুস্থ গাড়ল হলে ভালো হয়। সে দিক দিয়ে কালীগঞ্জের শিক্ষিত যুবক লাভলুই প্রথম থেকেই খেয়াল রেখে লাভবান হচ্ছেন।

ডঃ আতিকুজ্জামান আরও জানান, বছরে চারবার কৃমিনাশক বড়ি আর দুবার পিপিআর টিকা প্রদান করলে খামার সব সময় রোগ মুক্ত থাকে যেটা লাভলুর গাড়ল গুলোকে দিয়ে সহযোগীতা করছেন। এরা যে কোন পরিবেশে জীবন যাপন করতে পারে, রোগ ব্যাধি খুবই কম। ঘাস, লতাপাতা, খড় ও ভুসি খেয়ে গাড়ল দীর্ঘদিন বাঁচতে পারে। পুরুষ বা পাঠা গাড়লের যৌন শক্তি ঠিক রাখতে মাঝে মধ্যে ছোলাসহ বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। ঘর সব সময় শুষ্ক ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না রাখলেই আসতে পারে রোগবালাই।

Bootstrap Image Preview