Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

চার বছরের সন্তানকে কোলে নিয়ে স্ত্রীর স্বীকৃতি চান তরুণী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারী ২০২১, ১০:৩৬ AM
আপডেট: ২৭ জানুয়ারী ২০২১, ১০:৩৬ AM

bdmorning Image Preview
ছবিঃ সংগৃহীত


চার বছরের একটি অবুঝ শিশু। কিন্তু তার বাবার পরিচয় পেতে নির্ঘুম রাত পার করছেন এক তরুণী। কে তার বাবা? এমন প্রশ্নবানে জর্জরিত ওই তরুণী চান তার স্বামীর পরিচয় আর শিশু চায় তার বাবার। এ নিয়ে চলছে মামলা। ভুক্তভোগী তরুণীর দাবি, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হয়ে তিনি পান স্বামীকে এবং শিশুটি পাক বাবার পরিচয়।

ভুক্তভোগী নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বাসিন্দা। চন্দন কুমার হিরো নামে ওই যুবক একই উপজেলার আধাইপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীকোলা গ্রামের পরিতোষ চন্দ্র মণ্ডলের ছেলে।

জানা গেছে, ২০১৬ সালে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই তাকে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করত চন্দন। এক সময় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর তা গড়ায় শারীরিক সম্পর্কে। বিয়ের প্রলোভনে একাধিকবার তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়। এক পর্যায়ে ওই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয় পড়ে। মেয়েটি বারবার হিরোকে বিয়ের জন্য বললেও সে কোনো কর্ণপাত করেনি।

২০১৬ সালে ১২ এপ্রিল স্থানীয়ভাবে চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গ্রামের মাতব্বররা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। কিন্তু হিরো বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। সালিসে তার বাবা পরিতোষ চন্দ্র মণ্ডল উপস্থিত ছিলেন এবং মেয়েটিকে পুত্রবধূর স্বীকৃতি দেবেন বলে অঙ্গীকার করে বাড়িতে নিয়ে যান। এরপর থেকে তার ওপর অমানবিক নির্যাতন শুরু হয়। পুলিশের সহযোগিতায় ১২ দিন পর মেয়েকে উদ্ধার করেন বাবা-মা। পরে চন্দন কুমার হিরোর বিরুদ্ধে মামলা করেন মেয়ের বাবা।

এক সময় দূরত্ব বাড়তে থাকে। মেয়েটি যখন চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখন বিষয়টি তার পরিবারকে জানায়। এরপরই হিরো বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। মামলায় পুলিশ তাকে আটক করে জেলহাজতে পাঠায়। প্রায় তিনমাস কারাভোগ করে হিরো। আদালতে সেই মামলা এখনও চলমান। এদিকে ওই কিশোরী এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেয়। বর্তমানে ছেলের বয়স চার বছর। কিশোরী থেকে মেয়েটি এখন তরুণী। শিশুটি তার পিতৃপরিচয় ও মেয়েটি স্ত্রীর অধিকার পাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছে। দ্রুত মামলাটি নিষ্পত্তি করে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হোক এমন প্রত্যাশা মা-ছেলের।

ভুক্তভোগীর পরিবার জানায়, হিরো তাদের মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে সর্বনাশ করেছে। যে শিশুটির জন্ম হয়েছে তার পিতৃপরিচয় প্রয়োজন। কয়েকদিন পর জন্ম নিবন্ধনে বাবার নাম দিতে হবে। তাদের মেয়ের স্বামী এবং শিশুটিকে তার বাবার অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হোক।

গ্রামের মাতব্বর আব্দুর রশিদ বলেন, মেয়ের পরিবারটি অসহায়। আর ছেলের পরিবার সচ্ছল। প্রায় চার বছর আগে সালিসে ছেলের বাবা মেয়েকে পুত্রবধূর স্বীকৃতি দেবেন বলে বাড়িতে নিয়ে যান। কিন্তু তার ওপর চলে অমানবিক নির্যাতন। যে শিশুটি জন্ম নিয়েছে বর্তমান সমাজে তার একটা পরিচয় দরকার।

ওই তরুণীর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি স্বীকার করে চন্দন কুমার হিরো বলেন, ওই বাচ্চার বাবা আমি না। তার সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও কোনো ধরনের শারীরিক সম্পর্ক হয়নি। যদি তারা প্রমাণ করতে পারে ওই ছেলে আমার সন্তান তাহলে বাবার স্বীকৃতি দেব।

ছেলের বাবা পরিতোষ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, আমাদের ফাঁসানোর জন্য মেয়েটিকে আমার ছেলের পেছনে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। সালিসে জোর করে মেয়েটিকে আমার বাড়িতে উঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। ওই সময় ছেলে বাড়ি ছিল না। আর মেয়েকে নির্যাতনও করা হয়নি।

নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আদালতে ঝুলে থাকা মামলাটি দ্রুত শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

Bootstrap Image Preview