Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

দেশে অনুমোদনের অপেক্ষায় ৩৫০সিসি বাইক

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারী ২০২১, ১১:৩২ PM
আপডেট: ১৫ জানুয়ারী ২০২১, ১১:৩২ PM

bdmorning Image Preview


অবশেষে মোটরসাইকেল এর মার্কেট ডিমান্ড এর কারণে সিসি লিমিটেশন কিছু বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর সেটা সম্ভবত ৩৫০সিসি, যা অনেক দিন থেকেই বাংলাদেশের বাইকাররা এবং বাইক কোম্পানি গুলোর একটি অপেক্ষায় ছিল। মোটরসাইকেলপ্রেমীদের জন্য বিশেষ ভাবে বাংলাদেশের বাইকার এবং মোটরসাইকেল প্রেমীদের জন্য এটি অনেক দিনের স্বপ্ন বলা যায়। কারণ অনেক দিন থেকে উচ্চ সিসির বাইকের প্রতি বাংলাদেশের বাইকারদের একটা আকর্ষণ রয়েছে।

যদি উচ্চসিসির পারমিশন চলেই আসে তবে মার্কেটে কোম্পানি গুলোর জন্য একটি নতুন দ্বার উন্মুক্ত হবে। উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবেন সেই সাথে বিনিয়োগ বাড়বে। লোকাল বিনিয়োগ বাড়ার সাথে সাথে বাইরে থেকে মানে বিদেশী বিনিয়োগ অনেকাংশে বাড়ে যাবে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে অনেক বড় বড় কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসবে।

হেড অফ ইম্পোর্ট এবং ইন্টারনাল ট্রেড (আইআইটি) উইংস অফ কমার্স মিনিস্ট্রি এর অতিরিক্ত সচিব, এএইচএম শফিকুজ্জামান জানিয়েছেন, তাদের অফিস সিসি লিমিটেশন বাড়ানোর জন্য একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে। কিভাবে আমদানী করা হবে উচ্চ সিসির টু হুইলার এবং ইঞ্জিন নিয়ে আসা হবে সেই খসড়া নির্ধারনের জন্য এই উপলক্ষ্যে একটি মিটিং ডাকা হয়েছে।

২০০০ সাল পর্যন্ত কোন ধরনের ইঞ্জিন ক্যাপাসিটির রেস্ট্রিকশন বাংলাদেশে ছিল না। কিন্তু পরবর্তিতে সরকার সিসি লিমিটেশন ১৫০সিসি পর্যন্ত করে দেয়। এর কারণ হচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা প্রশাসন অপরাধীদের ধরতে পারত না, এছাড়া অনেক আইন ভঙ্গকারীরা ধরা ছোয়ার বাইরে চলে যেত। Bengals Motorcycle Club এর প্রেসিডেন্ট সালেক শাহরিয়ার বলেন, অন্যান্য দেশ গুলোতে লো ক্যাপাসিটির বাইক গুলোকে হাইওয়েতে চলতে দেয়া হয় না, সেফটি নিশ্চিত করতে। কিন্তু বাংলাদেশে ঠিক এর উল্টোটি ঘটে থাকে।

“যারা মোটরসাইকেল রাইড করে থাকেন তারা এই বিষয়টি জেনে থাকবেন যে, উচ্চ সিসির মোটরসাইকেল গুলো শুধু গতি এর জন্য জনপ্রিয় নয়। তার সাথে রয়েছে কন্ট্রোলিং এবং সেফটি।” তিনি আরও বলেন, যে বাংলাদেশে এখন এক্সপ্রেস ওয়ে রয়েছে তাই সেখানে লো ক্যাপাসিটির বাইক নিয়ে চলাটা একটু রিস্ক হয়ে যায়।

এছাড়া উচ্চ সিসির বাইকের ক্ষেত্রে বাইকটি দ্রুত গতি কমিয়ে আনা যায় এবং থামানো যায়। আর এই বাইক গুলোতে আধুনিক প্রযুক্তির সাথে ব্রেকিং সিস্টেম যুক্ত করা থাকে সেফটি নিশ্চিত করতে।

এর সাথে মিস্টার সালেক, তিনি একটি মোটরসাইকেল কোম্পানির মার্কেটিং হেড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তিনি আরও বলেছেন যে, আপনি এই রিজিওন এর যেকোন দেশের দিকে তাকান। তাহলে দেখতে পারবেন যারা আমাদের থেকে ইকোনমিক এবং ইনফ্রাস্টাকচার এর ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। তারাও তাদের পছন্দ ও ক্যাপাসিটি অনুযায়ী বাইক ক্রয় করে থাকেন। আরও যুক্ত করেছেন যে, শ্রীলংকায় ২৫০সিসি মোটরসাইকেল রয়েছে, এছাড়া ভারত, পাকিস্তান, এবং নেপালেও কোন ধরনের সিসি লিমিট নেই। সেসব দেশে সড়ক দূর্ঘটনা আমাদের দেশের থেকে অনেক কম। কারণ এখানে রাইডারের শিক্ষা ও সচেতনতা অনেকটাই জরুরী।

বাংলাদেশে মোটরসাইকেল তৈরির পথিকৃৎ ধরা হয় রানার অটোমোবাইলস লিমিটেডকে। তারা তিন বছর আগে নেপালে তাদের মোটরসাইকেল রপ্তানী শুরু করে। বাংলাদেশের সরকারের নীতি অনুযায়ী তারা ৫০০সিসি পর্যন্ত বাইক তৈরি করতে পারবে রপ্তানী করার জন্য। যেহেতু সিসি লিমিটেশন রয়েছে তাই তারা রপ্তানী করার জন্য ২০০সিসি মোটরসাইক গুলো টেস্ট করতে পারছে না।

রানারের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান বলেছেন, আমরা বাইকের সমস্যা গুলো এখানে ধরতে পারি না। যখন রপ্তানি করা হয় তখন ওখানে সমস্যা তৈরি হলেই আমরা জানতে পারি। তাই এভাবে রপ্তানি করা কোন যুক্তিসঙ্গত বলে আমি মনে করি না। হাফিজুর রহমান হচ্ছেন, মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাচার্স এন্ড এক্সপোর্ট এসোশিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট, তিনি সরকারকে সিসি লিমিটেশন এর ব্যাপারটি চিন্তা করে দেখতে বলেছেন। “না হলে এই পটেনশিয়াল ইন্ডাস্ট্রির ব্যবসার বিস্তার করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।”

যারাই টু হুইলারের ক্ষেত্রে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব তৈরি করেছে, যেমন ভারত, ইন্দোনেশিয়া বা থাইল্যান্ড, তারা বিনিয়োগকারীদের দুটি জিনিসের ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছে। এক, লোকাল মার্কেট ডিমান্ড এবং সেই সাথে রপ্তানী করার একটি সুবর্ণ সুযোগ।

রানার আমেরিকার ব্র্যান্ড ইউনাইটেড মোটর্স এর সাথে কয়েক বছর আগে একটি কলোবরেশনে যায়। তবে শুধু মাত্র তারা লো ক্যাপাসিটির মডেল গুলো তৈরি ও রপ্তানি করতে পারবে। ইউনাইটেড মোটর্স রানারকে উচ্চ সিসির মোটরসাইকেল তৈরির পারমিশন দেয়নি। কারণ তাদের প্রোডাকশন কোয়ালিটি নিয়ে কিছুটা সন্দেহ ছিল, যেহেতু তারা সেই প্রোডাক্টিটি লোকাল মার্কেটে বাজার যাত করতে পারবে না।

র‍্যাঙ্কন মোটরবাইকস লিমিটেড, বাংলাদেশে সুজুকির মোটরবাইকস গুলো তৈরি করে থাকে। তারা সরকারকে আবেদন জানিয়েছে যে, যেন সিসি লিমিটেশন এর ব্যান তুলে দেয়া হয় অথবা সেটাকে যেন বাড়িয়ে দেয়া হয়। যাতে করে তারা সুজুকির উচ্চ সিসির মোটরসাইকেল গুলো তৈরি ও রপ্তানি করতে পারে।

২০১৯ এর দিকে জাপানিজ কোম্পানি কাওয়াসাকি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ সরকারকে জানিয়েছিল যে তারা বাংলাদেশে কাওয়াসাকির মোটরসাইকেল গুলো তৈরি করতে এবং বিনিয়োগে আগ্রহী, কিন্তু যেহেতু সিসি লিমিটেশন রয়েছে তাই তারা নিশ্চিত নয় যে এখান থেকে সেভাবে কোন রিটার্ন আসবে কিনা। একই ধরনের কথা কাওয়াসাকির অফিশিয়াল ডিস্ট্রিবিউটর এশিয়ান মোটরবাইকসও জানিয়েছে। এশিয়ান মোটরবাইকস এর হেড শাফাত ইশতিয়াক জানিয়েছেন যে, সিসি লিমিটেশন বাংলাদেশের মোটরসাইকেল ইন্ডাস্ট্রিকে নতুন ও আধুনিক প্রযুক্তি থেকে বঞ্চিত করছে।

পৃথিবীর বিখ্যাত কোম্পানি BMW এবং ডুকাটি দুটি কোম্পানিই বাংলাদেশ ইনভেস্ট করতে আগ্রহী। জাপানিজ হোন্ডা, ইয়ামাহা, ভারতীয় হিরো, বাজাজ, টিভিএস ইতিমধ্যে তাদের ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট বাংলাদেশে করেছে। অতিরিক্ত সচিব, এএইচএম শফিকুজ্জামান বলেন যে, আমরা সিসি লিমিট আটকে রাখতে পারব না, কেননা এর চাহিদা LDC স্ট্যাটাস অনুযায়ী দিন দিন বেড়েই চলেছে। যদি আমরা বৈদেশিক বাজারে ঢুকতে চাই তাহলে আমাদের নিজেদের ইন্ডাস্ট্রির দিকে ইনভেস্ট করতে বাকিদের আগ্রহী করে তুলতে হবে।”

এখন কমার্স মিনিস্ট্রি কে অপেক্ষা করতে হবে হোম এফেয়ার্স এবং ট্রান্সপোর্টেশন বিভাগের মতামতের জন্য। সোর্স মতে হোম মিনিস্ট্রি আগের চেয়ে অনেক বেশি আগ্রহী বাংলাদেশে উচ্চ সিসির টু-হুইলার্স এর ব্যাপারে।

তথ্যসূত্র ও প্রতিবেদনঃ দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

Bootstrap Image Preview