মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ও লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকাকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় প্রেমিক দিহানকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের প্রেমের বিষয়টি নিয়ে জল্পনা থাকলেও খবরের সত্যতা পেয়েছে পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, গত বছরের নভেম্বর থেকে দিহানের সাথে ওই ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক চলমান ছিল বলে প্রমাণ মিলেছে। আমরা দিহানের বাসা থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছি। তবে তদন্তের স্বার্থে সকল বিষয়ে এখনই বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্ত রিপোর্টসহ অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষার ডকুমেন্ট আমাদের হাতে আসলেই এই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে বলে মনে করছি।
গত শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতের হাকিম মামুনুর রশিদ ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দিহানের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জবানবন্দিতে দিহান বলেছেন, শারীরিক সম্পর্কের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে বন্ধুদের ডেকে তাদের সহযোগিতায় মেয়েটিকে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরীক্ষা করার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরের পর মেয়েটির মৃত্যুর ঘটনায় রাতেই কলাবাগান থানায় মামলা দায়ের করেন ওই ছাত্রীর বাবা আল আমিন আহম্মেদ। মামলার এজহারে মেয়েটির বাবা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় তার স্ত্রী অফিসের উদ্দেশে ঘর থেকে বের হন। তিনি ব্যবসায়িক কাজে বের হন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে। বেলা পৌনে ১২টার দিকে তার স্ত্রীকে ফোন করে মেয়ে জানায়, সে কোচিং থেকে পড়ালেখার পেপার্স আনতে যাচ্ছে।
বেলা ১টা ১৮ মিনিটে মেয়ের মায়ের মোবাইল ফোনে কল আসে। ফারদিন ইফতেখার দিহান (১৮) নিজের পরিচয় দেয়। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ‘আমার স্ত্রীর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে ফোন করে বলে, ‘সে দিহান। আমার মেয়ে তার বাসাতে গিয়েছিল। আকস্মিকভাবে আমার মেয়ে তার বাসাতে অচেতন হয়ে পড়লে সে আমার মেয়েকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়।’
এই খবর পেয়ে মেয়েটির মা অফিস থেকে বের হয়ে বেলা ১টা ৫২ মিনিটে হাসপাতালে ছুটে যান। এজাহারে আনুশকার বাবা আরও উল্লেখ করেন, ‘সেখানে থাকা কর্তব্যরত ডাক্তারের কাছ থেকে আমার মেয়েকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হয়েছে মর্মে আমার স্ত্রী জানতে পারেন।’
বেলা ১টা ৫৭ মিনিটে বিষয়টি মেয়ের বাবা আল আমিনকে জানান স্ত্রী। এরপর তিনি পুরান ঢাকার নবাবপুরের ব্যবসাস্থল থেকে দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যান। এজাহারে বাবা উল্লেখ করেন, ‘জরুরি বিভাগে থাকা কর্তব্যরত ডাক্তার নার্স হাসপাতালে অন্যান্য কর্মচারীসহ উপস্থিত অন্যান্য লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারি যে উপরে বর্ণিত বিবাদী ফারদিন ইফতেখার দিহান দুপুরে ১২ টার দিকে বড় মেয়ে আনুশকা নূর আমিনকে প্রেমে প্রলুব্ধ করে মোবাইল ফোনে তার কলাবাগান ডলফিন গলির, লেকসার্কাসের ফাঁকা বাসায় ধর্ষণের উদ্দেশ্যে ডেকে নিয়ে যায়।
রক্তক্ষরণে মেয়ে অচেতন হয়ে পড়লে দিহান ধর্ষণের বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে বেলা ১টা ২৫ মিনিটের দিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে পৌনে ২টার দিকে মারা যায় মেয়েটি। পরে কলাবাগান থানা পুলিশের একটি দল হাসপাতালে যায়। তারা মেয়েটির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে পাঠায়।