Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মানুষের মল-মূত্রে ছেয়ে গেছে কুয়াকাটা সৈকত

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ জানুয়ারী ২০২১, ১১:০৩ PM
আপডেট: ০৯ জানুয়ারী ২০২১, ১১:০৩ PM

bdmorning Image Preview


নতুন বছরকে বরণ করে নিতে দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের ঢল নেমেছিলো। তীব্র শীতের মধ্যেও সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে নেচে গেয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠছিলো সবাই। কিন্তু এই সমুদ্রসৈকতের সমস্যার অন্ত নেই। তেমনি একটি সমস্যার কথা তুলে ধরে প্রতিবেদন করেছেন কেফায়েত শাকিল। 

৫ জানুয়ারি সকাল ৯.২৮ মিনিট। আমাদের বহনকারী গাড়িটি থামে কুয়াকাটা পর্যটন মোটেলের সামনে। গাড়ি থেকে নেমে রুমে ব্যাগ রেখেই ছুটে গেলাম সমুদ্র সৈকতের দিকে। জিওব্যাগ দিয়ে বানানো সিঁড়ি বেয়ে সমুদ্র সৈকতের বালুতে প্রথম পা রাখতেই পিছলে পড়ার অবস্থা। কোনোমতে নিজেকে সামলে নিচের দিকে তাকাতে চোখে পড়লো মানুষের মল-মূত্র।

কিছুক্ষণের মধ্যে একই অভিযোগ নিয়ে এলেন আরো কয়েকজন। কারো জুতায় কারো আবার কাপড়েও লেগেছে এ মানব-বর্জ্য। এতে পুরো ট্যুরই মাটি হয়েছে কারো কারো। পর্যটকদের অভিযোগ, সৈকতের জিরো পয়েন্টের আশপাশের অনেক জায়গায় ছড়ানো ছিটানো ছিলে এমন মল-মূত্র।

সৈকতে এসে এমন বর্জ্যের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করে সানোয়ার হোসেন নামের এক পর্যটক জানান, আবর্জনা কাপড়ে লেগে যাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে হোটেলে ফিরে গোসল করতে হয়েছে তাকে। এরপর ঘৃণায় সারাদিন হোটেলে কাটিয়েছেন তিনি।

রহিমা আফরোজ জানান, ঢাকা থেকে অনেক আশা নিয়ে কুয়াকাটায় এলেও এমন অপরিচ্ছন্ন সৈকত দেখে আর সমুদ্রে নামেননি তিনি। 

বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মাহমুদ সোহেল নামের আরেক পর্যটক বলেন, সকাল দশটার পর বিচে মল-মূত্র কীভাবে থাকে কোনোভাবে মাথায় ধরছে না। রাতে কেউ মলত্যাগ করে থাকলেও সকাল থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি দায়িত্ব পালন করেছে? সঠিকভাবে বিচ ম্যানেজমেন্ট করা হলে এমন পরিস্থিতি কখনো তৈরি হতো না।

দেশি পর্যটকরা হয়তো এমন অপরিচ্ছন্ন অবস্থা মেনে নিচ্ছে। কিন্তু কোনো বিদেশি পর্যটককে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হলে দেশের ভাবমূর্তি কোন পর্যায়ে দাঁড়াতও, প্রশ্ন ছুড়ে দেন এ পর্যটক।

শুধু মল-মূত্রই নয়, সৈকতজুড়ে দেখা মিলে অসংখ্য টঙ দোকান। কেউ কেউ বসেছেন ভ্রাম্যমাণ গাড়ি নিয়েও। এতে বিক্রি হচ্ছে প্লাস্টিক মোড়কের নানা খাবার। সেইসব খাবার খেয়ে আবার অবশিষ্ট আবর্জনা ছুড়ে ফেলা হচ্ছে সৈকতেই। এতে সমুদ্র সৈকতজুড়ে যত্রতত্র দেখা মিলে প্লাস্টিকসহ নানা আবর্জনার। যার কারণে সৌন্দর্য হারাচ্ছে সমুদ্র কন্যা খ্যাত দেশের এই সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্রটি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমুদ্র বিষয়ক পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ আওয়ার সি-এর মহাসচিব মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক সময় সংবাদকে বলেন, এক সাথে সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ থাকায় বিশ্বজুড়ে পরিচিত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। কিন্তু পদে পদে অব্যবস্থাপনার কারণে এ পর্যটন কেন্দ্রটির এখন সুনামের তুলনায় দুর্নামই বেশি। এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কুয়াকাটাকে সমুদ্র সৈকত নয়, বস্তি মনে হয়। এমন পরিস্থিতি দেশকে বিশ্বের বুকে ছোট করেছে।

সৈকতে ফেলা প্লাস্টিকের কারণে কুয়াকাটার পর্যটন আকর্ষণ কমার পাশাপাশি সমুদ্র দূষণ হচ্ছে বলে জানিয়ে এ পরিবেশবিদ বলেন, সৈকতে ফেলা প্লাস্টিক সমুদ্রে গিয়ে সাগরের পরিবেশ নষ্ট করছে। এসব প্লাস্টিকের কারণে সমুদ্র প্রতিবেশ-ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। সমুদ্রে মাছসহ বিভিন্ন প্রাণীর প্রজনন প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। যা অর্থনৈতিকভাবেও আমাদের ক্ষতি কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কুয়াকাটাকে রক্ষা করতে হলে পদক্ষেপ নিতে হবে এখনি, বলছিলেন সেভ আওয়ার সি-এর মহাসচিব।

অপরিচ্ছন্নতার বিষয়ে জানতে চাইলে কুয়াকাটা পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের এমন পরিস্থিতিতে আমি নিজেও বিব্রত। কিন্তু সৈকতে আমি কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কিছুই করার নেই। কারণ বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে স্থানীয়দের কোনো অংশগ্রহণ নেই। বিচ নিয়ন্ত্রণ করা হয় পটুয়াখালী থেকে। ফলে তারা পটুয়াখালী বসে বিচে কি হচ্ছে কিছুই টের পায় না। এ কারণেই এমন অব্যবস্থাপনা বলে দাবি তার।

তবে সমুদ্র সৈকতে নিজের কোনো ক্ষমতা না থাকলেও কুয়াকাটার সম্মানের স্বার্থে সৈকত পরিষ্কার করতে কাজ করবেন বলেও আশ্বস্ত করেন এ জনপ্রতিনিধি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিচ ম্যানেজম্যান্ট কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকা পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরী সময় সংবাদকে বলেন, সৈকতে যেসব আবর্জনা দেখেছেন তার কোনো ছবি থাকলে আমকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠান। টঙ দোকানের ছবিও পাঠান। আমরা কুয়াকাটায় থাকা কমিটির সদস্যদের মাধ্যমে তথ্য যাচাই করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।

সূত্রঃ সময় টিভি 

Bootstrap Image Preview