Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর কোটি কোটি টাকা কোথায় হারিয়ে গেল?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ জানুয়ারী ২০২১, ০৮:৪৩ AM
আপডেট: ০৪ জানুয়ারী ২০২১, ০৮:৪৩ AM

bdmorning Image Preview


আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দন্ড কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা আন্তর্জাতিক মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগও করছে। এ জন্য এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা ইউনিট বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) চিঠি দিয়েছে। বিএফআইইউ থেকে সংশ্লিষ্ট দেশ ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় ভার্চুয়াল আলোচনা করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, মীর কাসেম আলীর পাচারকৃত অর্থ দ্রুত ফিরিয়ে

আনা সম্ভব হবে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে বিএফআইইউ এর একটি প্রতিনিধি দল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ইউএসএ) সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএফআইইউ এর একজন পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মীর কাসেম আলী ক্যাসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসকে দেওয়া ২৫ মিলিয়ন ডলারের বাইরে এ সংক্রান্ত লেনদেনের অন্য কোনো তথ্য রয়েছে কিনা- সেটা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। মীর কাসেম আলীর সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল সম্ভাব্য কয়েকটি দেশ ও সংস্থার কাছেও তথ্য চাওয়া হয়েছে।

সরকারও বেশ আন্তরিকতার সঙ্গে বিষয়টিকে দেখভাল করছে। আশা করা যায়, দ্রুত একটি ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। জানা গেছে, ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে দুদকে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। এতে বলা হয়, তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে ইউএসএভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ক্যাসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসকে লবিস্ট ফার্ম হিসেবে নিয়োগ করেন। এ জন্য ফার্মটিতে সে সময় ২৫ মিলিয়ন ডলার পাঠান (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা)। 

যা ছিল বৈদেশিক লেনদেনের গাইড লাইন অনুযায়ী নিয়ম বহির্ভূত লেনদেন। এটা মানি লন্ডারিং আইন অনুযায়ী অর্থ পাচারের মতো অপরাধ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য প্রভাবিত করতে ফার্মটিকে লবিস্ট হিসেবে নিয়োগ করে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করা হয় বলে জানিয়েছে দুদক। সে সময়ই বিষয়টি জানাজানি হলে নড়েচড়ে বসে দুদক। তখন দুদক থেকে এ বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য শুরু হয় তৎপরতা। দুদকে পাঠানো আইন মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত এক অভিযোগপত্রে বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নস্যাৎ করতে ২০১০ সালের ৬ অক্টোবর ওয়াশিংটনের ‘ক্যাসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস’র সঙ্গে মীর কাসেম আলী চুক্তি করেন। ওই চুক্তিতে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে স্বাক্ষর করেন মীর কাসেম আলী আর ক্যাসিডি’র পক্ষে স্বাক্ষর করেন এ্যান্ড্রিও জে ক্যামিরস। লবিস্ট এই ফার্মটি বিচার কার্য ঠেকাতে ও তা বিলম্বিত করতে সব ধরনের আইনি পরামর্শ দিতে সম্মত হয়। এ বিষয়ে ওয়াশিংটন ও ঢাকায় উভয় পক্ষের মধ্যে একাধিকবার বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। জানা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে মার্কিন সরকারের কাছে সমঝোতামূলক আইনি সহায়তার আবেদন মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স রিকোয়েস্ট-এমএলএআর পাঠানো হয় দুদকের মাধ্যমে।

 এ বিষয়েও বেশ অগ্রগতি রয়েছে বলে জানা গেছে। অবশ্য এর বাগে ২০১২ সালের ২৫ আগস্ট আদালতের অনুমতিক্রমে মীর কাসেম আলীকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তা অস্বীকার করলেও সে সময় মীর কাসেম আলী এ সংক্রান্ত কিছু সংবেদনশীল তথ্যও দেন পুলিশকে। সে অনুযায়ীই অর্থ ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে ব্রিটিশ আইনজীবী টমি ক্যাডম্যান বাংলাদেশে আসেন। চুক্তি অনুযায়ী ২৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে মাত্র ৬ মাস কাজ করার কথা মার্কিন এই ‘ল’ ফার্মটির। পরে কাজ করাতে হলে তাদের আরও মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হবে। ধারণা করা হয়, মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে আরও বিপুল পরিমাণ অর্থ ফার্মটিকে পরিশোধ করেছেন মীর কাসেম আলী। 

এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পেতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও এন্টি মানি লন্ডারিং বিষয়ক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগও করছে বিএফআইইউ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়। এদিকে কুয়েতে মানব পাচার এবং প্রবাসীদের উপার্জনের টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন জালিয়াতি ও ভিসা ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এমপি শহিদ ইসলাম পাপুলের সঙ্গে মীর কাসেম আলীর ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এতে দুজন মিলে বিশ্বের অন্য কোনো দেশেও অর্থ পাচার করেছেন কি না- তাও অনুসন্ধান করছে সরকার।

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ 

Bootstrap Image Preview