বিডিমর্নিং ডেস্কঃ কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না চালের চড়া দাম। চট্টগ্রামের প্রাইকারি বাজার চাক্তাই খাতুনগনঞ্জ, পাহাড়তলী বাজার পরিদর্শন করে চালের মূল্য বৃদ্ধির সত্যতা পাওয়া গেছে। বিভিন্ন ধরনের চালের বস্তা প্রতি ২০০ টাকা করে বেড়েছে বলে অনেকের অভিমত।
চালের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, চালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর। কেননা, গরিব মানুষের মোট আয়ের শতকরা ৮০ শতাংশ ব্যয় হয় চাল কিনতে। চালের দাম কমলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী আবার দারিদ্র্যসীমার ওপরে যাবে।
এ কথা সত্যি, দারিদ্র্যসীমার বিষয়টি কোনো সময়েই স্থিতিশীল নয়। নানা কারণে এ সীমার হ্রাস-বৃদ্ধি হয়। যেখানে চাল দৈনন্দিন খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে প্রধান উপাদান, সেখানে এর মূল্য বৃদ্ধি হওয়া মানেই দরিদ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি, যা আশঙ্কাজনক।করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর অধিকাংশ মানুষের জীবনেই অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে এসেছে।
বিভিন্ন গবেষণা বলছে, নিম্ন আয়ের অনেকেই জীবিকা হারিয়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গিয়েছেন। যারা কর্মরত রয়েছেন তাদের অনেকের আবার আয় কমেছে। এমনকি মধ্য আয়ের অনেকেও একই পরিণতি বরণ করেছেন।
হঠাৎ করে চালের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনটি কারণকে দায়ী করেছেন অর্থনীতিবিদ ও বাজার-সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, চাল রপ্তানির অনুমোদন, মিলমালিক ও পেঁয়াজের দাম বাড়ার ছায়াপ্রভাব।
গবেষকদের মতে, চাল এমন একটি পণ্য, এর দাম বাড়লে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়ে শ্রমজীবী ও গরিব মানুষ। অতএব, চালের দাম যাতে কোনোভাবে না বাড়ে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আমদানি নয়, বরং খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে এবং সরকারি গুদামে প্রয়োজনীয় ধান-চাল মজুত করেই বাজার স্থিতিশীল রাখার ওপর জোর দিতে হবে। খোলাবাজারে কম দামে পর্যাপ্ত চাল বিক্রিও পরিস্থিতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
যে কোনো পণ্যের সরবরাহ কমলে দাম বাড়ে, এটাই স্বাভাবিক। পরিবহন সংকটে চাল সরবরাহ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। ফলে চালের বাজারমূল্য কিছুটা বেড়েছে। অবশ্য এ জন্য অনেকেই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অতি মুনাফালোভীদের দায়ী করছেন। আবার সরকারের পক্ষেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যেন কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কেউ মূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে। অতিমুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীদের কবলে পড়ে সাধারণ ভোক্তার গলাকাটার অভিযোগকে যেমন উড়িয়ে দেওয়া যাবে না, তেমনি মূল্য বৃদ্ধির প্রকৃত কারণ উদঘাটন করে প্রতিকারে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে ভোক্তার কষ্টও লাঘব হবে না।
অন্যদিকে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা যাতে পূরণ হয়, সে ব্যাপারে সরকারকে সজাগ থাকতে হবে। চালের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করার সুফলটি যাতে সাধারণ ভোক্তা পান, সে জন্য আমদানি কারকদের ওপরও নজরদারি বাড়াতে হবে।
এ বিষয়ে ক্যাবের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোছাইন বলেন, ক্যাব সবসময় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে সোচ্চার থাকে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বাজারে ক্যাব প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে বাজার মনিটরিং করে থাকে। অসাধু ব্যবসায়ীরা অনৈতিকভাবে ও অনেক সময় চালের দাম বাড়ায় বলেও তিনি জানান। এর বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিলে ভোক্তারা উপকৃত হবে এবং ব্যবসায়ীরা দাম কমাতে বাধ্য হবেন বলে তিনি মনে করেন।
এ বিষয়ে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি চালের আড়তদাররা।