Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্ৰিয় এনার্জি ড্রিংক কোনটি?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:৫৬ PM
আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:৫৬ PM

bdmorning Image Preview


বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্ৰিয় এনার্জি ড্রিংক কোনটি? এ প্রশ্নের উত্তরে সবার আগে যে নামটি আসবে সেটা হচ্ছে রেড বুল। বিখ্যাত অস্ট্রিয়ান কোম্পানি রেড বুল জিএমবিএইচ মূলত রেডবুল নামক এ জনপ্ৰিয় এনার্জি ড্রিংকের একমাত্র প্রস্তুতকারক। সালজবুর্গের উপকণ্ঠে অবস্থিত ফুসচল অ্যাম সি নামক স্থানে এর সদর দফতর অবস্থিত।শুধুমাত্র গত বছর এ পৃথিবীতে রেড বুলের বিক্রীত ক্যানের সংখ্যা ছিলো ৭.৫ বিলিয়ন। এ হিসেবে গত বছর গড়ে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ একটি করে রেড বুলের ক্যান ক্রয় করেছিল! বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বসের  মোস্ট ভ্যালুয়েবল ব্র্যান্ডের তালিকায় রেড বুল আছে ৭১ নাম্বারে। ২৪.৯ শতাংশ মার্কেট শেয়ার নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় এনার্জি ড্রিংকের তালিকায় রেড বুল আছে শীর্ষে। এমনকি বিশ্বের প্রায় ১৭১টিরও বেশি দেশে রেড বুলের আছে ৭০% থেকে ৮০% মার্কেট শেয়ার। 

রেড বুলের ইতিহাসের সাথে দুইজন ব্যক্তির নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে। প্রথম জন হচ্ছেন চালেও ইউভিদিয়া। ১৯২৩ সালে থাইল্যান্ডের ফিচিত প্রদেশে এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে তার জন্ম। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে তিনি বেশিদূর প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা করতে পারেননি। অল্প বয়সে পরিবারের হাল ধরার জন্য বড় ভাইয়ের ওষুধের দোকানে কাজ শুরু করেন তিনি। সেখানে মূলত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের  সেলসম্যান হিসেবে কাজ করতেন। দীর্ঘদিন কাজ করার ফলে তিনি বিভিন্ন ধরনের ক্যামিকেল ও এর ওপর মার্কেটিংয়ে দক্ষতা অর্জন করে ফেলেন।
১৯৬২ সালে টিসি ফার্মাসিটিক্যাল নামক নিজের একটি ঔষধ কোম্পানি চালু করেন। সত্তর দশকের দিকে থাইল্যান্ডের বাজারে এনার্জি ড্রিংক প্রবল জনপ্ৰিয়তা লাভ করে। কিন্তু সে সময় থাইল্যান্ডের প্রায় সকল এনার্জি ড্রিংক বাইরের দেশগুলো থেকে আমদানি করা হতো। ফলে দেশটির বাজারে যেসব এনার্জি ড্রিংক পাওয়া যেত সেগুলো ছিল অত্যন্ত উচ্চমূল্যের এবং উচ্চবিত্ত ছাড়া কারও সেটি ক্রয়ের সামর্থ্য ছিল না। চালেও একটি এনার্জি ড্রিংক প্রস্তুতির প্রকল্প হাতে নেন যেন থাইল্যান্ডের সকল মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে এটি ক্রয় করতে পারে।
থাইল্যান্ডের বাজারের অন্যান্য সফট ড্রিংকের উপকরণ নিয়ে সেগুলোর ওপর গবেষণা করতে থাকেন এবং সম্পূর্ণ নিজ ফর্মুলায় এনার্জি ড্রিংক প্রস্তুত করেন। যেহেতু এ ধরনের পানীয় শরীরে শক্তি জোগায় এবং অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে, তাই তিনি এর নাম রাখেন ‘ক্রাটিং ডায়েং,’ যার বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে লাল ষাঁড়। এর লোগোতে দুটি লাল ষাঁড়ের ছবি ছিল যা আজও রেড বুলের লোগোতে দেখা যায়। অল্প সময়ের মধ্যে ক্রাটিং ডায়েং থাইল্যান্ডের বাজারে ব্যাপক জনপ্ৰিয়তা লাভ করে। ১৯৭৮ সালের দিকে লিপোভিটাং ডাইংকে টপকে ক্রাটিং ডায়েং থাইল্যান্ডের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত এনার্জি ড্রিংকের তালিকায় স্থান দখল করে নেয়। এ সময় ক্রাটিং ডায়েং যেন থাইল্যান্ডের জাতীয় ড্রিংকে পরিণত হয়।

১৯৮২ সালে ডিটরিখ মাটেসচিটজ নামক এক অস্ট্রিয়ান ভদ্রলোক বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেন। ডিটরিখ মাটেসচিটজ সে সময় বিখ্যাত জার্মান ম্যানুফ্যাকচারার ব্লেন্ড্যাকসের অধীনে কাজ করতেন। বিমান ভ্রমণে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন, ব্যাংককে পা রেখেই তাই তিনি পান করেন ক্রাটিং ডায়েং। এটি এতোই ভালো লাগে যে তিনি নিমিষে কয়েক ক্যান ক্রাটিং ডায়েং শেষ করে ফেলেন। পরবর্তীতে তিনি সেটিকে অস্ট্রিয়াতে বাজারজাত করার জন্য মনঃস্থির করেন। এজন্য তিনি চালেও ইউভিদিয়ার সাথে একটি চুক্তিও করেন। তবে ইউরোপিয়ানদের কথা মাথায় রেখে ডিটরিখ মাটেসচিটজ এর স্বাদে কিছুটা ভিন্নতা আনেন এবং একই সাথে ক্রিয়েটিং ডায়েং থেকে পরিবর্তন করে এ এনার্জি ড্রিংকের নাম রাখেন রেড বুল। ১৯৮৭ সালে অস্ট্রিয়াতে প্রথম রেড বুল বাজারজাত করা হয়। সে সময় অস্ট্রিয়াসহ ইউরোপের বাজারে কোকাকোলা কিংবা পেপসির মতো কোমল পানীয়ের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। তাই সরাসরি কোকাকোলা কিংবা পেপসির সাথে প্রতিযোগিতায় না গিয়ে তিনি অস্ট্রিয়ার তৎকালীন তরুণ প্রজন্মকে এ এনার্জি ড্রিংকের প্রধান ভোক্তা হিসেবে টার্গেট করেন।
প্রথম দিকে কিছু শিক্ষার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয় রেড বুলের বিপণনের জন্য। তাদের কাজ ছিল যেকোনো পার্টিতে বিনামূল্যে রেড বুল সরবারহ করা। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন পার্টিতে পরিবেশনের জন্য রেড বুল দিয়ে তৈরি কিছু ককটেলের উদ্ভাবন করেন যেগুলো সত্যিকার অর্থে অস্ট্রিয়াতে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯৯০ সালে ইউরোপের অন্যান্য দেশেও রেড বুল বাজারজাত করা হয়। ১৯৯৪ সালে রেড বুল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করে। সেই বছর শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এক মিলিন রেড বুল ক্যান বিক্রি হয়। ২০০০ সাল থেকে  রেড বুল মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের বাজারে প্রবেশাধিকার পায়। এভাবে রেডবুল একটি বিশ্ব ব্র্যান্ডে পরিণত হয়। 

ডিটরিখ ছিলেন একজন ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ। তাই তিনি ক্রীড়াঙ্গনের সাথে রেড বুলের পরিচয় ঘটান। ১৯৯১ সালে ‘রেড বুল ফ্লুগট্যাগ’ নামক একটি স্পোর্টস ইভেন্টের আয়োজন করেন তিনি যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ তাদের নিজস্ব তৈরি হিউম্যান পাওয়ার ফ্লাইং মেশিন দিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে। এ ইভেন্টটি ব্যাপক দর্শক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এভাবে রেড বুল স্পোর্টস অঙ্গনে প্রবেশ করে। বর্তমানে রেড বুলের বেশির ভাগ মার্কেটিং স্পোর্টসকে ঘিরে। এমনকি রেড বুলের নিজস্ব দুটি ফর্মুলা ওয়ান রেস্ টিম রয়েছে। উইন্ড সার্ফিং, রক ক্লাইম্বিং, ক্লিফ ডাইভিং, পাওয়ার ওয়াকিং, এয়ার কিকিংসহ প্রায় সকল ধরনের এক্সট্রিম স্পোর্টস ইভেন্ট স্পন্সর করে থাকে রেড বুল।  জার্মানি, অস্ট্রিয়া এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও তাদের নিজস্ব স্টেডিয়াম রয়েছে। এছাড়াও পরিবেশের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেও নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে রেড বুল। রেড বুলের একটি ক্যান ১০০ শতাংশ রিসাইকেল যোগ্য, এমনটাই দাবি এই পানীয় উৎপাদনকারীদের। ।বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১৬ ধরনের রেড বুলের বিভিন্ন ফ্লেভার রয়েছে। রেড বুলের বর্তমান ব্র্যান্ড ভ্যালু ৯.৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মার্কেট রেভিনিউ ৬.৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার। চ্যালিও ও ডিটরিখের যৌথ প্রচেষ্টা বিশেষত ডিটরিখের মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজির জন্য রেড বুল এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত এনার্জি ড্রিংক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। স্লোভেনিয়ার বাজারে ২৫০ মিলিলিটারের একটি রেড বুল ক্যানের মূল্য ১.৩৪ ইউরো। 

Bootstrap Image Preview