Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাংলাদেশে গণহারে করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরিকল্পনা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০২০, ০১:৪২ PM
আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২০, ০১:৪২ PM

bdmorning Image Preview


বাংলাদেশে গণহারে মহামারি করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ জন্য আপাতত কোনো প্রকার জরিপ করা হবে না। তবে ভ্যাকসিনের খরচ আগের আনুমানিক মূল্যের চেয়ে কিছুটা বাড়বে বলে জানিয়েছে অর্থ বিভাগ।

প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের মূল্য ধরা হয়েছিল আনুমানিক ৪২৩ টাকা (৫ মার্কিন ডলার)। এখন নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৩০ টাকা (৬.২৫ মার্কিন ডলার)। যা ৯ ডিসেম্বর অনুমোদনও দিয়েছে অর্থ বিভাগ। তবে ভ্যাকসিন কবে নাগাদ পাওয়া যাবে এ ব্যাপারে এখনো কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।

অবশ্য সরকার আশা করছে বাণিজ্যিকভাবে ভ্যাকসিনের ব্যবহার শুরু হওয়ার প্রথম দফায়ই বাংলাদেশ ভ্যাকসিন পাবে। আর প্রাথমিকভাবে যে সাড়ে ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন আসবে তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসকসহ ফ্রন্টলাইনারদের দেওয়া হবে। তবে কোনো মানুষই ভ্যাকসিন থেকে বাদ পড়বে না বলে পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, স্বাস্থ্যবিভাগের চাহিদাপত্রের কিছু কিছু সম্ভাব্য ব্যয় অযৌক্তিক হিসেবে আমলে নিয়ে তা বাদ দেওয়া হয়েছে। এর  মধ্যে  রয়েছে- আপ্যায়ন, জরিপ, প্রচার-প্রচারণা, সম্মানী, ভ্রমণ সংক্রান্ত সম্ভাব্য ব্যয়। এসব খাতের বিপরীতে প্রায় ১১৭ কোটি টাকা চেয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। কিন্তু এসব সম্ভাব্য ব্যয়কে অযৌক্তি বিবেচনায়  কর্তন করেছে অর্থ বিভাগ। প্রচার-প্রচারণা জরিপের ব্যাপারে নানা বিতর্ক হতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। কেননা কোথায় কীভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে তা প্রচার-প্রচারণা না করলে জনসাধারণ জানতে পারবে না। আবার জরিপ না করলে কারা ভ্যাকসিনের আওতায় আসবেন, কারা আগে পাবেন, কারা পরে পাবেন- সে প্রক্রিয়ায় নানা রকম জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল বা নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, সব জনসাধারণকেই ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে। এ জন্য জরিপ করার প্রয়োজন হবে না।

এদিকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ভ্যাকসিন কেনার একটি প্রস্তাব অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ইতিমধ্যে অনুমোদন দিয়েছে। তবে ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন নেওয়া হয়নি এখনো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসছে সপ্তাহে এ প্রস্তাব ক্রয় কমিটিতে উপস্থাপন করা হতে পারে। এ ছাড়া অর্থ বিভাগ থেকে গত ১৬ নভেম্বর ভ্যাকসিন কিনতে ৬৩৫ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রচার-প্রচারণা ছাড়া মানুষের তথ্য জানতে সমস্যা হবে এটা খুবই স্বাভাবিক। আমরা এ জন্য কিছু টাকা বরাদ্দও চেয়েছিলাম। কিন্তু অর্থ বিভাগ তা অনুমোদন করেনি। সরকারও বলছে পর্যায়ক্রমে সব জনসাধারণকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। ফলে খুব একটা প্রচার-প্রচারণার দরকার হবে না।

সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য বিভাগের এ ভ্যাকসিন ক্রয়ের খাতভিত্তিক সম্ভাব্য ব্যয় শীর্ষক একটি চাহিদাপত্র, যেখানে ৭৩৫ কোটি ৭৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা অনুমোদন দিয়েছে অর্থ বিভাগ। সেখানে স্বাস্থ্য বিভাগ চেয়েছিল ১ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা।

সেই চাহিদাপত্রের তথ্যমতে, আপ্যায়ন ব্যয় চাওয়া হয়েছিল ৮৯ কোটি টাকা। যা অনুমোদন করা হয়নি। হায়ারিং চার্জ বাবদ চাওয়া হয়েছিল ৬ লাখ ৮০ হাজার। যা অনুমোদন করা হয়েছে। ভ্রমণ ব্যয় হিসেবে চাওয়া হয়েছিল ৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, প্রচার-প্রচারণা, বিজ্ঞাপনের জন্য ১৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল, ব্যবস্থাপনা ব্যয় হিসেবে চাওয়া হয়েছিল ১ কোটি টাকা, জরিপের জন্য ৯ কোটি ৫ লাখ টাকা, চিকিৎসা ব্যয় বাবদ ২ কোটি ১ লাখ চাওয়া হয়েছিল। এর কোনোটিই অনুমোদন করেনি অর্থ বিভাগ।

তথ্যমতে, ওষুধ ও প্রতিষেধকের জন্য ৩৬৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা অনুমোদন করা হয়েছে। এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক অন্যান্য খাতের জন্য ১০০ কোটি টাকার কিছু বেশি রাখা হয়েছে। যা গত ৯ ডিসেম্বর অনুমোদনও করেছে অর্থ বিভাগ।

এদিকে করোনার ভ্যাকসিন আকিষ্কারের প্রথম ধাপে টিকা পেতে বাংলাদেশ জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এ জন্য সরকার ইতিমধ্যে ভারতীয় একটি কোম্পানির সঙ্গে প্রাথমিক চুক্তিও করেছে। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড এবং বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে ৫ নভেম্বর। সমঝোতা অনুযায়ী, সিরাম ইনস্টিটিউট বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসকে অক্সফোর্ডেও তৈরি সার্স-কভ-২ এজেডডি ১২২২ (অক্সফোর্ড/অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন) [SARS-Cov-2 AZD 1222 (OXFORD/ASTRAZENECA VACCINE)] সরবরাহ করবে।

এ ছাড়া আরেক ওষুধ কোম্পানি বাংলাদেশের ইনসেপ্টার সঙ্গে এরই মধ্যে চীনের সিনোভ্যাক কোম্পানির সমঝোতা হয়েছে বাংলাদেশে তাদের টিকা উৎপাদনের জন্য। এ ছাড়া ভারতের বায়োটেক ও সানোফির টিকার ট্রায়ালের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের টিকার ট্রায়ালের দায়িত্ব নিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)।

এদিকে সব জনসাধারণকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি বা ইপিআই পরিচালিত কার্যক্রমের আওতায় এ করোনার টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে বলে জানা গেছে। এ জন্য জেলা-উপজেলা শহরের ইপিআই কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িতদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন/ মানিক মুনতাসির

Bootstrap Image Preview