Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

করোনা ভ্যাকসিন হালাল নাকি হারাম?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০২০, ০৩:৪৪ AM
আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২০, ০৩:৪৪ AM

bdmorning Image Preview


আ স ম মাসুম, যুক্তরাজ্য।।  পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশি ও মুসলিম অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস, হ্যাকনি, নিউহ্যাম, বার্কিং, ডেগেনহামে কভিড- ১৯ নিয়ে আলাদাভাবে সচেতনতামূলক কার্যক্রম করছে বাংলা হাউসিং অ্যাসোসিয়েশন ও চ্যারিটি সংস্থা ইস্ট হ্যান্ডস। দুটি সংস্থার কাছেই গত কয়েক দিন ধরে মুসলিম বাংলাদেশিদের অনেকের কাছ থেকে একটি প্রশ্ন এসেছে যে, ব্রিটেন যে করোনা ভ্যাকসিন ফাইজারের অনুমোদন দিয়েছে তা হালাল নাকি হারাম?

ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক চ্যারিটি সংস্থা ইস্ট হ্যান্ডসের চেয়ারম্যান ও সাংবাদিক নবাব উদ্দিন বলেন, পূর্ব লন্ডনের শ্যাডওয়েলে ইস্ট হ্যান্ডসের ফুড ব্যাংকে প্রতিদিনই আমাদের ভলান্টিয়াররা মানুষের নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন।

মানুষ জানতে চাইছেন কী কী উপকরণ দেওয়া হয়েছে ভ্যাকসিনে? এর মধ্যে হারাম কিছু আছে কি না? অনেকে জানতে চান এই ভ্যাকসিন ট্রায়ালে কোনো বাংলাদেশি অংশ নিয়েছিলেন কি না? এই সাংবাদিক বলেন, মানুষের মনে যে ভ্রান্ত ধারণা, সেগুলো দূর করতে সমাজের নেতৃস্থানীয় মানুষের এগিয়ে আসা উচিত।

এ রকম প্রশ্ন গত কয়েক দিন ধরে লন্ডনে বাংলাদেশ প্রতিদিনের অফিসেও এসেছে। মাইনুল্লাহ নামে ৭০ বছরের বয়স্ক একজন জানান, তিনি ভ্যাকসিন নিতে চান না। কারণ তিনি শুনেছেন এই ভ্যাকসিন নিলে শরীরে নানা প্রতিক্রিয়া হবে। ভ্যাকসিন হালাল নাকি হারাম- এমন প্রশ্নও এসেছে বেশ কয়েকটি। যারা প্রশ্ন করেছেন তাদের বয়স ৪০ থেকে ৭০ বছর।

ভ্যাকসিন নিয়ে বিভ্রান্তির কারণে ব্রিটিশ ইসলামিক মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিমা) তাদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তারা নিশ্চিত ব্রিটেনে যে ফাইজার ভ্যাকসিনের অনুমতি দিয়েছে সেটিতে কোনো ধরনের পশুর চর্বি বা অংশ নেই। তারা আরও উল্লেখ করেন, ভ্যাকসিনটি স্বতন্ত্র  মেডিসিন রেগুলেটরি বডি দ্বারা পরীক্ষিত।

তাই এটা নিশ্চিত যে, সাধারণ অন্যান্য ভ্যাকসিনে যেমন সামান্য জর আসে তেমন ছাড়া কোনো বড় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এ প্রসঙ্গে ইসলামিক স্কলার ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মাওলানা আবদুুর রহমান মাদানী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জানা মতে কোনো খারাপ কিছু আছে বলে জানা নেই। যদি কোনো হারাম কিছু থেকে থাকে সেটাও পরিমাণে খুবই অল্প থাকার কথা।

এখন যেহেতু আমাদের কাছে এই ভ্যাকসিনের বিকল্প কিছু নেই এবং জীবন বাঁচাতে হলে প্রয়োজন তাহলে এটা জায়েজ।’ তিনি উল্লেখ করে বলেন, ‘যেমন ফ্লু জাবে জেলাটিন আছে বলে আমরা জানি, সেটা এনিমেল ফ্যাট থেকে কি না তা এখনো শিওর না। কিন্তু আমাদের বয়স্ক অনেকের জীবন বাঁচাতে তা ব্যবহারে ক্ষতি নেই।’

ভ্যাকসিন থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছে দরিদ্র দেশগুলো : ধনী দেশগুলো এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের সরবরাহ মজুত করে ফেলেছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দরিদ্র দেশের ৯০ ভাগ জনগোষ্ঠী ভ্যাকসিন থেকে বঞ্চিত হবে বলে নতুন এক গবেষণায় জানান হয়েছে। সূত্র : আল জাজিরা।

দরিদ্র দেশে ভ্যাকসিন প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করা প্রতিষ্ঠান দ্য পিপল’স ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ধনী  দেশগুলো তাদের জনসংখ্যার তিনগুণ বেশি ভ্যাকসিনের ডোজ নিশ্চিত করে রেখেছে। ৬৭টি দরিদ্র দেশের প্রতি ১০ জনের মাত্র একজন ভ্যাকসিন পাবে বলে সতর্ক করেছে ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স।

এই জোটে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, অক্সফামের মতো মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলোও রয়েছে। ৬৭টি দেশের মধ্যে কেনিয়া, মিয়ানমার, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও ইউক্রেনে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ মানুষের দেহে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

অন্যদিকে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৪ শতাংশের প্রতিনিধিত্বকারী ধনী দেশগুলো ৫৩ শতাংশ ভ্যাকসিন ডোজ ইতিমধ্যেই মজুত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ভুক্ত দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, হংকং, ম্যাকাউও, নিউজিল্যান্ড, ইসরায়েল ও কুয়েত।

এ প্রসঙ্গে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিচার বিভাগের প্রধান স্টিভ ককবার্ন বলেন, ‘ভ্যাকসিন মজুতের ফলে বিশ্বের সব স্থানে সবার জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিতকরণের বিষয়টিকে স্পষ্টভাবেই অবহেলা করা হচ্ছে।’

অক্সফাম জানিয়েছে, কানাডা তাদের মোট জনসংখ্যার পাঁচগুণ ভ্যাকসিন সরবরাহ মজুত করেছে। আরেক শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ দক্ষিণ  কোরিয়া মোট জনসংখ্যার ৮৮ শতাংশ ভ্যাকসিন মজুত করেছে।

অন্যদিকে ফিলিপাইনের মতো উন্নয়নশীল দেশ ২৬ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে পেরেছে যা তাদের ১০ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে মাত্র ১৩ লাখকে প্রদান করা সম্ভব হবে।

অক্সফামের স্বাস্থ্যনীতি বিষয়ক প্রধান আনা ম্যারিয়ট বলেন, ‘জীবন বাঁচানো ভ্যাকসিন থেকে কেউই বঞ্চিত হতে পারেন না তা তিনি যে দেশেই থাকুন অথবা যত টাকাই তার পকেটে থাকুক না কেন।’

তিনি আরও বলেন, কোনো নাটকীয় পরিবর্তন না এলে আগামী বছরগুলোতে বিশ্বের শত কোটি মানুষ কভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিতে পারবে না।

Bootstrap Image Preview