করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ অন্যদিকে ঢাকায় বেড়েছে শীতের প্রকোপ। এ অবস্থায় ঢাকার সরকারি বড় বড় হাসপাতালের জরুরি ও বহির্বিভাগে করোনা রোগীদের পাশাপাশি অন্যান্য সাধারণ ও জটিল রোগীরা প্রতিদিনই শীতকালীন নানান সমস্যা নিয়ে ভিড় করছেন। এ অবস্থায় করোনা আক্রান্ত জটিল রোগীদের জন্য দেখা দিয়েছে আইসিইউ সঙ্কট। রোগীর চাপ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘করোনা ওয়ার্ডের সাধারণ শয্যার রোগীদের মধ্যে কারো কারো অবস্থা মুহূর্তের মধ্যে সংকটাপন্ন হয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য আইসিইউ শয্যার অনুরোধ থাকে। এর বাইরে হাসপাতালের বাইরের রোগীর জন্যও অনুরোধ আসছে। আইসিইউ প্রত্যাশী রোগীদের জন্য প্রতিদিন একটি তালিকা মেইনটেইন করা হয়। ওই তালিকাতে প্রতিদিনই ১০ থেকে ১৫ জন নতুন রোগীর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। এর বাইরে বেসরকারি অনেক হাসপাতালের ভর্তি রোগীরাও সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা পাবার জন্য তদবির করছেন। এরকম পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই সকল রোগীদের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে জটিল রোগীদেরকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ‘ঢাকার করোনা ডেডিকেটেড ১৯টি হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ শয্যা আছে ৩১৬টি। সরকারি ৮টি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা আছে ১১৩টি। এরমধ্যে গতকাল শনিবার পর্যন্ত রোগী ভর্তি ছিল ৯৮ জন। খালি ছিল ১৫টি শয্যা। খালি শয্যার মধ্যে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ৫টি, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে ৬টি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২টি ও সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে ২টি শয্যা খালি আছে। এর বাইরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে সাধারণ করোনা শয্যা থাকলেও এই দু’টি হাসপাতালে কোনো করোনা রোগীদের জন্য কোনো আইসিইউ শয্যা নাই। বেসরকারি ৯টি হাসপাতালে ২০৩টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এসব শয্যায় রোগী ভর্তি আছেন ১৩৯ জন। শয্যা খালি আছে ৬৪টি। খালি ৬৪টি শয্যার মধ্যে ইম্পালস হাসপাতালেই খালি আছে ৩২টি শয্যা।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ‘গতকাল শনিবার পর্যন্ত ঢাকার সরকারি কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ১৬টি, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ১০টি, মুগদা জেনারেল হাসপাতালের ১০টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি আইসিইউ শয্যার সবক’টিই রোগীতে পূর্ণ ছিল। এর বাইরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৪টি আইসিইউ শয্যার ২২টিতেই রোগী ভর্তি। অন্যদিকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের ১৫টি আইসিইউ শয্যার ১০টিতে রোগী ভর্তি। শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের ১৬টি শয্যাতে ১০ জন রোগী ভর্তি। সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের ৬টি আইসিইউ শয্যার ৪টিতে রোগী ভর্তি।’
এদিকে বেসরকারি বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের ১২ শয্যার মধ্যে ১২টিতেই রোগী ভর্তি। দীর্ঘদিন ধরে এই হাসপাতালের শয্যা ফাঁকা মিলছে না। আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০টি আইসিইউ শয্যার ৯টিতে রোগী ভর্তি। আসগর আলী হাসপাতালের ৩১টি শয্যাতে রোগী ভর্তি আছেন ২৭ জন, খালি আছে ৪টি শয্যা। স্কয়ার হাসপাতালের ২৫ শয্যার মধ্যে রোগী আছেন ১৯ জন। খালি আছে ৬টি শয্যা। ইবনে সিনা হাসপাতালের ৬ শয্যার মধ্যে রোগী আছে ২ জন। খালি আছে ৪টি শয্যা। ইউনাইটেড হাসপাতালের ২২ শয্যাতে রোগী আছেন ১৪ জন। খালি আছে ৮টি শয্যা। এভার কেয়ার হাসপাতালের ২০টি শয্যার ১৮টিতে রোগী। খালি আছে ২টি শয্যা। ইম্পালস হাসপাতালের ৫৬ শয্যার মধ্যে রোগী আছে ২৪ জন। খালি আছে ৩২টি শয্যা। এ এম জেড হাসপাতালের ২১টি শয্যায় রোগী আছেন ১৪ জন। খালি আছে ৭টি শয্যা।