Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

আর্টেমিসিয়া গাছ নিয়ে কেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিজ্ঞানীদের মাঝে এত আলোচনা?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০২:৫৯ PM
আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০২:৫৯ PM

bdmorning Image Preview


এ বছর এপ্রিল মাসে গোটা পৃথিবীর সংবাদ মাধ্যমে সাড়া ফেলেছিল আফ্রিকা মহাদেশের দ্বীপ রাষ্ট্র মাদাগাস্কার থেকে আসা একটি গাছের খবর। দেশটিতে একটি স্থানীয় উদ্ভিদ থেকে তৈরি পানীয় ব্যবহার করা হচ্ছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য। মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট এ্যান্ড্রি রাজোইলিনা স্বয়ং আর্টেমিসিয়া নামে ওই গাছের 'আশ্চর্য গুণের কথা' প্রচার করেছিলেন। জানা গেছে, আর্টেমিসিয়া নামে সেই গাছের নির্যাস ম্যালেরিয়া রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এই গাছ যে কোভিড-১৯ মোকাবিলা করতে পারে এমন কোন প্রমাণ নেই। অবশ্য বিজ্ঞানীরা গাছটি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করেছেন। কেউ কেউ এরমধ্যে এমন উপাদান পেয়েছেন, যা করোনার বিরুদ্ধে কার্যকর।  

কোথা থেকে এলো এই আর্টেমিসিয়া?

আর্টেমিসিয়ার আদি উৎস এশিয়া। কিন্তু অন্য বহু দেশেই এটা হয়ে থাকে - যেখানে আবহাওয়া গরম এবং প্রচুর রোদ পাওয়া যায়। চীনের ঐতিহ্যবাহী ওষুধ তৈরিতে এই আর্টেমিসিয়া ব্যবহৃত হয়ে আসছে ২০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

আর্টেমিসিয়া থেকে তৈরি ওষুধ সাধারণত সেখানে ম্যালেরিয়া বা জ্বর সারাতে এবং বেদনা-উপশমকারী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চীনা ভেষজশাস্ত্রে একে বলা হয় কিংহাও। ইংরেজিতে একে সুইট ওয়ার্মউড বা এ্যানুয়াল ওয়ার্মউড বলা হয়। বিকল্প ওষুধ হিসেবে বা কিছু কিছু মদ তৈরিতেও এর ব্যবহার আছে।

কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে কি আর্টেমিসিয়া কাজ করে?

এ বছর এপ্রিল মাসে মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট রাজোইলিনা বলেছিলেন, আর্টেমিসিয়া থেকে তৈরি কোভিড-অর্গানিক্স নামে একটি পানীয়ের ওপর জরিপ চালানো হয়েছে এবং তা এই রোগের চিকিৎসায় কার্যকর বলে দেখা গেছে। নভেম্বর মাসে তিনি সেই একই দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন। তবে এর পক্ষে কোন প্রমাণ প্রকাশ্যে আসেনি ঠিক কী কী উপাদান দিয়ে এই পানয়িটি তৈরি হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে সরকার বলেছে যে এর ৬০ শতাংশই এসেছে আর্টেূমিসিয়া গাছ থেকে। মাদাগাস্কারে এটির ক্যাপসুল ও ইনজেকশনও তৈরি হয়েছে এবং তা মানবদেহের ওপর পরীক্ষা অর্থাৎ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে।

জার্মান এবং ড্যানিশ বিজ্ঞানীরা এখন আর্টেমিসিয়া এ্যানুয়া গাছের নির্যাস পরীক্ষা করে দেখছেন। তারা বলছেন, ল্যাবরেটরিতে চালানো পরীক্ষায় তারা নতুন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এর কিছুটা কার্যকারিতা দেখতে পেয়েছেন। এ গবেষণায় দেখা গেছে যে এই নির্যাসকে যখন বিশুদ্ধ ইথানল বা পতিত পানির সাথে ব্যবহার করা হয়, তখন তা অ্যান্টি-ভাইরাল হিসেবে কাজ করে বলে দেখা গেছে। তবে তাদের এই গবেষণা অন্য বিজ্ঞানীদের দ্বারা স্বাধীনভাবে যাচাই করানো হয়নি। এই গবেষকরা এখন যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কাজ করছেন, এবং কোন এক পর্যায়ে এটা মানবদেহের ওপর পরীক্ষা করা হবে। চীনও নিজেদের উদ্যোগে সেদেশে আর্টেমিসিয়া এ্যানুয়া উদ্ভিদ ব্যবহার করে যেসব ঐতিহ্যবাহী ওষুধ তৈরি হয় - তা পরীক্ষা করে দেখছে।

আর্টেমিসিয়া উদ্ভিদের একাধিক প্রজাতি আছে। এর মধ্যে আর্টেমিসিয়া এ্যানুয়া এবং আর্টেমিসিয়া আফ্রা নামের দুটি প্রজাতি কোভিড-১৯এর বিরুদ্ধে কাজ করে কিনা তা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করছে দক্ষিণ আফ্রিকাও। তবে এখনও ফল পাওয়া যায়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কী বলছে?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, তারা এখনও মাদাগাস্কারের পরীক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পায়নি। সংস্থাটির আফ্রিকান অঞ্চলের কর্মকর্তা জঁ-ব্যাপটিস্ট নিকিয়েমা বিবিসিকে বলেছেন, প্রথম ট্রায়ালগুলোর ফলাফল দেখার পর তারা হয় পরবর্তী পর্বের ট্রয়ালগুলোতে জড়িত হতে পারেন। তবে এখন পর্যন্ত ডব্লিউ এইচ ও বলছে, আর্টেমিসিয়া থেকে তৈরি কোন পণ্য কোভিড-১৯এর বিরুদ্ধে কাজ করে এমন কোন প্রমাণ নেই। তারা আরো বলেছে যে ওষুধ তৈরি হয় এমন সকল উদ্ভিদেরই কার্যকারিতা এবং ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কঠোর পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে নিশ্চিত হওয়া উচিত।

Bootstrap Image Preview