Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

সাহেদের পৈতৃক বাড়ি ভারতে, এনআইডি সংশোধন করে হয়েছেন মোহাম্মদ সাহেদ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ জুলাই ২০২০, ১০:২৭ PM
আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২০, ১০:২৭ PM

bdmorning Image Preview


করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট প্রদান, অর্থ আত্মসাতসহ প্রতারণার অভিযোগে রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। বুধবার সাতক্ষীরা সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পরে তাকে নিয়ে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়ে আসছে। 

দেশের জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে,  সাহেদের পৈতৃক বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বশিরহাট। রিপোর্টে বলা হয়, 

৬ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত সাহেদ কোথায়, কীভাবে ছিলেন, কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, সাতক্ষীরায় কী করে পৌঁছালেন, কার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এতটা বাড় বাড়লেন, তার জবাব পাওয়া যায়নি। এসব প্রশ্নের জবাবে র‍্যাব বলেছে, তদন্ত শেষ হলে বলতে পারবে। কখনো বলেছে, তদন্তের স্বার্থে এখন সব বলা যাবে না।

তবে সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, সাহেদ করিম কলকাতায় চলে গিয়েছিলেন। সোমবার সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্ত দিয়ে তাঁকে অনানুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। এরপর থেকে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিম্মায় ছিলেন। এক দিন পর তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

সাহেদের পৈতৃক বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের বশিরহাট। ২০০৮ সালের দিকে বহুধাপ বিপণন (এমএলএম) ব্যবসায় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকাপয়সা আদায় করে চম্পট দিয়েছিলেন। সে সময়ও আশ্রয় নিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতে।

অন্যদিকে প্রথম আলোর আরেকটি  আরেকটি রিপোর্টে জানিয়েছে, তিনি জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজের নাম সংশোধন করে সাহেদ করিম থেকে মোহাম্মদ সাহেদ হয়েছেন। 

রিপোর্টে বলা হয়, রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজের নাম সংশোধন করেছিলেন। বছর খানিক আগে তিনি নিজের নাম বদলে সাহেদ করিম থেকে মোহাম্মাদ সাহেদ হয়ে যান।

সাহেদ একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র-ব্যবহার করেছেন এমন বিষয় আলোচনার আসার পর নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুবিভাগ বিষয়টি খতিয়ে দেখেছে। এনআইডি অনুবিভাগ জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে তারা দেখতে পেয়েছে, সাহেদ গত বছর প্রয়োজনীয় বৈধ দালিলিক কাগজপত্র দাখিল করে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করেন। বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনো ধরনের প্রতারণার বিষয় পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মোহাম্মদ সাহেদের পরিচয়পত্রের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে তারা খতিয়ে দেখেছেন। তিনি ২০১৯ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করেন। নাম সংশোধনের জন্য প্রমাণ হিসেবে কেমব্রিজের ও-লেভেলের একটি সনদ, জন্ম নিবন্ধন সনদ, নাগরিকত্ব সনদ ও পাসপোর্টের কপি দাখিল করেছিলেন। প্রাথমিক তদন্তে তার দেওয়া জন্ম নিবন্ধন ও নাগরিকত্ব সনদ যথাযথ পাওয়া গেছে। ও লেভেলের সার্টিফিকেটের বৈধতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। কোথাও কোনো গ্যাপ আছে কি না বা এই সংশোধনের সঙ্গে আর কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা আরও ভালোভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনো তথ্য গোপন বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাইদুল ইসলাম বলেন, তাঁকে এনআইডি অনুবিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন করার প্রায় বছরখানেক আগে সাহেদ একটি নতুন পরিচয়পত্র করতে এসেছিলেন। সে সময় তাঁর আঙুলের ছাপ নেওয়ার পর দেখা যায় তাঁর নামে একটি পরিচয়পত্র আছে। তাই আরেকটি পরিচয়পত্র করার সুযোগ পাননি।

আইন অনুযায়ী একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র রাখা ও জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল তথ্য দেওয়ার সাজা সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা অথবা উভয়দন্ড।

এদিকে, বুধবার সকালে ‘সীমান্ত পেরিয়ে পালানোর সময়’ সাতক্ষীরা থেকে গ্রেপ্তার সাহেদকে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত হাজির করা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার হাসপাতালের এমডি মাসুদ পারভেজকেও একইসঙ্গে আদালতে তোলে গোয়েন্দা পুলিশ।

তাদের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করা হয় গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসীম দশ দিনের রিমান্ডই মঞ্জুর করেন।

তাদের আদালতে হাজির করার সময় নিরাপত্তার কড়াকড়ি বাড়ানো হয়। সাংবাদিকদের এ সময় ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে শুনানিতে উপস্থিত আইনজীবীদের কাছ থেকে দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক আর সাহেদের বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পেরেছে। 

ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আসামি সাহেদ একসময় কাঁদতে থাকেন। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, করোনায় আমার বাবা মারা গেছে। আমরা তাকে বলি, শান্ত হোন, আগেই এটা বোঝা উচিৎ ছিল আপনার।”

ঢাকার মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ জুলাই রাতে মারা যান সাহেদের বাবা সিরাজুল করিম, যিনি নিজেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। 

কোভিড-১৯ চিকিৎসার নামে প্রতারণা আর জালিয়াতিতে দেশজুড়ে আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদকে বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়।

আবদুল্লাহ আবু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শুনানির এক পর্যায়ে সাহেদ পানি খেতে চাইলে বিচারক পানি অন্য একজনকে আগে পান করে পরীক্ষার পর সাহেদের হাতে বোতল দিতে বলেন। আদালতের একজন কর্মচারী তখন নিজে পরীক্ষা করে বোতল সাহেদের হাতে দেন।

তার আগে রিমান্ড শুনানির সময় সাহেদ বিচারককে বলেন, তার রিজেন্ট হাসপাতালই প্রথম সরকারের আহ্বানে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় এগিয়ে এসেছিল, যখন অন্য কোনো হাসপাতাল সাড়া দিচ্ছিল না।

“হাসপাতাল থেকে করোনা আমাকে ও আমার পরিবারকে সংক্রমিত করে। আমরা সেরে উঠি। হাসপাতালের নিবন্ধনের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সোনালী ব্যাংকে আমরা টাকাও জমা দিয়েছে। আমি কোনো অপরাধ করিনি। অন্যায়ভাবে র‌্যাব ও পুলিশ আমার হাসপালের বিভিন্ন শাখা সিলগালা করে দিয়েছে।”

সাহেদের আইনজীবী মনিরুজ্জামান রিমান্ডের বিরোধিতা করে বলেন, “কোনো কথিত ভুক্তভোগী এ মামলা করেনি, করেছে পুলিশ। অথচ তার কাছ থেকে (সাহেদ) ব্যাপকভাবে সাধারণ জনগণ উপকৃত হয়েছে। তার অনেক শুভানুধ্যায়ী রয়েছেন, যারা তার কাছে থেকে কোনো বিনিময় ছাড়া উপকৃত হয়েছেন।”

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু রিমান্ড আবেদেনের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, “এই সাহেদ বিদেশে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। তার কারণে ইতালি থেকে বাংলাদেশি শ্রমিক, প্রবাসী কর্মীদের ফেরত আসতে হয়েছে। তিনি পরীক্ষা না করেই ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট  দিয়েছেন। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।

“তারা একটা চক্র। এ চক্রের আরো লোকজনের নাম ঠিকানা জানার জন্য আরো তথ্য উদ্ধারের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করতে ১০ দিনের রিমান্ডে দেওয়া হোক।”

রাষ্ট্রপক্ষের এই পিপির কথায় সমর্থন দিয়ে অতিরিক্ত পিপি কে এম সাজ্জাদুল হক শিহাব বলেন, “৬ হাজারে বেশি ভুয়া করোনা পরীক্ষার সাটিফিকেট আসামিরা দিয়েছিল। প্রত্যেক সাটিফিকেটের জন্য ৪/৫ হাজার টাকা আদায় করত তারা। তারা বড় রকমের ধড়িবাজ, প্রতারক।”

সাজ্জাদুল হক শিহাব পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এ মামলায় গ্রেপ্তার রিজেন্ট হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম শিবলীকে পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে ফের ১০ দিনের রিমান্ডে চেয়েছিল গোয়েন্দা পুলিশ।

বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসীম তাকে সাত দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।

Bootstrap Image Preview