Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

এসপি সুমিত চৌধুরীকে নিয়ে পুলিশে অস্বস্তি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ জুলাই ২০২০, ১২:০৫ PM
আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২০, ১২:০৫ PM

bdmorning Image Preview


 নেসারুল হক খোকন।। 

সুমিত চৌধুরী। পদে তিনি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। সার্ভিস রেকর্ড বলছে, পুলিশের ২৫ ব্যাচের এই কর্মকর্তা যেখানেই গেছেন সেখানেই একটি অঘটন ঘটিয়েছেন। ফরিদপুর নৌপুলিশের এসপি আবদুল্লাহ আরেফ পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে তার বিরুদ্ধে মাদক সেবনসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ করেন।

এর দু’দিনের মাথায় ফরিদপুরে পরিবেশ অধিদফতরে গিয়ে উপ-পরিচালক (সিনিয়র সহকারী সচিব) ড. লুৎফুর রহমানকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। প্রশাসন ক্যাডারের ২০ ব্যাচের এই কর্মকর্তার ওপর শারীরিক নির্যাতনের বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নেয়নি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এ ঘটনায় সম্প্রতি তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। পুলিশ সদর দফতর থেকে এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এছাড়া ডোপ টেস্টে সুমিতের মাদক সেবনের আলামত পেয়েছে পুলিশ।

সুমিত চৌধুরী কর্তৃক শারীরিক নির্যাতনের শিকার ড. লুৎফুর রহমান বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ‘৩০ জুন বিকাল ৪টার দিকে আকস্মিকভাবে অফিসে ঢোকেন সুমিত চৌধুরী। এসেই কোনো কথাবার্তা না বলেই সরাসরি আমার কক্ষে প্রবেশ করে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকেন। একপর্যায়ে আমাকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করে বসেন। আকস্মিক এমন ঘটনায় আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি। গুলি করে দিতে পারে এমন ভয় থেকে আমি দৌড়ে অফিস থেকে বের হয়ে যাই। এরপর অ্যাকাউন্টস অফিসার হানিফ উদ্দিন, পরিদর্শক তুহিন আলম ও আমার গাড়িচালককেও মারধর করেন।’

পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কেন এমন আচরণ করলেন- জানতে চাইলে লুৎফুর রহমান বলেন, ‘এর আগে তার সঙ্গে আমার পরিচয়ও ছিল না। কেন তিনি অফিসেই ঢুকলেন আর কেনইবা এভাবে আমরা শারীরিকভাবে আক্রান্ত হলাম বুঝে উঠতে পারছি না। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।’

এদিকে ওই ঘটনার দু’দিন আগে পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ফরিদপুর নৌপুলিশের এসপি আবদুল্লাহ আরেফ। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ‘ফরিদপুর অঞ্চলের অনেক পুলিশ সদস্য সুমিত চৌধুরীর মাতাল অবস্থায় চলাফেরা, গালাগালির কারণে এলাকায় থাকতে চাচ্ছে না।

গত ১০ জুন গভীর রাতে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় দৌলতদিয়া নৌফাঁড়িতে গিয়ে অফিসার ও ফোর্সদের সঙ্গে অসংলগ্ন ও অস্বাভাবিক আচরণ করেন। এ ছাড়া তিনি প্রায়ই মদ্যপ অবস্থায় বিভিন্ন নৌ থানা ও ফাঁড়িতে গিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করেন। অফিসাররা তার বেপরোয়া আচরণ নিয়ে অভিযোগ করছে।

এমনকি বিভিন্ন জেলা পুলিশের এসপিও বিষয়টি আমাকে অবহিত করেন। ফরিদপুর অঞ্চল অফিসের ৫ তলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করলেও আলাদা রুমে নিয়মিত মাদক সেবন করেন। ২৮ জুন বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মদ্যপ অবস্থায় দৌলতদিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে গালাগালি করেন। ১৮ জুন ফরিদপুর কোতোয়ালি পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন রুমে বসে মদ পান করে। এ ছাড়া ২১ জুন সুমিত চৌধুরীকে নৌ পুলিশ অঞ্চল অফিসে বসে মাদকদ্রব্য সেবন করেন। এ সময় ইয়াবা জাতীয় দ্রব্যের প্রকট গন্ধ পান কনস্টেবল মো. ইলতাজ উদ্দিন।’

এসপি আবদুল্লাহ আরেফ লিখিত অভিযোগে আরও জানান, ইতোপূর্বে মাদক ও নেশা জাতীয় দ্রব্যের সংশ্লিষ্টতাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে সুমিতকে নৌপুলিশ বরিশাল থেকে ফরিদপুরে বদলি করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিনা কারণে ঘাট সংলগ্ন জেলেদের মারধর ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগও রয়েছে।

এদিকে পুলিশের আরেকটি সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে মাতলামি করা অবস্থায় গণপিটুনির শিকার হন। এ সময় তাকে লোকজন পুলিশ অফিসার হিসেবে চিনতে পারেনি। কয়েকজন পথচারী ও স্থানীয় দোকানদারের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেন তিনি। তাই তারা সুমিত চৌধুরীকে গণপিটুনি দিতে শুরু করেন।

গভীর রাতে রাস্তার ওপর হইচইয়ের খবর পেয়ে রাজপাড়া থানার ডিউটি অফিসার ব্রজ গোপাল কর্মকার পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান এবং জনতার হাত থেকে সুমিত চৌধুরীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন।

খবর পেয়ে পরে জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা সেখানে যান। ভোররাতে তাদের হাতে সুমিত চৌধুরীকে হস্তান্তর করা হয়। ২০১৮ সালের ১ জুন এ ঘটনা ঘটে। এরপর খবর জানাজানি হলে পুলিশের এই কর্মকর্তাকে নৌপুলিশে বদলি করা হয়। তিনি জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছিলেন।

সূত্র জানায়, এডিশনাল এসপি সুমিত চৌধুরীর বিরুদ্ধে অফিসে বসে মাদক সেবন, মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা ও অধীনস্থদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করাসহ আরও কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ ছিল। এসব অভিযোগের কারণে তাকে নৌপুলিশে বদলি করা হয়। বদলির এই আদেশ হাতে পাওয়ার পর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সুমিত চৌধুরী। এর মধ্যে এসপির সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেন।

১ জুলাই সুমিত চৌধুরীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনও জারি হয়।

এতে বলা হয়, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮-এর বিধি ১২ (১) অনুযায়ী সুমিত চৌধুরীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা সমীচীন হওয়ায় এতদ্বারা তাকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হল। সাময়িক বরখাস্তকালে পুলিশ অধিদফতরে সংযুক্ত থাকবেন এবং বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস রুলস মোতাবেক খোরাকি ভাতা পাবেন।

ফরিদপুরে পরিবেশ অধিদফতরে গিয়ে কেন একজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে আক্রমণ করলেন জানতে চাইলে সুমিত চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ‘ভাই আসলে এটা ভুল বোঝাবুঝি থেকে হয়েছে।’

নৌপুলিশের এসপি আপনার বিরুদ্ধে সরাসরি মাদক সেবন এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ করেছেন, বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন, জানতে চাইলেন বলেন, ‘আমি ওনার (এসপি) বিরুদ্ধে ২২ জুন আইজি স্যারের কাছে অভিযোগ করেছিলাম। সেই আক্রোশে আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করে থাকতে পারেন।

কী অভিযোগ করেছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্যার নিয়মিত অফিসে আসেন না। বকাবকি করেন, এসব।’ পুলিশ হাসপাতালে ডোপ টেস্ট করে আপনি মাদক সেবন করেন এমন অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পুলিশ প্রশাসন। জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমার জানা নাই।’

যুগান্তর থেকে সংগৃহীত 

Bootstrap Image Preview