Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ মঙ্গলবার, মার্চ ২০২৪ | ৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

করোনার সাহসী যোদ্ধা সাংবাদিক রাসেলের মানবিকতার উপাখ্যান

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ মে ২০২০, ০৯:৩০ PM
আপডেট: ১৭ মে ২০২০, ০৯:৩০ PM

bdmorning Image Preview
সাংবাদিক রাসেল


আমি ঝুঁকি নিয়েছি জীবনের, ঝুঁকি নিয়েছি মায়ার বাঁধন ছিন্নের ! সচেতন করতে আপনাদের ! ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন, করোনা থেকে নিজে বাঁচুন, রক্তে কেনা প্রিয় জম্মভুমিকে বাঁচান এই ভাবে জনগণের ধারে ধারে গিয়ে সচেতন করছেন সাইফুর রহমান রাসেল।

চলনে বলনে কর্মে কথনে এক অতলস্পর্শী মানবিকতার সচেতনতাযোদ্ধা চিরসবুজ এই তরুণ। সারাবাংলার মানুষ যখন করোনার মরণঘ্যাতি থাবার ভয়াবহকতায় ব্যাপারে ছিল অন্ধকারে, উদাসীন ছিল করোনা সংক্রমন বিষয়ে, সাবধানতা কিংবা সচেতনতা ছিল গাণিতিক দুরত্বে! ঠিক সেই সময় থেকেই নির্ঘুম ভাবনা ছিল তাঁর করোনাভাইরাস নিয়ে, কিভাবে এই বৈশ্বিক মহামারি থেকে প্রানের জেলা নোয়াখালীর মানুষগুলোকে সচেতন করে তোলার মাধ্যমে করোনার ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করা যায়।

জীবনের জন্য, প্রিয় জেলার অসচেতন মানুষগুলোর ভালো থাকার জন্য, অবুঝদের বুঝিয়ে প্রাণের নোয়াখালীকে করোনামুক্ত রাখার জন্য, পাখির বুলির মতো গলা ফাটিয়ে ছোট্ট একটা হ্যান্ড মাইক হাতে নিয়ে দিনের শুরুটা করেন এই কর্মোদীপ্ত, তারুণ্যদীপ্ত মানবিক এই তরুণ । যেমনি করে পাখিরা ভোরের জানান দেয় কিচিরমিচির সুরে, মোয়াজ্জিন জাগিয়ে তোলেন সুমধুর আজানের ধ্বনিতে, সূর্য্য দিনের আভাস দেয় রাঙা প্রভাতী সাঁঝে। ঠিত তেমনি তার অবিরাম সচেতনতার বুলিতে দিনের শুরুটা করেন মানুষকে বাঁচাতে! গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে,  প্রাণের নোয়াখালির পাড়ার গলি কিংবা শহর থেকে মেঠো প্রান্তরে ছুটে চলেছেন অবিচল, দিনশেষে চোখে মুখে ক্লান্তির চাপ আর সঙ্গী শুধু একটি ছোট্ট হ্যান্ড মাইক।

সূর্য্য আর বিনা বেতনের এই করোনা সচেতনতা যোদ্ধার একসাথেই উঠা, দু’জনেই অবিরাম ব্যস্ত সারাদিন, সন্ধ্যার আগেই সূর্য্যটা যায় বিশ্রামে কিন্তু সাংবাদিক রাসেলের বিশ্রামের সময় হয় মধ্যরাতের পরে নিদারুন উৎকণ্ঠা নিয়ে ! কিভাবে এই বৈশ্বিক মহামারি থেকে প্রানের নোয়াখালিকে মুক্ত রাখা যায়,অবুঝ মানুষ গুলোকে বুঝিয়ে ঘরে রাখা যায়!

হার না মানা প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসকে পাত্তাই দিচ্ছেন না নোয়াখালীর এই করোনা সচেতনতা যোদ্ধা।  জীবন বাজি রেখেই চলছে তার করোনার বিরুদ্ধে সচেতনতা সংগ্রাম। পরিবার পরিজন যেন তার কাছে তুচ্ছ। অকুতোভয় এ  যোদ্ধা গত দেড় মাস ধরেই চালিয়ে যাচ্ছেন করোনা সংক্রমনের বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই। সাধারন মানুষকে সচেতন করতে যেন একটুও ফুরসত নেই । নিজের পরিবার,সুজন,প্রিয়জন কারো কথা না ভেবেই সেবাকে মুল ব্রত ধরেই এগিয়ে চলেছেন এই সংগ্রামী যুবক।

অবশ্য এই পথে বাঁধাও কম না। অসুস্থ মায়ের ভালবাসার শাসনের বকুনি,মাতৃ স্নেহের চিরন্তন উৎকণ্ঠা,মায়াবী বন্ধনের নির্মল ভালোবাসা, সাথে জান্নাতি দোয়া। প্রিয় অর্ধাঙ্গীনির ভালোবাসার অনুরোধ, কিছু অনুযোগ, নিজের দিকে খেয়াল রাখো, নিজের প্রতি যত্নবান হও! আমার আর আমাদের একমাত্র সন্তানের পৃথিবী একমাত্র তুমি। যদি তোমার কিছু হয়ে যায়! তাহলে আমরা কোথায় যাবো, কোন কুলে হবে আমাদের নোঁঙর।

এর মাঝে স্বার্থাণ্বেষী বা অর্বাচীন দুর্বৃত্তরা, যারা ভালো কাজের বিরোধিতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়েছে । তারা এখানেও স্বার্থের গন্ধ পায় নিজেদের মতো করে। আতশী কাচে খুঁজেও করোনা সচেতনতাযোদ্ধা রাসেলের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সম্পৃক্ততা পায় না । এখানে স্বার্থটা যে প্রাণের নোয়াখালির, এখানকার ১ কোটি নোয়াখালী প্রিয় ভাষাভাষী জনগণের । এই ধ্রুব সত্যটা বুঝার পরেও কিছু মানুষের সহজাত বিরোধীতা সবসময়ই অব্যাহত। কিন্তু কে শুনে কার কথা, মানুষ ও মানবতার কল্যানে এ যে এক একরোখা যোদ্ধা। মানুষের ভালো চাওয়া, মানবতার পথে হাঁটা এটা যে তাঁর পূর্বপুরুষীয় নেশা । তাই শত বাধা উপেক্ষা করেও করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতার জন্য এই করোনা রোধী সম্মুখ যোদ্ধা আরেকজন বিরল!

সাংবাদিক রাসেলের উল্লেখযোগ্য  কার্যক্রমঃ

গত ২৪ মার্চ ডিসি, নোয়াখালী ও এসপি মহোদয়ের উদ্ভোধনের মাধ্যমে বৃহত্তর নোয়াখালীর জনপ্রিয় সংগঠন “নিরাপদ নোয়াখালীর চাই” এর আয়োজনে  করোনা বিষয়ক সচেতনতা র‌্যালি ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে পথচলা শুরু হয় করোনা ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা সাংবাদিক রাসেলের।

বৈশ্বিক করোনার হট স্পট ইতালি ও অন্যান্য দেশের প্রবাসী যারা এই সময় দেশে এসেছেন ,তাঁদের হোমকোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করণ, প্রশাসনের আন্তরিক সহযোগিতায় দেশে করোনার হট স্পট খ্যাত ঢাকা নারায়ণগঞ্জ ও গাজী পুর থেকে যারা গ্রামে ফিরেছেন তাদের হোমকোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করণ। চায়ের দোকান, সেলুন পাড়া মহল্লা হাট বাজারে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করণে তাঁর সচেতনতা বিষয়ক ভূমিকা সারা বাংলাদেশে দারুন সাড়া ফেলেছে।

সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের কথা এই সময় আমরা প্রায় ভুলেই আছি, যাদের সংক্রমণের সম্ভাবনা আর সবার চেয়ে বেশি, কিন্তু সাংবাদিক রাসেল তাদের কথা ভুলেননি বরং রেলওয়ে স্টেশনের পথশিশুদের নিরাপদ দূরত্ব নিশ্চিত করে সংগঠনের সহযোদ্ধাদের আন্তরিক সহযোগিতায় তাদেরকে খাবার খাইয়ে অতি আদরের সাথে করোনা মহামারী বিষয়ে সচেতন করে তোলা, যা বর্তমান পেক্ষাপটে অতুলনীয়।

সংগঠনের কিছু সদস্যদের অর্থায়নে ও সাংবাদিক রাসেলের কষ্টে উপার্জিত অনুদানে প্রায় ১৫০টি অসহায় পরিবারের হাতে খাবার সমগ্রী তুলে দেন নিজ দায়িত্বে। নিরাপদ নোয়াখালি চাই সংগঠনের ব্যানারে অসংখ্য  সেচ্চাসেবক করোনা সচেতনতা বিষয়ক সম্মুখ যোদ্ধার সুযোগ্য কান্ডারী তিনি । যিনি নিরাপদ নোয়াখালি চাই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও জনপ্রিয় চ্যানেল আরটিভির সাবেক সিনিয়র বার্তা সমন্বয়ক । প্রতিনিয়ত এই যোদ্ধারা মাঠে আছেন তাঁর যোগ্য প্রতিনিধি হয়ে। যারা সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন ।

সাংবাদিক রাসেল তার কার্যক্রম নিয়ে বলেন, 'হয়তো আমার মত একজন মানুষের সর্বোচ্চ সাধ্যের সবটুকু দিয়েও রুখে দেওয়া যাবে না প্রাণঘাতী মহামারি করোনার সংক্রমণ । এক্ষেত্রে দরকার সবার সমন্বিত সচেতনতা, দায়িত্বশীল প্রচেষ্টা, সর্বাধিক সাবধানতা। তাহলেই  ইন-শা-আল্লাহ আমরা করোনামুক্ত বাংলাদেশের প্রত্যাশা করতেই পারি, খুব শিগগিরই করোনামুক্ত ভোরে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারবো সবার দায়িত্বশীল প্রচেষ্টাই এই আমার আত্মিক বিশ্বাস।'

অপরদিকে, নিজস্ব স্বকীয়তায় বরাবরের মতোই দুর্বার এই  করোনা সচেতনতা যোদ্ধা ইতোমধ্যে সমগ্র নোয়াখালীর তরুণ প্রজম্মের কাছে হয়ে উঠেছেন প্রিয় থেকেও বেশী প্রিয়। শুধু তাই নয়, তার ক্লান্তিহীন কর্মযজ্ঞ দিয়ে জেলার প্রতিটি মানুষের মাঝে আস্থা, ভরসা আর ভালোবাসার একটি জায়গাও তৈরি করে নিয়েছে তিনি। শুধু তাই নয়, করোনার মধ্যে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিম্নবিত্ত মানুষের সঙ্গেও তৈরি করেছেন ভালোবাসার এক মেলবন্ধন। 

Bootstrap Image Preview