Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

চুল বা দাড়ি থেকে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা কতটা?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ এপ্রিল ২০২০, ০৯:১১ PM
আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২০, ০৯:১১ PM

bdmorning Image Preview


যদি সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা হয়, তবে চুল বা দাড়ি থেকেও সংক্রমণের সম্বাভনা নেই। কেউ যদি আপনার মাথার পিছনে হাঁচে বা কাশে, আর তাতে যদি চুলে ড্রপলেট পড়েও, তাতে সংক্রমণ ছড়ানোর মতো নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাইরাস থাকতে হবে। আপনি যদি চুলের সেই অংশে হাত দেওয়ার পর আপনার মুখের কোনও অংশ স্পর্শ করেন, তা হলেও সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা অনেকটাই কম। কারণ ততক্ষণে চুলের ওই অংশে আর ততটা ভাইরাস থাকবে না।

কাপড়-জামার স্বাভাবিক কাচাকাচি কি যথেষ্ট? কাপড় ঝাড়লে, তা থেকে কোনওভাবে বাতাসে ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে কি?

করোনাভাইরাসের চারপাশে রয়েছে ফ্যাটি মেমব্রেন, যা সাবানে নষ্ট হয়ে যায়। তাই সাধারণ লন্ড্রি ডিটারজেন্ট ব্যবহার করে জামাকাপড় ধোয়া ও শুকিয়ে নেওয়া যথেষ্ট। বাড়িতে অসুস্থ ব্যক্তি থাকলে তাঁর জামাকাপড়ও অন্যদের জামাকাপড়ের সঙ্গে একসঙ্গেই কাচতে পারেন, তবে একটু বেশিক্ষণ ড্রায়ারে রাখতে হবে। এর ফলে ভাইরাস থাকলেও তা নষ্ট হয়ে যাবে। আর এই ভাইরাস কাপড়ের থেকে স্টিল বা প্লাস্টিকের মতো কঠিন জিনিসে বেশিক্ষণ থাকে, ফলে, কাপড় থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা কম।

​কাপড় এবং অন্যান্য জিনিসে ভাইরাসের অস্তিত্ব কতক্ষণ?

‘দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে’র সমীক্ষা বলছে, শক্ত, ধাতব বা প্লাস্টিকের কোনও বস্তুর উপর ভাইরাস তিন দিন অবধি থাকতে পারে। কার্ডবোর্ডে থাকতে পারে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত। কাপড়ের উপর আলাদা করে কোনও পরীক্ষা না হলেও কার্ডবোর্ড থেকে কাপড়ে ভাইরাস লাগার সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেটা যদি হয়, কাপড়ে ভাইরাস বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারবে না। ২০০৫ সালে সার্সের ভাইরাস নিয়ে করা একটা পরীক্ষা এই দাবিকে আরও জোরদার করে। সার্সের ভাইরাস লোড কাগজ এবং সুতির গাউনের উপর ফেলে পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছিল, কম ভাইরাস লোড পাঁচ মিনিট, মধ্যম মাত্রার ভাইরাস লোড তিন ঘণ্টায় আর প্রচুর ভাইরাস লোডও ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কাগজ ও কাপড়ে ভাইরাসের কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলার গতি সবচেয়ে বেশি।

​বাড়িতে আসা ক্যুরিয়ার, পার্সেল বা সংবাদপত্র থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে?

ক্যুরিয়ারে আসা কিছু, প্যাকেজ বা সংবাদপত্র থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা নেই। সংবাদপত্র থেকে কারও সংক্রমণ ঘটেছে, এমন কোনও তথ্য-প্রমাণ মেলেনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (WHO) সাফ জানিয়ে দিয়েছে, খবরের কাগজে আলাদা করে কোনও ঝুঁকি নেই। ইন্টারন্যাশনাল নিউজ মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের (INMA) তরফেও সে কথাই বলা হচ্ছে। ইনমার সিইও আর্ল জে উইলকিনশন ট্যুইট করে আগেই বলেছেন, খবরের কাগজ কেন, সারা দুনিয়ায় কোনও সারফেস থেকেই করোনা সংক্রমণের কোনও নজির নেই। হু, দ্য জার্নাল অফ হসপিটাল ইনফেকশন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজ থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে উইলকিনশন বিশ্ববাসীকে আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, ভয় নেই খবরের কাগজে।

​দরজা, ফ্রিজ বা আলমারির হাতল থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা কতখানি?

কোনও ব্যক্তি যদি করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন, আর তার যদি হাঁচি বা কাশি থেকে ড্রপলেট কোনওক্রমে হাতে চলে যায় তাহলে বিপদ। সেই হাত দিয়ে ওই ব্যক্তি যদি কোনও কিছু স্পর্শ করে তাহলে সেই জিনিসটার সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেকটাই। দরজার বা ফ্রিজের বা আলমারির হাতল তখন বিশেষভাবে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এই ক্ষেত্রে সবথেকে নিরাপদ থাকার উপায় হল, এ ধরনের কোনও কিছু স্পর্শ করার পরই ভালো করে হাত ধুয়ে ফেলা। নিয়মিত এবং ঘন ঘন হাত ধোয়া এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায়।

​এটিএম থেকে তোলা টাকা, কারও কাছ থেকে ফেরত নেওয়া টাকা থেকে কি সংক্রমণ ছড়াতে পারে?

ব্যাংক বা এটিএম থেকে তোলা টাকায় জীবাণুর উপস্থিতি মিলেছে বহু আগেই। এমনকী বিশেষজ্ঞরা বারংবারই সতর্ক করে থাকেন যে, নোটের মাধ্যমে নানা ধরনের সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়তে পারে। ২০১৫ সালে দিল্লির ইন্সটিটিউট অব জিনোমিকস অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজি-র বিজ্ঞানীরা তাদের এক গবেষণার পর জানান, ভারতে চালু নোটগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা করে তাতে কমপক্ষে ৭৮ রকমের বিপজ্জনক মাইক্রোবের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। আর তার থেকে মারাত্মক সব রোগ ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে থাকেন তাঁরা। তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে, অনেক মানুষের মধ্যেই থুতু দিয়ে নোট গোনার অভ্যাস রয়েছে। তাই যেখান থেকেই টাকা নিন বা স্পর্শ করুন না কেন, পরবর্তীতে হাত খুব ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। পারলে যত ঘন ঘন সম্ভব, ততবারই হাত ধুয়ে ফেলা ভালো।

​কোথাও থেকে ফেরার পর জুতো কি স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করা প্রয়োজন?

জুতোর সোলে ভাইরাস থাকা অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু তা থেকে দেহে সংক্রমণের সম্ভাবনা কম। যদি মনে হয়, ওয়াশেবল জুতো ধুয়ে ফেলতে পারেন। স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার মোটেই করবেন না, কারণ যে কাপড় বা তুলোয় স্যানিটাইজার লাগিয়ে পরিষ্কার করছেন, তা থেকে আপনার হাতে জীবাণু লাগার সম্ভাবনা বেশি। তার চেয়ে ভালো, বাড়ির ভিতরে জুতো ঢোকাবেন না। বাড়িতে যদি হামাগুড়ি দেওয়া বাচ্চা বা অসুস্থ কেউ থাকেন, তা হলে বাড়ির ভিতরে জুতোর ব্যবহার বন্ধ রাখাই ভালো।

​বাড়ির বাইরে হাঁটা বা শরীরচর্চা কতটা নিরাপদ?

কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের বক্তব্য, অন্য ব্যক্তিদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখলে বাইরে বেরিয়ে হাঁটা বা শরীরচর্চা করতেই পারেন। সংক্রামিত কারও শ্বাস বা কথা বলার সময় নিঃসৃত ড্রপলেট বাতাসে নিমেষে মিলিয়ে যায়, ফলে ভিড় জায়গায় না গিয়ে, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখলে বাইরে যেতেই পারেন, সেক্ষেএে ফিরে পোশাক বদলেরও প্রয়োজন নেই।

সূত্র: ইন্ডিয়ান টাইমস 

Bootstrap Image Preview