Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘ছুটির আমেজে’ হাওয়া খেতে খেতে অলিগলিতে আড্ডা দিচ্ছে একদল মানুষ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ এপ্রিল ২০২০, ০৫:০১ AM
আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২০, ০৫:০১ AM

bdmorning Image Preview


করোনা আতঙ্কে নিস্তব্ধ গোটা বিশ্ব। প্রায় তিনশ কোটি মানুষ এখন গৃহবন্দি। বাংলাদেশেও প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে । তবে সে তুলনায় মানুষের মধ্যে বাড়ছে না সচেতনতা ও স্বাস্থ্যসুরক্ষা নির্দেশনা মানার প্রবণতা। রাজধানীর মানুষ সাধারণ ছুটি ‘ছুটির আমেজেই’ কাটাচ্ছে। সামান্য বা অকারণে ঘরের বাইরে বের হচ্ছে মানুষ।

কেউ বাজার করতে, কেউ রোগী দেখতে, ধূমপান করতে, কেউ ন্যায্যমূল্যের চাল-ডাল-তেল কিনতে বের হচ্ছেন। ফাঁকা রাস্তার আনন্দ উপভোগ করতে বা হাওয়া খেতেও বের হচ্ছেন কেউ কেউ। আবার বহু মানুষ বের হচ্ছেন ত্রাণ পাওয়ার আশায়। তবে কোথাও সামাজিক দূরত্ব মানার প্রবণতা তেমন দেখা যাচ্ছে না।

রাজধানীর মিরপুর, সেনপাড়া, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, মালিবাগ, মৌচাক, তালতলা, গাবতলী, শ্যামলী, কল্যাণপুর, পীরেরবাগ, রামপুরা ও মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বুধবার দেখা গেছে এমন চিত্র। মসজিদে জামাতে নামাজ আদায়ে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এদিনও কোথাও কোথাও বাড়ির ছাদে জামাত করে নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে।

আবার বাইরে বেরোনো কয়েকজন জানিয়েছেন, একঘেয়েমি কাটাতে বাইরে বেরিয়েছেন তারা। এদিন রাস্তা বা মহল্লায় পুলিশের তৎপরতা কম চোখে পড়েছে। আর চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন, বেশিরভাগই রোগী দেখা, ওষুধ কেনা ও কাঁচাবাজার করার অজুহাত দিচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ড. গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখাটা কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়, সঠিকও নয়। এতে সংক্রমণের সমূহ শঙ্কা রয়েছে। যেহেতু ঢাকাতে সংক্রমণ বাড়ছে, সেহেতু জনগণকে অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব মেনেই কেনাকাটা করতে হবে। কেননা কার মধ্যে করোনাভাইরাস আছে আর কার মধ্যে নেই- সেটি তো বোঝার উপায় নেই।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়কগুলোতে ব্যক্তিগত গাড়িই ছিল বেশি। তাছাড়া রিকশা, সিএনজিও চলাচল করেছে। গলিগুলোতে মানুষের মধ্যে জটলা পাকিয়ে খোশগল্প করতে দেখা গেছে। আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বেতারের পাশের গলিতে ট্রাকে করে নায্যমূল্যের চাল, ডাল ও সয়াবিন তেল কিনতে মানুষের ভিড় দেখা গেছে।

শ্যামলীতে প্রধান সড়কের উপরই ন্যায্যমূল্যের দোকানে গাদাগাদি করে চলেছে কেনাকাটা। এ সময় দুধ বিক্রেতা মো. আবুল হোসেন জানান, বাধ্য হয়ে ও প্রথমবার তিনি ন্যায্যমূল্যের ট্রাকসেল পয়েন্ট থেকে তেল ও চাল কিনেছেন। এখন বাসায় বাসায় কেউ আর দুধ নিচ্ছেন না।

তার আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ অবস্থা। গাদাগাদি করে কেন কিনছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি লাইনের শেষে ছিলাম। কিন্তু আমার পরে যারা এসেছেন তারা আগেই কিনেছেন। এ অবস্থা দেখে আমিও ঠেলাঠেলি করেই কিনলাম। করোনার ভয় লাগছে কিনা?

তিনি বলেন, ভয়তো আছেই কিন্তু কিছু করার নেই। মিরপুর-১৩ সি ব্লকের এক বাসিন্দা যুগান্তরকে জানান, বিকাল হলেই এলাকার ছেলেরা বাইরে বেরিয়ে আসছে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে, সিগারেট ফুঁকছে। তবে এই এলাকার কমিশনার কিছু স্বেচ্ছাসেবক রেখেছেন।

তারা এসে তাদের বাসায় ঢুকানোর চেষ্টা করেন মাঝে মধ্যে। তারা চলে যাওয়ার পর আবারও বেরিয়ে আসছে ছেলেরা। মিরপুর-১৩ কাঁচাবাজার ও সেনপাড়ার আমতলী বাজারেও ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে।

মতিঝিল কলোনি বাজার, রামপুরা বাজার, শেওড়াপাড়া বাজার, তালতলা বাজার, মিরপুর-১ বাজারে ব্যাপক ক্রেতা সমাগম ছিল। ক্রেতাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব মানার কোনো প্রবণতা দেখা যায়নি। এ সময় কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী রাসেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাধ্য হয়েই বাজারে আসতে হচ্ছে।

কেউই সামাজিক দূরত্ব মানছেন না। আগারগাঁও ও শ্যামলীর মাঝামাঝি বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সামনে চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন করছিলেন শেরেবাংলা নগর থানার এএসআই মো. আহসান হাবিব। তিনি যুগান্তরকে জানান, রাস্তায় একজনের বেশি লোক দেখলেই আমরা যানবাহন থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছি।

উপযুক্ত কারণ দেখাতে না পারলে অনেককে ফিরিয়েও দিচ্ছি। কিন্তু সাধারণ মানুষকে খুব বেশি সচেতন মনে হচ্ছে না। তবে আমরা থানা থেকেই গাড়িতে মাইক বেঁধে জনগণকে সচেতন করতে কাজ করছি। যখন তার সঙ্গে কথা হচ্ছিল তখনই রিকশায় করে দু’জন (স্বামী-স্ত্রী) যাচ্ছিলেন।

তাদের থামান পুলিশ। এ সময় জিজ্ঞাসা করায় রিকশায় বসা আবুল হোসেন প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে জানান, তিনি তার ভাইকে হাসপাতালে দেখতে নারায়ণগঞ্জ থেকেই রিকশায় আসছেন। তবে কোন হাসপাতালে আছে সেটি বলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। দুপুর ১২টার দিকে রামপুরা ব্রিজ থেকে মালিবাগ, মৌচাক ও মগবাজার এলাকায় রাস্তায় যানবাহন চলতে দেখা গেছে।

রিকশাও চলতে দেখা গেছে। রিকশাচালক কামরুল জানান, যাত্রী বেশি পাচ্ছি না। কিন্তু পেট তো চালাতে হবে। তাই বাধ্য হয়েই রাস্তায় নেমেছি।

বেশিরভাগ রাস্তার পাশেই জটলা করে ত্রাণের আশায় নিুআয়ের মানুষকে বসে থাকতে দেখা গেছে। রংমালা (৫৫) নামে একজন জানান, বিভিন্ন স্থান থেকে কচুশাক তুলে এনে বিক্রি করতেন তিনি। এখন সে উপায় নেই। ফলে ত্রাণের আশায় সকাল থেকেই ঘুরছেন রাস্তায় রাস্তায়।

কোনো লাভ হয়নি। শেষপর্যন্ত শেরেবাংলা নগর থানায়ও গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ স্থানীয় নেতাদের কাছে যেতে বলেছেন। এ সময় জটলা পাকানো আলেকজন ও সালেহা বলেন, আমরা সকাল থেকে কিছুই পাইনি। আজ কী খাব জানি না। পশ্চিম শেওড়াপাড়ার শামীম সরণির গলি থেকে শাপলা সরণি পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে সারাদিনই ভ্যানগাড়িতে সবজি বিক্রি করতে দেখা গেছে।

সকালে এসব ভ্যানের সামনে বেশ ভিড়ও ছিল। কাউকে সামাজিক দূরত্ব মানতে দেখা যায়নি। দুপুরে ওই গলিতে স্থানীয় যুবলীগের দুজন কর্মীকে দেখা গেছে হ্যান্ডমাইক নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে। জানতে চাইলে মো. জসিম উদ্দিন ও মো. রুবেল জানান, আমরা জটলা বা অহেতুক ঘোরাঘুরি দেখলে তাদের ঘরে যাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

তবে অনেকেই তা মানছেন না, বন্ধুদের সঙ্গে খোশগল্পে মেতে থাকছেন। সন্ধ্যায় এই গলিতে প্রায় সাধারণ সময়ের মতোই মানুষকে হাঁটাহাঁটি করতে দেখা গেছে। শেওড়াপাড়ার একটি বাড়ির ছোট্ট ছাদে কয়েকজন মানুষকে জামাতে নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে।

সূত্রঃ যুগান্তর 

Bootstrap Image Preview