বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ‘ফ্লু’ ভাইরাস। শীতে ঠান্ডা-জ্বর আর ‘ফ্লু’ হওয়ার লক্ষণ প্রায় একই। তবে লক্ষণ এক হলেও ঠান্ডাজনিত জ্বর আর ‘ফ্লু’ ভাইরাসের প্রভাব ও প্রতিকার এক মনে করাটা ভুল।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই রোগগুলোর লক্ষণ যেমন আলাদা করেছে তেমনি চিকিৎসা পদ্ধতিও ভিন্ন। তাই সঠিক চিকিৎসার জন্য ‘ফ্লু’ সম্পর্কে জানতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থিত এনওয়াইইউ ল্যাংগন’য়ের ‘মেডিসিন’ বিভাগের সহকারী-অধ্যাপক ভেনেসা রাবি ‘ফ্লু’ ভাইরাস সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট এ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে।
তিনি বলেছেন, উপসর্গ একই রকম হওয়ায় সর্দি-জ্বরকে ‘ফ্লু’য়ের সঙ্গে অনেকে মিলিয়ে ফেলেন। যা বিপদ ডেকে আনতে পারে। ‘ফ্লু’ আর সাধারণ সর্দি-জ্বরের মধ্যে পার্থক্যটা বুঝতে হবে। কারণ সাধারণ সর্দি-জ্বরের তুলনায় ‘ফ্লু’ অনেক বেশি ক্ষতিকর।
‘ফ্লু’ চিনবেন যেভাবে
ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুরো সময়টাই ‘ফ্লু’ আক্রান্তের সম্ভবনা সবচেয়ে বেশি। এই রোগের সংক্রমণ হতে পারে যা ভোগাতে পারে এক মাস বা তারও বেশি সময়।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিস’য়ের পরিচালক অ্যান্থনি ফাউসি বলেন, ঠান্ডা-জ্বর শ্বাসনালীর উপরিভাগ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকলেও ‘ফ্লু’ ‘সিস্টেমেটিক ডিজিস’ যা পুরো শরীরকে আক্রান্ত করে।
ফাউসি বলেন, ঠান্ডা লাগলে দুএক দিন গলা ব্যথা হবে, কফ জমে শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা তৈরি হবে। তবে ‘ফ্লু’ একদিনেই রোগীকে কাবু করে ফেলতে পারে।
তিনি বলেন, ‘ফ্লু’য়ের কিছু সাধারণ উপসর্গ হল -জ্বর, শরীরে কাঁপুনি, শরীর ব্যথা যা ঠান্ডা লাগলে নাও হতে পারে। আবার সব ‘ফ্লু’ আক্রান্ত রোগীর জ্বর হয় না। ফাউসি বলেন, ‘প্রচণ্ড অবসাদ ‘ফ্লু’য়ের আরেকটি বিশেষ উপসর্গ। সর্দি-কাশি নিয়েই দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব, এমনকি শরীরচর্চাও করা যায়। তবে ‘ফ্লু’তে আক্রান্ত ব্যক্তির পক্ষে কোনো কিছুই করা সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, সর্দি-জ্বরে মাথাব্যথা হওয়ার মাত্রা বেশ কম, তবে ‘ফ্লু’ হলে প্রচণ্ড মাথাব্যথা হয়। এছাড়া আছে কফ, নাক দিয়ে পানি আসা, হাঁচি, গলা ব্যথা, নাক বন্ধ থাকা ইত্যাদি সমস্যা।
এই রোগ পুরোপুরি সারতে, অর্থাৎ শরীর ব্যথা, অবসাদ ইত্যাদি সারতে কয়েক সপ্তাহ পার হয়ে যেতে পারে।
রোগী ভেদে ওঠার সময়কাল ভিন্ন। আক্রান্ত ব্যক্তি আগে ‘ফ্লু’য়ের টিকা নিয়েছিলেন কিনা তার উপরেও নির্ভর করে রোগের তীব্রতা।
কী করবেন?
১. ‘ফ্লু’তে আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। থাকতে হবে পরিপূর্ণ বিশ্রামে।
২. প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে।
৩.রোগীর হাঁচি-কাশির মাধ্যমে সহজেই ‘ফ্লু’ ভাইরাস ছড়িয়ে যায়। তাই সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
৪.এই রোগ থেকে সুরক্ষা পেতে প্রতিবছর টিকা নিতে পারেন। তবে টিকা নেওয়ার পরও রোগ হতে পারে। কারণ কিছু মানুষের শরীরে টিকা পরিপুর্ণভাবে কার্যকর হয় না।
৫. তবে টিকা নিলেই রোগ হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। যা ভুল ধারণা। রোগের মাত্রা কমবেশি হতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।