রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা গত বৃহস্পতিবার রাতে টেকনাফে যুবলীগের এক নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। নিহত যুবলীগ নেতার নাম ওমর ফারুক (৩০)। হত্যাকাণ্ডের খবরে বিক্ষুব্ধ কয়েক হাজার স্থানীয় বাসিন্দা গতকাল শুক্রবার মহাসড়ক অবরোধ করে। একপর্যায়ে তারা রোহিঙ্গা শিবির ও শিবিরসংলগ্ন কয়েকটি সংস্থার কার্যালয়ে হামলা চালায়।
জাদিমুরা এলাকার বাসিন্দারা জানান, ওমর ফারুক তাঁর নিজ হাতে রোহিঙ্গাদের খাবার দিয়েছেন ও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। তাঁর পৈতৃক সম্পত্তিতে আশ্রয়শিবির তৈরি করে রোহিঙ্গাদের ঠাঁই দিয়েছিলেন। এমনকি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে দেশি-বিদেশি সাহায্য পৌঁছার আগে তিনি প্রতিদিন তাঁর বাড়িতে খাবার রান্না করে রোহিঙ্গাদের কাছে পৌঁছে দিতেন। শেষ পর্যন্ত সেই রোহিঙ্গারাই তাঁকে হত্যা করেছে।
রোহিঙ্গা শিবির থেকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দারা আগে থেকেই করে আসছিল। কিন্তু এবার খোদ আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের ওপর আশ্রিত গোষ্ঠীর একাংশের সরাসরি হামলা ও হত্যাকাণ্ড পুরো পরিস্থিতিকে বদলে দিয়েছে। উত্তেজনা বিরাজ করছে টেকনাফ সীমান্তে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা, রোহিঙ্গা উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে টেকনাফের এক যুবলীগ নেতা নিহত হওয়াকে ঘিরে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিতে পারে।
গতকাল সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবারের প্রত্যাবাসন বন্ধ হওয়ায় শালবাগান, জাদিমুরাসহ চারটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা আনন্দ উল্লাস করে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে ভোজেরও আয়োজন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের একটি দল জাদিমুরা ক্যাম্পের বাইরে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছিল। বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৯টা ৩০ মিনিটের দিকে বাড়ির পাশে নিজেদের পারিবারিক জমিতে কাজে গিয়েছিলেন ওমর ফারুক। তখন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়ারত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপকে তিনি টর্চলাইটের আলোতে দেখার চেষ্টা করেন। এতে রোহিঙ্গা গ্রুপটি ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে তুলে পাহাড়ে নিয়ে যায়। এরপর গুলি করে হত্যা করে তাঁর বাড়িতে সেই খবরও পৌঁছায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা।
রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে যুবলীগ নেতা হত্যাকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুরা ক্যাম্প এলাকা উত্তপ্ত ছিল। সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ, আনসার সদস্য নিয়োজিত রয়েছে।