চারদিকে দেশবিরোধী যড়যন্ত্র, এর মাঝে বাংলাদেশে বন্য পরিস্থিতি ভয়াবহ। দুনিয়ার অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহতার খবরে সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন। এমতাবস্থায় ঢাকা মহানগর উত্তরের মেয়র বলেছেন যে, মশা মারার যে কোম্পানির ওষুধ ছিটানো হতো তা ছিল মানহীন। অন্যদিকে দক্ষিণের মেয়র অফিস বলছে মশা মারার ঐ কোম্পানির ওষুধের মান ঠিক আছে। প্রিন্ট আর ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় দুর্নীতি নিয়ে দুদুক চেয়ারম্যানের দেওয়া বক্তব্য, দিবালোকে রিফাত শরীফকে হত্যা মামলার ১ নং সাক্ষী মিন্নি ইস্যু, ইসকন এর প্রসাদ বিতরণ, আমেরিকায় দুদুকের সহকারী পরিচালক মলয় সাহার স্ত্রী প্রিয়া সাহার আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাছে দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও নিয়ে হৈ চৈ চলছে। কয়েকদিন আগে পদ্মা সেতু তৈরিতে মানুষের মাথা দেওয়া নিয়ে সবাই ছিলেন সরব।
সরকারী সূত্রের বরাতে বিবিসি তার লিড নিউজে বলেছে, বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস এবং সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের মধ্যাঞ্চলের আরও চারটি জেলা প্লাবিত হতে পারে। এ নিয়ে মোট ২২টি জেলা বন্যায় আক্রান্ত হবে। বাংলাদেশের উত্তরের জেলারগুলোর মধ্যে বন্যায় সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা। সমস্যা এত ভয়াবহ হবার পরেও কোন রাজনৈতিক দলের তেমন কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। দেশের আড়াই লাখ এনজিও আছে মাইক্রো ক্রেডিট আর বিভিন্ন ব্যবসা নিয়ে। জন কল্যাণের নামে বিদেশিদের কাছ থেকেই আসছে সিংহভাগ টাকা, কিন্তু যাচ্ছে কোথায় সব? বাংলাদেশে ডেংগুর অবস্থা খুব ভয়াবহ। একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত ২০১ জন। মশার ভয়ে মন্ত্রণালয়ের আগারগাঁও অফিসে যান না সদ্য ডেঙ্গু রোগে ভোগা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। এটা পত্রিকার খবরে বেরিয়েছে। আমেরিকা সরকারের সাথে ডেঙ্গু নিয়ে কাজ করার জন্য অঙ্গীকার করেছে। এর অর্থ দাঁড়ায় এই যে, অবস্থা সত্যিই খুব খারাপ।
দুদুক চেয়ারম্যান আসলে আমলা। তিনি জন আকাংখা বোঝেন না, বোঝেন না নিউজ টুইস্টিং এর ফাঁদ। দুদুক তিনি বললেন, আমি আমার “দায়িত্ব” পালন করতে গিয়ে ‘সরলবিশ্বাসে’ অনৈতিক স্বার্থ ছাড়া যদি কোন কাজ করে থাকি এবং সেই কাজের ফলে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না। এখানে প্রমাণের বিষয় হলো, কাজটি আমি দায়িত্ব হিসেবে করেছিলাম কিনা এবং স্বার্থহীন সরল বিশ্বাসে করেছিলাম কি না।
সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনকালে সরল বিশ্বাসে স্বার্থ হীনভাবে কৃতকর্ম পরবর্তীতে ভুল হিসেবে উদঘাটিত হলে তা অপরাধ কিংবা দুর্নীতি হবে কিনা- ডিসিদের এরূপ এক প্রশ্নের জবাবে জেলাপ্রশাসক সম্মেলনে দুদক চেয়ারম্যান উক্তরূপ ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন আইনের উদ্ধৃতি দিয়ে। ব্যাস, অনলাইন নিউজ পোর্টালে শিরোনাম হয়ে গেল, “সরকারি কর্মকর্তারা সরল বিশ্বাসে দুর্নীতিতে জড়ালে তা অপরাধ হবে না: দুদক চেয়ারম্যান।” আর সেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল!
বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা মামলার ১ নং সাক্ষী মিন্নিকে নিয়ে এমনভাবেই খবর আসছে যে, মনে হচ্ছে সে একাই খুন করেছে তার স্বামী রিফাত শরীফকে। বাকীরা কেউ কিছু করেনি। শুধু মিন্নিকে জবাই করলে, ফাঁসি দিলেই কি সমস্যার সমাধান হবে? মিন্নিদের কে এতদিন পেলে বড় করেছে! তাদের ধরা কি জরুরি না!
এবার ‘ইসকন ফুড ফর লাইফ’ মানে এর প্রসাদ বিতরণ যে খবর এসেছে তা নিয়ে কেউ গভীরে যাচ্ছে না। অনেকেই জানেন না ইসকন কি ? কে তাদের চালায় ? বাংলাদেশে কি তাদের উদ্দেশ্য ? মিডিয়ায় সার্চ দিলেই তো এখন সব পাওয়া যায়, সেই কষ্টটুকু আমাদের মধ্যে কেউ কেউ করতে চান না। ইসকন আসলে সনাতন ধর্মীদের সংগঠন নয়। অভিযোগ আছে যে, ‘এরা আসলে আইএস এর মত সনাতন ধরমের লেবাসে হুদীদের একটি সংগঠন’। আবু রুশদের লেখা---বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানদের কথা- বাংলাদেশে ‘র’ বইয়ে লেখা আছে- ‘ইসকন নামে একটি সংগঠন বাংলাদেশে কাজ করছে। এর সদর দফতর নদীয়া জেলার পাশে মায়াপুরে। মূলত এটা ইহুদীদের একটি সংগঠন বলে জানা গেছে। এই সংগঠনের প্রধান কাজ হচ্ছে বাংলাদেশে উস্কানিমূলক ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি।”. (বই- বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানদের কথা- বাংলাদেশে ‘র’ পৃষ্ঠা:১৭১)
ইসকনের সৃষ্টি কিন্তু ভারতে নয় আমেরিকার নিউইয়র্কে। ৫০ বছর আগে, ১৯৬৬ সালে। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতার নাম ‘অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ’। অবাক হওয়ার মত বিষয়, এ ব্যক্তি ভারতে কোন হিন্দু শিক্ষালয়ে লেখাপড়া করেনি, লেখাপড়া করেছে খ্রিস্টানদের চার্চে। পেশায় সে ছিলো ফার্মাসিউটিকাল ব্যবসায়ী, কিন্তু হঠাৎ করেই তার মাথায় কেন হিন্দু ধর্মের নতুন সংস্করণের ভুত চাপলো, কিংবা কোন শিক্ষাবলে চাপলো তা সত্যিই চিন্তার বিষয়। স্বামী প্রভুপাদ নতুন ধরনের হিন্দু সংগঠন চালু করতেই প্রথমেই তাতে বাধা দিয়েছিলো মূল ধারার সনাতন হিন্দুরা। অধিকাংশ হিন্দুই তার বিরুদ্ধচারণ শুরু করে। কিন্তু সেই সময় স্বামী প্রভুপাদের পাশে এসে দাড়ায় জে. স্টিলসন জুডা, হারভে কক্স, ল্যারি শিন ও টমাস হপকিন্স-এর মত চিহ্নিত ইহুদী-খ্রিস্টান এজেন্টরা’।
ইসকন একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক সংগঠন। সংগঠনটি মুলত এনজিও টাইপ। এরা নিম্নবর্ণের হিন্দুদের দলে ভিড়িয়ে দল ভারি করে। এ কারণে তাদের আস্তানাগুলো হয় নিম্নবর্ণের হিন্দুদের আস্তানার পাশে। যেমন ঢাকা শহরে স্বামীবাগ মন্দিরের পাশে ইসকন মন্দির হওয়ার কারণ, স্বামীবাগে রয়েছে বিশাল মেথর পট্টি। এই মেথর পট্টির নিচুবর্ণের হিন্দুদের নিয়ে তারা দল ভারি করে। সিলেটেও ইসকনদের প্রভাব বেশি। কারণ চা শ্রমিকদের একটি বিরাট অংশ নিচু বর্ণের হিন্দু। এদেরকে দলে নিয়ে সহজে কাজ করে তারা। আমাদের দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এই সংগঠনের সক্রিয় সদস্য বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। বাইরে থেকে ইসকনের কর্মকাণ্ড শুধু নাচ মনে হলেও আদৌ তা নয়। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে-
১) বাংলাদেশে সনাতন মন্দিরগুলো দখল করা এবং সনাতনদের মেরে পিটিয়ে তাড়িয়ে দেয়া। যেমন স্বামীবাগের মন্দিরটি আগে সনাতনদের ছিলো, পরে ইসকনরা কেড়ে আগেরদের ভাগিয়ে দেয়। এছাড়া পঞ্চগড়েও সনাতনদের পিটিয়ে এলাকাছাড়া করে ইসকনরা। ঠাকুরগাও-এ সনাতন হিন্দুকে হত্যা করে মন্দির দখল করে ইসকন। এছাড়া অতিসম্প্রতি সিলেটের জগন্নাথপুরে সনাতনদের রথযাত্রায় হামলা চালিয়েছে ইসকন নেতা মিণ্টু ধর।
২) বাংলাদেশের মসজিদগুলোতে সাম্প্রদায়িক হামলা করা, যাতে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয়। বেশ কয়েক বছর আগে ঢাকাস্থ স্বামীবাগে মসজিদের তারাবীর নামাজ বন্ধ করে দিয়েছিলো ইসকন পুলিশ ডেকে সে কথা হয়তো অনেকের মনে আছে।
৩) বাংলাদেশে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সংগঠন তৈরি করে, উগ্রহিন্দুত্ববাদের বিস্তৃতি ঘটানো।
৪) বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে চাকুরীতে প্রচুর সনাতন ধর্মীরা প্রবেশের অন্যতম কারণ-ইসকন হিন্দুদের প্রবেশ করানোর জন্য প্রচুর ইনভেস্ট করে।
৫) সিলেটে রাগীব রাবেয়া মেডিকলে কলেজের ইস্যুর পেছনে ছিল ইসকন। ইসকন আড়াল থেকে পুরো ঘটনা পরিচালনা করে এবং পঙ্কজগুপ্তকে লেলিয়ে দেয়। বর্তমানে বিচারবিভাগে ইসকনের প্রভাব এখনো মারাত্মক তার অন্যতম কারণ খোদ সাবেক প্রধান বিচারপতি।
বাম ধারা থেকে পল্টি খাওয়া ইসকন সদস্য প্রিয়া সাহা। ‘শাড়ি’ নামক একটি এনিজিওর আড়ালে কাজ করেন। স্বামী মলয় সাহা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)এর সহকারী পরিচালক। প্রিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় ছাত্র ইউনিয়ন করতেন এবং রোকেয়া হলে থাকতেন। তিনি মহিলা ঐক্য পরিষদ’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য গতবছর তাকে মহিলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
প্রিয়া তার এলাকার দলিত সম্প্রদায়কে নিয়ে কাজ করেন এবং নানা রকম বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে এই এনজিওর জন্য বিদেশ থেকে টাকা আনেন। এই যে তার বাড়ী পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ করেছে সেটাও বিদেশ থেকে টাকা আনার ফন্দি। কিছুদিন আগে বাগের হাটের চিতলমারি এবং চরবানিরী সীমান্ত এলাকায় ধান কাটা নিয়ে দুই এলাকার মানুষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষে উভয় এলাকার কিছু লোকের ক্ষতি সাধিত হয়। তিনি সুবিধামত বাড়ীতে আগুন দেয়ার সেই ছবি ব্যবহার করে বলেছেন, তার নিজের বাড়ী পুড়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবি করেছে, প্রিয়া সাহার আসলে তাদের ইসকনের অন্যতম নেতা বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সহায়তায় এই মিথ্যাচারে নেমেছেন। দুর্বলের প্রতি সবলেরা এমন ছোটখাটো অত্যাচার আমাদের উপমহাদেশের গ্রামের সব সময় হয়ে আসছে। এমনকি পাশের দেশ ভারতে ফ্রিজে গরুর মাংস রাখার দায়ে ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী মানুষকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। অত্যাচার এখনো হচ্ছে ভুরি ভুরি। এর পাশেই আবার হিন্দু পুরোহিত অত্যাচারিত মুসলমান মেয়েকে ঘরে ঠাই দিয়েছেন তার নজির আছে সেই ভারতে। বাংলাদেশে এমন ঘটনা নেই তা বলি না, কিন্তু প্রিয়া সাহা যেভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে তাঁর বক্তব্য দিয়েছেন, তার উদ্দেশ্য ভিন্ন, বাংলাদেশকে অকার্যকর ব্যর্থ রাষ্ট্র প্রমাণ করা।
প্রিয়া সাহার দুই মেয়ে কয়েক বছর ধরে আমেরিকায় বসবাস করছেন। প্রিয়া সাহাকে দুদকের অফিসিয়াল গাড়ি ব্যবহার করে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেন তার স্বামী। সকালে এয়ারপোর্ট পৌঁছে ফ্লাইট মিস করেন প্রিয়া, তারপর সেদিন রাতেই আরেকটি ফ্লাইটে তিনি আমেরিকায় রওনা হন। তার বিদায় মুহূর্তে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী আকবর কবিরের কন্যা তথাকথিত মানবাধিকার কর্মী, খুশী কবির। টাকার এতো জোর তাঁর হবার কথা কি?
বাংলাদেশে অনেককেই আমরা তাদের নিজ নিজ ধর্মের প্রতি কঠিন অবিচল দেখে থাকি নানা আচার আচরণে। মুখে আমেরিকার গুষ্ঠি উদ্ধার করেন। কিন্তু আবার আমেরিকা বা ইউরোপের দেশে স্থায়ী হতে অন্য ধর্মের মানুষের সাথে তারা অবলিলায় সংসার বাধে। মানবতাবাদি, জনদরদি হয়ে যায় রাতারাতি। কেউ কেউ আমেরিকার ভিসা পাওয়ার জন্য নাস্তিক হয় আস্তিক থেকে। আবার মধ্যপ্রাচ্যের টাকা পেতে নাস্তিক থেকে আস্তিক হয়, এটা বাংলাদেশ ভারত দুই দেশেই। দেশের প্রধান প্রধান সমস্যা থেকে দৃষ্টি ফেরাতে দেশের উন্নয়ন ব্যহত করতে আবার সুরেন্দ্র কুমার সিনহা গং সক্রিয় তা বুঝতে মহাজ্ঞানী হতে হয় না।
সায়েদুল আরেফিন (সংগৃহীত)