Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

টাকাটা শোধ করা দরকার, একটু কড়া ব্যথার ওষুধ দিয়েন স্যার...

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ জুলাই ২০১৯, ১০:৩৬ PM
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৯, ১০:৩৬ PM

bdmorning Image Preview


ইমার্জেন্সিতে বসে আছি।

রাত বারোটার দিকে একটা ছেলে আসলো।

খোঁড়াতে খোঁড়াতে। ডান পায়ের বুড়ো আঙুলের নখের বেশ বড় একটা অংশ ভাঙা। বললাম, 'কিভাবে হলো'?

উত্তরে বুঝলাম, পেশায় সে হেলপার।

গাড়ির দরজায় দাড়িয়ে ছিলো। পা বাইরে। গাড়িটা চলছিলো রাস্তার পাশ ঘেঁষে। পাশে চলা গাড়িটা সামনে আগানোর জন্য হঠাৎ করে চাপ দিলে, তার ড্রাইভারও গাড়ি সাইড করতে যায়। তখনই পায়ের সাথে রাস্তার আইল্যান্ডারে ছ্যাঁচা লেগে এই অবস্থা।

নখটা তুলে দিয়ে ড্রেসিং শেষে ওষুধ লিখছি। ছেলেটা ডাকলো, 'স্যার'!

মাথা তুলে তাকালাম। 'বলো..'

'কবে থেকে কাজে যেতে পারবো'?

'খুব বেশি হলে তিন-চার দিন পর থেকেই'

'কিন্তু..'

'কিন্তু কী?’

'আমি একজনের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়ে অনার্সের ফর্ম ফিলআপ করছি তো! দেরি হয়ে যাবে। টাকাটা শোধ করা দরকার। একটু কড়া ব্যথার ওষুধ দিয়েন..'

লেখা বাদ দিয়ে কলম তুলে কিছুক্ষণের জন্য চুপ করে বসে থাকলাম। বুঝলাম, ছেলেটার জন্য বুকের গহীনে কোথাও এক সমুদ্র শ্রদ্ধা জমা হচ্ছে।

আবার ভাবলাম, কিছুক্ষণ আগেই তো ১৪-১৫ বছরের একটা মোটামুটি অভিজাত পরিবারের মেয়ে এলো বাবার সঙ্গে অভিমান করে দশ-পনেরোটা ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে। মিনিট দশেক আগে-পরে আসা এই দুই দু'টো মানুষের মধ্যে কত্তো তফাৎ!

শুধু প্রার্থনা, খেটে খাওয়া এমন পরিশ্রমী মানুষ দিয়ে আমাদের দুনিয়াটা ভরে যাক। ওদের উষ্ণ নিঃশ্বাসে ছেয়ে থাক আকাশ।

যতদিন ওদের হাতে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ।

লেখক: ডা. যোবায়ের মাহমুদ

ইন্টার্ন চিকিৎসক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল, ঢাকা

Bootstrap Image Preview