Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

আমার জীবনে দেখা সব থেকে সেরা ভালো মানুষটি ছিল রিফাত

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ জুলাই ২০১৯, ০২:২৮ PM
আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৯, ০২:২৮ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


রিফাত হত্যার সেই ৪৭ সেকেন্ডের ভিডিও চিত্রটি এখনো ঘুরপাক খাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের টাইমলাইনে। অনুসন্ধান সুত্রে বেরিয়ে এসেছে রিফাত হত্যার পরবর্তী অদ্ভুত সব তথ্য। সেই অনুসন্ধান সুত্রে জানা গেছে কিভাবে গড়ে উঠেছে সেই ০০৭ গ্রুপ।

হত্যাকাণ্ড শেষে কোথা থেকে কোথায় গিয়েছিলো রিফাতের হত্যাকারীরা। সারাদেশে এমনিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শুধু একটাই আলোচনা, স্ত্রীর সামনে স্বামীকে হত্যা এবং সেই দৃশ্য তাকিয়ে দেখেছে অনেক মানুষ। কিন্তু কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি কেন?

রিফাতের এই মৃত্যুতে বরগুনা জেলাবাসীর চলছে শোকের মাতম।

হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে দেশজুড়ে অভিযান পরিচালনা করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরই মধ্যে রিফাত শরীফকে নিয়ে ফেসবুকে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন রিফাতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মঞ্জুরুর আলম জন।

স্ট্যাটাসের সঙ্গে রিফাতের বিভিন্ন সময়ের নানা স্মৃতিবিজড়িত ৩০টি ছবি পোস্ট করেছেন জন। পাঠকের জন্য মঞ্জুরুল আলম জনের স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো।

‘রিফাত তোর সঙ্গে জীবনের কিছুটা সময় পথ চলতে পেরে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। আমার জীবনে দেখা সব থেকে সেরা ভালো মনুষটি ছিলি তুই। হয়তো তোর মতো বন্ধু, সঙ্গী, সাথী, ভাই আর জীবনে পাব না। তুই আমাদের ছেড়ে অনেক অভিমান নিয়ে চলে গেলি। তোর জন্য আমরা কিছুই করতে পারলাম না।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমাকে মাফ করে দিস। শেষ ১০ বছর হাসি ছাড়া তোকে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। তোর হাসিটা খুব মিস করবোরে। তুই বন্ধু ছিলি না, তুই ছিলি আত্মার ভাই। তোর সঙ্গে অনেক রাগারাগি করেছি। আর কেউ রিফাতের নামে নালিশ করতে পারবে না। আর কেউ বকা দিতে পারবে না। আর কেউ কোনোদিন সকালবেলা ঘুম থেকে ডাকতে আসবে না। আর কোনোদিন কল দিলে বলবি না, দাঁড়া বাসার সামনে পাঁচ মিনিট, আমি আসতেছি ভায়া।’

রিফাত শরীফের স্মৃতিচারণ করে জন আরও লিখেছেন, ‘ইচ্ছা ছিল সারাজীবন একসঙ্গে পথ চলব। কিন্তু সেটা আর হলো না। আমি জানি অনেক কষ্ট পেয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেলি। যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন তুই আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবি। যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস। আল্লাহ তোকে জান্নাতবাসী করুক।’

প্রসঙ্গত, গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শত শত লোকের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সামনে শাহ নেয়াজ রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত রিফাত শরীফের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ৬নং বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামে। তার বাবার নাম আ. হালিম দুলাল শরীফ। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন রিফাত।

ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নয়নের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা রিফাতকে দা দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে যায়। এ সময় বারবার সন্ত্রাসীদের হাত থেকে স্বামীকে বাঁচাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।

একপর্যায়ে গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রিফাত মারা যান।

রিফাত শরীফকে হত্যার পরদিন ১২ জন আসামির নাম উল্লেখ করে মামলা করেন তার বাবা মো. আ. হালিম দুলাল শরীফ। মামলায় পাঁচজনকে অজ্ঞাত আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

এ মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন (২৫)। বাকি আসামিরা হলেন মো. রিফাত ফরাজী (২৩), মো. রিশান ফরাজী (২০), চন্দন (২১), মো. মুসা, মো. রাব্বি আকন (১৯), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রায়হান (১৯), মো. হাসান (১৯), রিফাত (২০), অলি (২২) ও টিকটক হৃদয় (২১)।

এরই মধ্যে মামলার ৪ নম্বর আসামি চন্দন, ৯ নম্বর আসামি মো. হাসান, ১১ নম্বর আসামি অলি ও ১২ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া রিফাত হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তানভীর, নাজমুল হাসান, মো. সাগর ও কামরুর হাসান সাইমুনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে।

বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

Bootstrap Image Preview