Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রাজধানীতে ৪৭ কোটি টাকার ওষুধ ছিটানোর পরেও কমেনি ডেঙ্গুর উপদ্রব

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০১৯, ১১:২৬ AM
আপডেট: ১৯ জুন ২০১৯, ১১:২৬ AM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


বর্ষা শুরু আগে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বাড়তে শুরু করে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। কিন্তু বিদায়ী অর্থ বছরে শুধুমাত্র রাজধানীর মশা মারতে দুই সিটি করপোরেশন খরচ দেখানো হয়েছে ৪৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

কিন্তু তাতেও কমছে না মশা । ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর স্বজনদের অভিযোগের তীর নগর কর্তৃপক্ষের দিকে; সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, আন্তরিকতার অভাব নেই, তবে রয়েছে সীমাবদ্ধতা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্য অনুযায়ী, ১৫ জুনের পর দুই দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৭২ জন। যা এ বছর গত ১৫ জুন পর্যন্ত ৪৮৬ জন (শুধুমাত্র ডেঙ্গু রোগী)। যা ২০১৮ সালের একই সময়ের চেয়ে বেশি সংখ্যার হিসাবে ৫৮ জন বেশি।

এ বিষয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. সামিয়া তাহমিনার সাথে কথা হলে তিনি জানান , বর্ষা এডিস মশা বিস্তারের উপযোগী সময়। এ কারণে এ সময় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। আর জুন মাসের শুরু থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে এমন তথ্য আমাদের হাতে ইতিমধ্যে এসে পৌঁছিয়েছে। যাদের বেশিভাগই ঢাকার বাসিন্দা।

তিনি আরও জানান,এর আগে রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা গত ৩ থেকে ১২ মার্চ ১০ দিন মশার উৎস নিয়ে একটি জরিপ চালিয়েছিল। তখন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ৯৭টি ওয়ার্ডের ১০০টি স্থানের ৯৯৮টি বাড়ি পরিদর্শন করে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। ওই জরিপে ডিএসসিসির ৮০ নম্বর ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের সূচক বা বিআই (ব্রুটাল ইনডেক্স) সবচেয়ে বেশি ৮০ পাওয়া গিয়েছিল।

হাতিরঝিল এলাকার দুপাশে দুই সিটি করপোরেশনেরই কয়েকটি ওয়ার্ড পড়েছে। সেসব এলাকায় এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব বেশি পাওয়ার কথা জানান তিনি।

বর্ষায় এডিস মশার উপদ্রব বাড়তে পারে বলেও তখন সতর্ক করেছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সেই শঙ্কার বাস্তব রূপ নিয়েছে জুনের শুরুতেই।

বর্ষার শুরুতেই ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী বাড়তে শুরু করেছে। সোমবার হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় তারা আলাদা একটি ওয়ার্ড খুলেছেন।

হাসপাতাল কর্মকর্তারা জানান, গত শনিবার একদিনেই নয়জন শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়। সোমবার সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছিল সাতটি শিশু।

ডেঙ্গু এবার আগের চেয়ে মারাত্মক হয়ে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এল ই ফাতমী।

তিনি বলেন, তার হাসপাতালে এবার গত বারের চেয়ে বেশি রোগী আসছে।

“এমনও হয়েছে একদিনে ২০টা বাচ্চা ভর্তি হয়েছে। এবার যে ধরনের রোগী আসছে তাদের মধ্যে ডেঙ্গু হেমোরেজিক এবং শক সিনড্রোম বেশি পাচ্ছি। আমাদের এখানে শিশু বিভাগে যারা ভর্তি আছে, তাদের প্রায় ৫০ ভাগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত।”

অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কয়েকটি শিশুকে অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ফাতমী।

তিনি বলেন, “আমাদের এখানে পিআইসিইউ সাপোর্ট নাই। এ কারণে শকে যাওয়ার আগে দুটো বাচ্চাকে (অন্য হাসপাতালে) রেফার করেছি। দুটি বাচ্চাই পরে মারা গেছে।”

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হলি ফ্যামিলিতে চিকিৎসা নিচ্ছিল আবদুর রহমান নামে আড়াই বছরের এক শিশু। তার দাদা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মতিউর রহমান শিকদার মশার উপদ্রবের দুষলেন নগর কর্তৃপক্ষকে।

তিনি বলেন, “আমার বাসা কাঁঠালবাগান ঢালে। সেখানে মশার উপদ্রব অনেক বেশি, কিন্তু ওষুধ ছিটায় না বললেই চলে। গরমের আগে মাঝেমধ্যে আসত, মাস দেড়েক হল আর দেখিনি।”

পুরান ঢাকার চাঁনখারপুল এলাকার ১১ বছরের ষষ্ঠী ঘোষও ভর্তি হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। তার পিসি সীমা ঘোষেরও একই অভিযোগ।

তিনি বলেন, “আপনারা মেয়রকে বলবেন, আমাদের এলাকায় যেন ঠিকমতো মশার ওষুধ ছিটায়। মশার কামড় খেয়ে বাচ্চার এখন জীবন-মরণ সমস্যা।”

ওই হাসপাতালেই শিশু সন্তানের পাশে থাকা ইস্কাটনের বাসিন্দা আজিজ হাসানও বলেন, তার এলাকায় সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম নেই বললেই চলে।

নগরবাসীর অভিযোগের মুখেও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, মশক নিধনে তাদের কাজে আন্তরিকতার অভাব নেই।

ডেঙ্গু এখনও উদ্বেগজনক পর্যায়ে নেই বলেও দাবি করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শরীফ আহমেদ। তিনি বলেন, “ডেঙ্গু এখনও ভয়ঙ্কর বা আতঙ্কিত হওয়ার মতো নেই।”

মশা নিধনে কাজ করার কথা জানানোর পাশাপাশি শরীফ বলেন, এডিস মশা বাসার ভেতরেই জন্মায় বেশি। এজন্য নগরবাসীকে নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রমও চালাচ্ছেন তারা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুনও একই কথা বলেন।

তিনি বলেন, “বাড়ির অভ্যন্তরেও বিভিন্ন উৎসে এডিস মশা জন্মায়। বিভিন্ন নির্মাণাধীন ভবনের জলাধার, লিফটের নিচে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে থাকে, যেখানে এডিস মশা জন্মালেও আমাদের কর্মীরা সেসব জায়গায় যেতে পারে না। এজন্য নাগরিকদের সচেতনতা বাড়াতে হবে।”

Bootstrap Image Preview