Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নওগাঁয় শ্রমিক সঙ্কটের কারণে বন্ধ রাখতে হচ্ছে ১'শ ২৭টি মিল

এম এ ইউসুফ, রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ২৬ মে ২০১৯, ০৫:৩৫ PM
আপডেট: ২৬ মে ২০১৯, ০৫:৩৫ PM

bdmorning Image Preview


নওগাঁর রাণীনগরে চলতি মৌসুমে ইরি-বোরো ধান চাল সংগ্রহের নির্ধারিত তারিখ থেকে সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে স্থানীয় তালিকাভুক্ত মিল মালিকরদের চাল দেওয়ার চুক্তি হয়েছে। কিন্তু তীব্র শ্রমিক সঙ্কটের কারণে বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ রাখতে হচ্ছে মিল। 

রাণীনগর উপজেলো খাদ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, আশির দশকের শুরুতে রাণীনগর সদর, কুজাইল বাজার,  ত্রিমোহনী, কুবড়াতলী, কৃষ্ণপুর ও আবাদপুকুরসহ বেশ কিছু এলাকায় হাসকিং-চাতাল মিল তৈরি করে চালের ব্যবসা শুরু হয়। সেই সময় থেকেই রমরমা ব্যবসা হওয়ার সুবাদে কিছু উদ্দ্যমী ব্যবসায়ীরা পর্যায়ক্রমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে প্রায় ১'শ ৩৪টিরও বেশি সরকারি লাইসেন্সভুক্ত চাউলকল গড়ে তোলেন। 

সে সময় চাতাল কলগুলোতে যে পরিমাণ চাল উৎপাদন হতো তা দিয়ে জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো। ফলে এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাঝারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা যেমন তাদের কর্মকাণ্ড  চালিয়ে লাভবান হতো তেমনি এই চাতালগুলোতে সৃষ্টি হয়েছিল প্রায় দেড় হাজার দরিদ্র নারী-পুরুষ শ্রমিকের কর্মসংস্থান।

এলাকার চাষীদের উৎপাদিত ধানের নায্যমূল্যও নিশ্চিত হতো। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত চাল ব্যবসায়ী ও মালিক-শ্রমিকদের অনেকেই দারিদ্রতা জয় করে পুঁজিপতি বনে গেছেন।

কিন্তু বর্তমানে অটো রাইস মিলের দাপট আর শ্রমিক সংকটের কারণে হাসকিং চাতাল মিল মালিকরা দিনদিন অসহায় হয়ে পড়ছেন। গত কয়েক বছর ধরেই ব্যবসা মন্দা হওয়ার কারণে অনেকেই ব্যবসা ধীরে ধীরে গুটিয়ে নিচ্ছেন। 

চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে প্রায় ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। উৎপাদিত ধানের পরিমাণ প্রায় ১ লক্ষ ১৫ হাজার মেট্রিক টন। আর চাল আকারে প্রায় ৭৫ হাজার মেট্রিক টন হবে। অথচ বর্তমানে রাণীনগর খাদ্যগুদামে সরকারিভাবে সিদ্ধচাল ক্রয় করা হবে ৩ হাজার ৪'শ ৭৪ মেট্রিক টন এবং আতব চাল কেনা হবে ৫'শ ৪৯ মেট্রিক টন।

ইতিমধ্যেই খাদ্য বিভাগের সাথে প্রায় ১'শ ২৭টি হাসকিং চাতাল মিল মালিকের চুক্তি হয়েছে। শুধুমাত্র শ্রমিক সংকটের কারণে চাল সংগ্রহ অভিযান থমকে দাঁড়িয়েছে বলে একাধিক চাতাল মালিকরা জানান। 

প্রসঙ্গগত, চাতালের কাজকর্ম শুরুর দুই মাস আগে শ্রমিকরা তাদের পছন্দের মালিকদের কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়ে রাখে। অথচ ওই শ্রমিকরা অন্য আরেক চাতাল মালিকের কাছ থেকে বেশি টাকা নিয়ে বর্তমানে সেখানে কাজ করার কারণে স্থানীয় চাতাল মালিকরা শ্রমিক সংকটের কবলে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। খাদ্য বিভাগের সাথে চাল দেওয়ার চুক্তি অনুযায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম চাতালে চাতালে গিয়ে মালিকদেরকে যথা সময়ে চাল দেওয়ার নির্দেশ দেয়ায় তারা আরো বিপাকে পড়েছেন। এর সাথে যোগ হয়েছে চাতাল মালিকদের ব্যাংক ঋণের চাপ।

রাণীনগর উপজেলা চাল কল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শীতানাথ ঘোষ জানান, আমরা চাহিদা মত শ্রমিকদের মৌসুমের আগেই অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখি। কিন্তু কৌশলে তারা ধান কাটার বাহানা দিয়ে এবং অন্য চাতাল মালিকের কাছ থেকে বেশি পরিমাণ টাকা নিয়ে অন্য জেলায় চলে যায়। প্রতিটি ৩'শ মণ চাতালে ধান সিদ্ধ ও শুকানো থেকে চাল তৈরি পর্যন্ত ১২ জন করে শ্রমিক লাগে। আমার জানা মতে প্রায় অর্ধেক চাতাল মালিকরাই আশানুরুপ শ্রমিক না পাওয়ায় তারা চাল উৎপাদনেও পিছেয়ে পড়ছেন। ফলে সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ে চাল দেওয়া নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন তারা।  

Bootstrap Image Preview