রাত পোহালেই আকাশ দেখবে গেরুয়া আলো, দিকে দিকে নতুন উল্লাস সূর্যোদয়। আমি কোনদিনই কট্টর সমর্থক নই তবু কোন কোন ক্ষেত্র সাধারণ চোখে অসাধারণ ভালো লাগে, বেশ আলোড়িত হই।
আগে বামেদের বক্তৃতা, তাদের মননশীল বক্তব্য পরিশীলন ছিল বেশ নজরকাড়া। খুব ভালো লাগতো। পরে রাজনীতিক হিসেবে অটলবিহারী বাজপেয়ীজির বক্তব্য, তার শুদ্ধ পরিশীলিত হিন্দী, পরিচ্ছন্ন রসবোধ এবং যথাযথ শব্দ ও কোটেশন, কবিতা ইত্যাদির প্রয়োগে বক্তব্য বিষয়ের স্পষ্ট তা বেশ শ্রবণযোগ্য ছিল।
বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ ও বেশ দৃঢ়তার সাথে তার বক্তব্য রাখেন। এমনকি একসময় তার ফ্যান ও হয়ে গেলাম। তিনি কখন কি খান, কিভাবে দিন বেছে পোশাকের রঙ বাছেন এমনকি আইভরি কালারটা ওনার শাড়ির রং দেখেই শেখা আমার। বর্তমানে তৃণমূল স্তর থেকে উঠে আসা নেত্রী স্মৃতি ইরানী মাটি কামড়ে থাকা ইমেজসহ আমার মনে বেশ জায়গা করে নিলেন।
গতবারের অমেঠি কেন্দ্রের হেরে যাওয়া প্রার্থী। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা একজন কলেজ ড্রপ আউট, এক্স-মডেল এবং টিভি সিরিয়াল অভিনেত্রী। গতবারের অমেঠি থেকে পরাজিত প্রার্থী বিজেপির। এই মহিলার কথা বলার ধরণ, অ্যাগ্রেসিভনেস, স্বচ্ছতা আমায় বহুবার ভাবতে বাধ্য করেছে যে রাজনীতি আর তা নেই যা কয়েক বছর আগেও ভারতবর্ষে ছিল। এলিট, পরিবারভিত্তিক, শিক্ষিত আঁতেলদের কলার উঁচু করার ব্যাপার-স্যাপার।
স্মৃতি ইরানীর থেকে শেখার আছে দু’টি জিনিস। এক, রাজনীতিতে জিততে চাইলে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হয়। ক’দিন আগে এক স্টুডিও সাক্ষাৎকারে স্মৃতি বললেন, রাহুল গান্ধী অমেঠির কটা গ্রামের নাম জানেন? কোন এরিয়ার কী সমস্যা জানেন? জানেন কোথায় রাস্তা নেই? কোথায় লোকে জল পাচ্ছে না? কোথায় জমি অধিগ্রহণ হয়েছে কিন্তু কাজ শুরু হয়নি খালি রাজনৈতিক নেতাদের পকেটে টাকা গেছে? আমি জানি। আমি আপনাকে নাম বলছি, এই সব জায়গায় গিয়ে জিজ্ঞেস করুন মানুষকে, রাহুল গান্ধী গত পাঁচ বছরে ক’বার এসেছেন আর আমি ক’বার এসেছি৷ দুই, ব্যাকগ্রাউন্ড ম্যাটার করে না গণতন্ত্রে। ভোটারের কাছে আসলেই রাজা ভোজ আর গঙ্গু তেলি সমান গুরুত্বপূর্ণ।
মাটি কামড়ে পড়ে থাকলে যে ভারতীয় রাজনীতির রাজপুত্রকেও হারানো যায় স্মৃতি ইরানী দেখিয়েছেন। দেখিয়েছেন আমাদের হুগলী কেন্দ্রের লকেট চট্টোপাধ্যায়। একলক্ষ্য পাখির চোখ থাকলে আর সঠিক মাত্রায় পরিশ্রম শেষের চ ওড়া হাসিটা এনে দেয়।
বিজেপিকে অভিনন্দন। রাজ্যে এবং কেন্দ্রে। কেন্দ্রে আশা করব ডিমনি বা জিএসটির মত কাজ আর করবে না বিজেপি। এলজিবিটি রাইট আনা, মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়ানো এবং তাৎক্ষণিক তিন তালাক রদ করার মত কাজ আরও দেখতে চাই। কর্মসংস্থান হোক। দাঙ্গা না হোক। কিন্তু অবৈধ অনুপ্রবেশকে যেন শক্ত হাতে দমন করা হয়।
সরকারি-আধাসরকারি সংস্থা গুলিকে ভর্তুকি দিয়ে আধা পঙ্গু না করে রেখে দায়িত্ব নেবার মত শক্তপোক্ত কাঁধ তৈরি হোক, মানুষ পরিশ্রমের ঘামরক্ত ঝরানো ফল ভোগ করতে শিখুক। নতুন নতুন কলকারখানা হোক, আপনার আমার ঘরের ছেলেমেয়েরা কাজে কর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ুক।
সব্বাইকে শুভেচ্ছা। গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসবটি আমরা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি এবং তার ফলাফলের দিনে সেনসেক্স চল্লিশ হাজার অতিক্রম করেছে, এ আমাদের যুগপৎ আনন্দের এবং গর্বের খবর। হারজিত সব কিছুতেই থাকে। বিশেষ গণতন্ত্রে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করাই নিয়ম, জিত হোক বা হার। পার্টি যার যার, নির্বাচিত সরকার সবার। সরকারও আশা করব তার সব নাগরিককে সেভাবেই দেখবে।
‘সরকার আয়েগি যায়েগি, মগর ইয়ে দেশ রহনা চাহিয়ে।’
লেখক: সুতপা দাশগুপ্ত
(লেখকের ফেসুবক থেকে সংগৃহীত)
প্রসঙ্গত, সুতপা দত্ত দাশগুপ্ত, একাধারে কণ্ঠশিল্পী ও কবি। একনামে সবাই তাকে চেনেন শ্রীরামপুরের আখনা গার্লস হাইস্কুলের ইংরেজি শিক্ষিকা হিসেবে। কিন্তু এ গুণী শিল্পী ইতিমধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছেন।