ইচ্ছে হলেই ঘর থেকে দুপা ফেলে খোলা আকাশ দেখা অথবা মনের ইচ্ছায় পৃথিবীর বুকে মুক্ত বিচরণ, এইতো জীবনের স্বাধীনতা। কিন্তু এই স্বাধীনতা পান না অনেকে বিশেষ করে যাদের বন্দীশালায় বসবাস, বাধাধরা জীবনই তাদের নিত্যসঙ্গী।
কারাবন্দী জীবনটা কেমন হয়? বা কেমন করে কাটে সেখানকার বাসিন্দাদের স্বাধীনতা? উচুঁ দেয়ালে ঘেরা ওই জীবনযাপনে কৌতূহল আমাদের আজো অজানা!
কারাবন্দী লাইফে গেলে মনে পড়ে সেই গানটির কথা, যাতে লিখা হয়েছিলো, তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়? দুঃখের দহনে, করুন রোদনে, তিলে তিলে তার ক্ষয়।
তিলে তিলে ক্ষয়ে যাওয়া জীবনের গল্প রোজা হাওয়ায় নিয়ে যায় কারাগারের বন্দীশালায়, যেখানে জীবনে মানে চার দেয়াল আর স্বপ্ন মানে দেয়ালের ভেতর বাহিরের পৃথিবীতে ঘেরা, সেগুলো অপরাধের বিমিময়ে পাওয়া জেলবন্দী জীবন, শাস্তি অনুতাপ প্রায়শ্চিত্ত সংশোধন অথবা ভোগাকান্নার মিছিলে ভরা তাদের এক একটি মুহুর্ত।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার আট দশটা কারাগারের মতই এখানে বন্দীদের জীবন নির্দিষ্ট চকে বাঁধা, সকালে লকাপ থেকে বের হওয়ার সুযোগ পায় বন্দীরা, জেল জীবন তো আর আয়েশ করার জায়গা নয়, এ কথা মেনে নিয়েই স্বল্প পরিসরে চলে গোসল ও ব্যক্তিগত কাজ কর্ম, এরপর আগ্রহীদের গন্তব্য কারা লাইফেরই, তবে অনেকের রোজ একি রকম বই পড়তে পড়তে স্বাদবিহীন হয়ে উঠে অবসরের সময়টুকু।
প্রায় একি সময় রন্ধনশালায় ব্যস্ত হয়ে উঠে সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের একাংশ, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও নামমাত্র তৈল মসলা রান্নাই তাদের নিত্যসঙ্গী, তারপর শুরু ওয়ার্ডভিত্তিক খারাব বিতরণ, একদিকে খারাব বিতরণ করা হলেও অন্যদিকে একি সময়ে পাশের কেস টেবিলে কারারক্ষীরা তখন নতুনদের ভাগ করে দেওয়ার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিচার কাজ সম্পন্ন করেন।
কারাগারের ভেতর সকল নির্দেশনায় দেওয়া হয় ঘণ্টা বাজিয়ে, ঠিক দুপুর ১২টায় ঘণ্টা বাজার পর পরই বাহিরে থাকা বন্দীরা নিজ নিজ ওয়ার্ডে ফিরে যান, এবং সেখানে বন্দীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য কারারক্ষীরা প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গণনা করেন, যাকে জেলখানার ভাষায় বলা হয় গুনতি, এবং এই গুনতি প্রতিদিন সূর্যদয়ের পর দুপুরে এবং সূর্যাস্তের ঠিক পূর্বমুহূর্তে মোট তিনবার করা হয়।
গণনা শেষে দুপুরে বন্দীরা বেরিয়ে পড়ে খেলাধুলায় মূলত ক্লান্তিকর বাঁধা জীবন ভুলে থাকার সময় এই টুকুই, জঙ্গি ও ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা অবশ্য এসব খোলা জায়গায় আসার সুযোগ নেই, রোটিনে বাঁধা দিন শেষে ফের কারাবন্দীরা যেখানে ফিরতে চাই না কেউই, তবুও নিয়তিকে মেনে নিয়েই কোন একদিন মুক্ত হওয়ার স্বপ্নবুনে যান কারাবন্দীরা।