পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদে পৃথিবীর মতো সক্রিয় কোন টেকটনিক প্লেট নেই। তাই ভূমিকম্প হবার কোন কারণ নেই। কিন্তু সম্প্রতি নাসার বিজ্ঞানীদের চোখে চাঁদে ভূমিকম্প হবার চিহ্ন ধরা পড়েছে। শুধু তাই নয় বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন কয়েকশো মিলিয়ন বছর ধরে চাঁদ ধীরে ধীরে আরও ঠাণ্ডা হচ্ছে। আর এ কারণে এটি ক্রমশ কুঁচকে ছোট হয়ে আসছে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন চাঁদের পৃষ্ঠ ভঙ্গুর হওয়ায় টান লাগলেই এর পৃষ্ঠদেশ ভেঙ্গে যাচ্ছে। ভাঙতে ভাঙতে আকারে অনেকখানি ছোট হয়ে এসেছে রূপালী এই উপগ্রহটি।
বিজ্ঞানভিত্তিক সাময়িকী নেচার জিওসায়েন্স চাঁদের বেশকিছু নতুন ছবি প্রকাশ করেছে। সংখ্যায় ১২ হাজারের কিছু বেশি। এছাড়া অ্যাপোলো মহাকাশযানের সিসমোমিটারের বিভিন্ন তথ্য ও ছবি প্রকাশ করেছে ম্যাগাজিনটি। এসব ছবিতে দেখা যাচ্ছে চাঁদের পৃষ্ঠে বলিরেখার পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। একই সাথে চাঁদে ক্রমাগত বাড়ছে ভূমিকম্পের পরিমাণ। বিজ্ঞানীরা যার নাম দিয়েছেন চন্দ্রকম্প। নেচার জিও সায়েন্সের তথ্যমতে ছবিগুলো পাঠিয়েছে নাসার লুনার রেকন্সাঁ অর্বিটার।
নাসার এই গবেষণায় জানা গেছে চাঁদের পৃষ্ঠদেশ কুঁচকে ছোট হয়ে যাওয়ায় এর বুকে বলিরেখা পড়েছে। যা অনেকটা খাড়া সিঁড়ির মতো ভাঁজ তৈরি করেছে।বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন ২০০৯ সালের থেকেও ৫০ গুণ বেশি বলিরেখাময় হয়ে উঠেছে চাঁদের বুক। আর এই কুঁচকে যাবার ফলে বেড়ে চলেছে চন্দ্রকম্পনের মাত্রাও। গবেষণার জন্য ২০০৯ সাল থেকে এখন অবধি ৩৫০০ ছবি পাঠিয়েছে নাসার অর্বিটার।
গবেষকদের ধারণা, বিকিরণ এবং ক্ষয়ের কারণে আগের অনেক রেখাই ম্লান হয়ে গেছে। কিন্তু নতুন পাঠানো ছবিতে যা দেখা যাচ্ছে তা সদ্য ঘটা কম্পনের ফলে। এইসব কম্পনের মাত্রা রিখটার স্কেলে সাত মাত্রা পর্যন্ত বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। জানা গেছে, ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৭ সাল নাগাদ প্রায় ২৮ টি বড় কম্পন হয়েছিল চাঁদে।
নাসার দেয়া তথ্য থেকে জানা গেছে জোয়ারভাটার কারণে যে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির চাপ সৃষ্টি হয় এতেও চাঁদের পৃষ্ঠতলে টান পড়ে। ফলে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েও ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে পৃথিবীর টানে বাঁধা এ উপগ্রহটি।