সোমবার মধ্যরাত থেকে বাংলাদেশের অসংখ্য জনপ্রিয় ফেসবুক গ্রুপ এবং গ্রুপের এডমিনদের ফেসবুক একাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। এদের মধ্যে অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, সঙ্গীতশিল্পী ইমরান মাহমুদুল, অভিনেত্রী মুমতাহিনা টয়া ও পুজা চেরির ফেসবুক আইডি ডিজ্যাবল হয়ে গেছে। আর মেহের আফরোজ শাওনের ফেসবুক আইডি হ্যাক করার চেষ্টা ব্যর্থ হলেও ইনস্টাগ্রাম হ্যাক করেছে হ্যাকারা।
মঙ্গলবার সকাল থেকে এই তারকাদের ফেসবুক আইডি ডিজেবল দেখাচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে চার তারকা তাদের নামে কোনও আইডি থেকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছেন ভক্তদের।
ভুক্তভোগীরা মনে করছেন একশ্রেণির হ্যাকার এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। এছাড়াও বেশ কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপও হ্যাকড হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করছেন।
অপূর্ব বলেন, গতকাল মাঝরাত থেকে আমি আমার আইডিতে ঢুকতে পারছিনা। কারা যেন রিপোর্ট করে ডিজেবল করে দিয়েছে। বিষয়টা খুবই বিব্রতকর। এখন আমি আমার আইডি ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
পূজা চেরি বলেন, কিছুক্ষণ আগেও আমার ঠিক ছিল। হঠাত করে আর আমার আইডি পাচ্ছিনা। একদম ডিজেবল হয়ে গিয়েছে। এখন চেষ্টা করছি ফেরত আনার।
এদিকে দেশের শীর্ষস্থানীয় চিত্রনায়ক শাকিব খানের ফেসবুক গ্রুপ নাকি হ্যাকড হয়েছে। ওই গ্রুপ হ্যাক করে গ্রুপ সংশ্লিষ্টদের অ্যাকাউন্টও ডিজ্যাবল করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ইমরান বলেন, গতকাল রাত সাড়ে চারটার পর থেকে আইডিতে লগ ইন করতে পারছিনা। যারা এই কাজগুলা করছেন, তাদেরকে সাইবার ক্রাইমের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া উচিত। এদের কারণে মানুষ কতটা বিভ্রান্তিতে পড়ে!
এদিকে অভিনেত্রী, নির্মাতা, গায়িকা মেহের আফরোজ শাওনের ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম একাউন্টে ঢোকার চেষ্টা করেন হ্যাকাররা। ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক করতে না পারলেও ইনস্টাগ্রাম হ্যাক করতে সক্ষম হন তারা। এরপরই মেহের আফরোজ শাওন তার ফেসবুকে একাউন্টে স্ট্যাটাস দিয়ে সেই কথা জানিয়েছেন। ‘তড়িঘড়ি করে ফেসবুক বাঁচাতে পারলেও ইনস্টাগ্রাম একাউন্টটা বাঁচাতে পারলাম না’- ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি উল্লেখ করেন।
ফেসবুক বলছে, তাদের কমিউনিটি গাইডলাইন লঙ্ঘনের অপরাধে এসব গ্রুপ ও এডমিনদের ফেসবুক একাউন্ট ডিজেবল করে দেয়া হয়েছে।
বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের শীর্ষ ফেসবুক গ্রুপগুলোর মধ্যে রয়েছে এভারগ্রীন বাংলাদশ, বাংলাদেশ গ্রে হ্যাট হ্যাকারস, আপওয়ার্ক বাংলাদেশ, সার্চ ইংলিশ, আওয়ার এভারগ্রীন বাংলাদেশ, ভাইরাল গ্রুপ বাংলাদেশ, ভয়েস অব রাইটস, প্রবাসী বাংলাদেশ, সোনার বাংলা, সবুজ শাড়ি লাল টিপ, ছেলে ভিএস মেয়ে, আমাদের খুলনা- ওয়ার্ল্ড ইন বাংলাদেশ, উই আর বাংলাদেশ, ক্রিকেটখোরসহ আরও অসংখ্য ফেসবুক গ্রুপ।
ফেসবুকের এসব গ্রুপগুলো বন্ধ হওয়ার বিষয়ে হ্যাকার গ্রুপ ডন্স টিমের বিভাগীয় প্রধান এইচ আর সোহাগ বলেন, ফেসবুক প্রতিনিয়তই তাদের নীতিমালায় পরিবর্তন আনছে। তবে বর্তমানে ফেসবুক আরও কিছু নীতিমালা যোগ করেছে সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে।
‘যে কারণে কোনো বড় নামধারী টেরোরিস্টের ছবি গ্রুপে বা একাউন্টে আপলোড করা মাত্রই পার্মানেন্টভাবে নিস্ক্রিয় করে দেয়া হচ্ছে সেসব ফেসবুক গ্রুপ ও একাউন্ট।’ আর নিস্ক্রিয় গ্রুপ ও একাউন্টগুলো পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা একেবারেই নগন্য বলে উল্লেখ করেন সোহাগ।
এ ব্যাপারে নিরাপদ সাইবার স্পেসের জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তাদানকারী প্রতিষ্ঠান ক্রাইম রিসার্চ অ্যানালাইসিস ফাউন্ডেশনের (ক্রাফ) মহাসচিব কাজী মিনহার মহসিন উদ্দিন বলেন, কমিউনিটি গাইডলাইন অনুসারে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, ধর্মীয় ইস্যুতে কঠোর হচ্ছে ফেসবুক। গাইডলাইন লঙ্ঘন করার কারণে এসব গ্রুপ চিরস্থায়ী বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ফেসবুক নীতিমালা অনুযায়ী যেকোনো ধরনের অস্ত্রের ছবি, জঙ্গির ছবি, সন্ত্রাসীর ছবি, ধর্মীয় কোনো গোষ্ঠীকে হেয় করে ফেসবুক পোস্ট দিলে তার আইডি ও গ্রুপ বিপজ্জনক অবস্থায় চলে যাবে। কোনো কোনো পোস্ট দেয়া মাত্রই ফেসবুক তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছে। আবার কোনোটা ফেসবুকের কাছে অন্য কেউ রিপোর্ট করলে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
মিনহার বলেন, এতদিন ধরে ফেসবুকের এই নীতিমালা তেমন কার্যকর না হলেও সম্প্রতি স্প্যামাররা বিষয়টি বুঝতে পেরে বিভিন্ন ধরনের ছবি তৈরি করে সামাজিক মাধ্যমটির গ্রুপগুলোতে পোস্ট করে অন্য আইডি দিয়ে ফেসবুকের কাছে রিপোর্ট করছে। এই রিপোর্ট করার পর গ্রুপ ও গ্রুপের সকল এডমিনদের একাউন্ট ডিজেবল করে দিচ্ছে।
প্রতিকার: বর্তমান যে হারে গ্রুপ নিস্ক্রিয় হচ্ছে, তা খুবই হতাশা জনক।তবে যাদের গ্রুপ এখনো ঠিক আছে তারা নিজ গ্রুপ বাচাতে গ্রুপ আর্কাইভ করে রাখতে পারেন।
অথবা পাব্লিক কমেন্ট বন্ধ করে দিতে পারেন। আর এই অবস্থা চালু রাখতে হবে ফেইসবুক নীতিমালা এর পরবর্তী সংস্করণ পর্যন্ত।
আশংকা: এই ব্যাপারে ধারনা করা যাচ্ছে এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে অনেক সরকারি, বেসরকারি বা বাণিজ্যিক অনেক গ্রুপ ই। আমি রিপোর্ট করার পুর্ব মুহুর্ত অবধি দেখেছি অনেক বড় বড় ও জনপ্রিয় গ্রুপ গুলি ফেইসবুকে নেই।নিস্ক্রিয় করে দেয়া হয়েছে। আমি এই ব্যাপারে অনেককেই সচেতন করেছি।এবং ডন্স টিম পরিবার সবাইকে সতর্ক করে যাচ্ছে।