Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মীরসরাইয়ে দখল আর দূষণের কবলে খালগুলো, জলাবদ্ধতার আশংকা

ইমাম হোসেন, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ০২ মে ২০১৯, ০৯:৩৫ PM
আপডেট: ০২ মে ২০১৯, ০৯:৩৫ PM

bdmorning Image Preview


এক সময়ের জোয়ার-ভাটা খেলা করা মীরসরাই উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত অধিকাংশ খাল আজ প্রাণহীন এক একটি বর্জ্য স্তপের নর্দমা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের রুপ বৈচিত্রময়ালগুলো এখন মীরসরাইবাসীর দুঃখের কারণ হিসেবে পরিণত হচ্ছে। খালের দু'ধারে দখল করে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসা-বাড়ি, দোকানপাট গড়ে ওঠা এবং বাজার ও বসতবাড়ির বর্জ্য ফেলার কারণে এক সময়ের প্রবাহমান খালগুলো আজ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

কয়েকটি খালের পানি প্রবাহিত না হওয়ায় এবং বর্জ্যের স্তুপের কারণে খালের পঁচা পানি দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ফলে এই খালগুলো পরিবেশ দূষণের জন্য অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মীরসরাই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় অধিকাংশ খাল আজ মৃতপ্রায়। বছরের পর বছর ধরে এই খালগুলো খনন না করায় খালে বর্জ্য আবর্জনায় কিছুটা ভরাট হয়ে এল স্ব স্ব স্থানীয়রা খাল পাড়ের জমিতে বসতবাড়ী নির্মাণের ফলে খালগুলো সংকুচিত হয়ে আসছে। বিলীন হয়ে যাচ্ছে খালের গভীরতা। দুই পাড়ের অবস্থা সংকুচিত। খালপাড়ে বন-জঙ্গলে একাকার হয়ে আছে। আসন্ন বর্ষায় এবার ও পানির চাপে খালগুলোর পানি উপচে পড়ে স্থানীয় অনেক জনপদ তলিয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন পরিবেশ বিশ্লেষকরা।

উপজেলার ১নং করেরহাট থেকে ১৬ নং সাহেরখালী পর্যন্ত পুরো এলাকা জুড়ে অসংখ্য খাল ও ছরা রয়েছে। যার অধিকাংশ মৃত প্রায়। মীরসরাইয়ের অন্যতম একটি শান্তিরহাট হয়ে বয়ে যাওয়া খালটির একসময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। যেখানে ব্যবসয়ীরা প্রতিদিন নিত্য নতুন পণ্য নিয়ে ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে করে পণ্য সামগ্রী এনে স্থানীয় শান্তিরহাট বাজারে বিকিকিনি করতো। এখানে কোন ইঞ্জিন চালিত ট্রলার আসে না। কারণ একেতো ব্যবসা মন্দ এবং খাল সংকুচিত হওয়ার ফলে ট্রলার চলাচলের উপযুক্ত জায়গা নেই।

জোরারগঞ্জ থেকে ইছামতি হয়ে বয়ে যাওয়া খালটির করুন দশা। বিশেষ করে খালপাড়ের জমিতে সম্প্রতি মানুষ তাদের বসতি করার ফলে খালের পাড়ের একাংশ নিয়ে তারা দেয়াল নির্মাণ করছেন ইচ্ছেমতো। এর ফলে খাল খননের সময় খাল পাড়ে মাটি রাখার কিংবা খাল সম্প্রসারণের কোন ব্যবস্থা থাকবে না।

এছাড়াও স্থানীয়দের ময়লা আবর্জনা ফেলে খাল ভরাট ও পরিবেশ দূষণ করলেও স্থানীয় প্রশাসনের কোন নজরদারিতা নেই। বিষুমিয়ারহাট থেকে নাহেরপুরের দিকে বয়ে যাওয়া ছোট ছরাটি একবারে মৃত বল্লেই চলে। করেরহাট এলাকায় বারইয়ারহাট-করেরহাট সড়কে বেইলি ব্রীজ নির্মাণের ফলে খালের উপর বাঁধ দেয়ায় এবং খালের সামান্য অংশ খোলা রাখায় আসনন্ন বর্ষায় পাহাড়ী ঢলের চাপে পানি সরবরাহ না হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। ফলে ওই এলাকায় অধিকাংশ জমি, ঘরবাড়ী ও ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।

করেরহাট বাজারে সামান্য বৃষ্টি এলেই হাটু পানি। গত বছর বাজারের বিশাল অংশে বছরজুড়ে দুর্ভোগ পোহায় সকলে। সর্বোপরি পুরো উপজেলা জুড়ে অবস্থিত অধিকাংশ খাল ও ছরা দখল আর দূষণের ফলে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। আবুতোরাব, বামনসুন্দর,খৈয়াছরা, গোভানিয়া, হিঙ্গুলী খালের ও একই দশা। একদিকে খনন না করার ফলে অধিকাংশ খাল সংকুচিত হচ্ছে। অপরদিকে ময়লা আবর্জনার ভাগাড়। তার উপর দখলদারদের আগ্রাসন। এ থেকে উত্তোরণের ব্যবস্থা না করলে প্রতিবছর ঘুরে বর্ষা এলেই পাহাড়ী ঢলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা হয়েছে।

এ বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে খাল খননের বিষয়ে কথা বলবো। খালের পাড় দখল এবং ময়লা ফেলে পরিবেশ দূষণের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ফেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
 

Bootstrap Image Preview