মৌমাছি মৌমাছি, কোথা যাও নাচি নাচি, দাঁড়াওনা একবার ভাই..." শৈশবে সুর সুরে ছন্দে ছন্দে এ ছড়াটি পড়েননি এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে মৌমাছি কেবল বইয়ের পাতায়ই রয়েছে, দৃশ্যত এ ক্ষুদ্র প্রাণীটিকে তেমন একটা আর দেখা যায় না। ক্রমেই যেন হারিয়ে যাচ্ছে মৌমাছির দল আর মৌচাক।
আগে গাছে গাছে প্রচুর মৌমাছি ও মৌচাক দেখা যেত। এখন তেমন দেখতে পাওয়া যায় না। মধু সংগ্রহকারী ও মধু চাষীরা জানায়, ১৫-২০ দিন ঘোরা ফেরার পরও একটা মৌচাক ও পাওয়া যায় না। যদি কোথাও পাওয়া যায় তা আকারে ছোট। মৌমাছির সংখ্যাও আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। আগে যেমন মধু পাওয়া যেত এখন সেটা আর নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর একটা বড় কারণ প্রাকৃতিক দুযোর্গ। এ ছাড়া তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বসবাসের উপযোগী পরিবেশের অভাব, খাদ্যভাব, ফসলে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক অপপ্রয়োগ অনাড়ি মধু সংগ্রহকারীদের দিয়ে মৌচাকে অগ্নিসংযোগে মৌমাছি পুড়িয়ে হত্যা করাসহ নানান কারণে মৌমাছি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি মৌমাছির সংখ্যা আনাগোনা ও প্রাকৃতিক মৌচাক আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এখন মুক্ত মৌমাছির ভোঁ-ভোঁ শব্দ শুনতে পাওয়া যায় না। শুনতে পাওয়া যায় না মৌচাকে দুরন্ত ছেলেদের ঢিল মারার কথাও। কালের বিবর্তনে মৌমাছির সংখ্যা এতটাই কমেছে যে গ্রামগঞ্জে বিভিন্ন ফসল ও ফলফলাদি গাছে আগের মত আর মুক্ত মৌমাছি চাক বা বাসা বাঁধে না। মৌমাছির প্রজনন বৃদ্ধি ও বসবাসের পরিবেশের অভাবে মুক্ত মৌমাছি ও মৌচাক হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে বিভিন্ন ফসল ও ফলাদি পরাগায়নে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, মধুর মধ্যে প্রচুর পুষ্টি ও খাদ্য গুণ রয়েছে। মধু-দুধ বা পানি মিশ্রণ করে খেলে নিমিষয়ে হারানো শক্তি ফিরে পাওয়া যায়। দৈহিক গঠন ও সুস্বাস্থ্য তৈরি ছাড়া ও মধু বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও কোমলতা বাড়ানোর জন্য মধু বিশেষ ভাবে উপকারী।
উপজেলার মধু সংগ্রহকারী খবির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অতীতে ফলবান বৃক্ষের ডালে, দালানের ছাদের নিছে বন-জঙ্গলে, গাছের কোঠরে, মাটির গর্তে বা সুবিধাজনক স্থানে মৌমাছির বসবাস ছিল গ্রামগঞ্জে। কিন্তু এখন আর তা দেখতে পাওয়া যায় না। যেন মৌমাছি ও মৌচাক হারিয়ে যাচ্ছে।