ফেনীতে হওয়া বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন জেলার সাবেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা।
তিনি লিখেছিলেন, ফেনীর পুরো প্রশাসন হয় উদাসীন, নয় অপরাধের সাথে জড়িত, সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত, অন্যায়ের সাথে, দুর্নীতির সাথে জড়িত। ঔদাসীন্যও এক ধরণের অপরাধ। তার সেই স্ট্যাটাসের জবাব দিয়েছেন সোনাগাজী থানা ও ফুলগাজী থানার সাবেক ওসি হুমায়ুন কবির।
যা বিডিমর্নিং পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-
‘নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানাকে বলছি: ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের দারুণ অপচেষ্টা আপনার! নুসরাত হত্যা মামলায় পূর্বাপর ওসি সোনাগাজীর গাফেলতি পরিচ্ছন্ন। আমিও চাই পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তির জন্য হলেও তাকে আইনের আওতায় এনে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। এমন পুলিশ অফিসারের জন্যই পুলিশের কলঙ্ক বইতে হয়। কিন্তু আপনি ফেনী জেলা পুলিশকে নিয়ে যে পাশা খেলতে শুরু করেছেন, তাতে রীতিমত স্তব্দ আমি! আপনিই তো ফেনী জেলা পুলিশকে নিয়ে লিখবেন। কারণ:
১. ফেনী জেলা পুলিশ অন্তত হাফ ডজন বার আপনার একটি জীবনকে রক্ষা করেছেন। এটা করা তাদের উচিত হয়নি তাই তো?
২. ফুলগাজীর ওসি, ইউএনও কে না জানিয়ে বাংলাদেশের সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে চালিয়েছিলেন মাদক উদ্ধার অভিযান। সেখানে হামলার শিকার হলে আপনাকে বাঁচাতে গিয়ে একজন ব্যাটালিয়ন আনসারের প্রাণ গেল। আপনি জান হাতে নিয়ে কাপুরুষের মত পালিয়ে এলেন। আপনার সোর্সকে আটকে রেখে দিল। আজও জানেন না সে কোথায় আছে ? নিজের প্রাণ দিয়ে আপনার মত ভীরুকে বাঁচিয়ে মোটেও ঠিক করেননি ওই বীর ব্যাটালিয়ন সদস্য। সে সিংহের মত লড়েই মরেছিল আর আপনি শৃগালের ন্যায় পালিয়েছিলেন। ধিক্কার জানাই আপনাকে। থু-থু-থু আপনার মত কাপুরুষ ম্যাজিস্ট্রেটকে।
৩. ফেনী শহরের রামপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকা। কোন প্রকার নোটিশ ছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় এ গ্যাস লাইন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে যেদিন বিশ্ব ম্যারাথন দৌড়বিদ মানব হিসেবে গ্রিনিচ বুকে নাম লিখিয়েছিলেন সেদিন সেই আপনাকে বাঁচিয়েছিল হে বালক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট? সেটাও তো মোটেও ঠিক করেনি পুলিশ।
৪. ফেনী শহরের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রসিদ্ধ একটি মার্কেটে ভারতীয় কাপড় ধরার নামে বার বার একই দোকানে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে অভিযান চালানোর কারণে ওই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা আপনাকে উত্তম-মধ্যম দিয়ে যখন আলুভর্তা বানাচ্ছিল, তখন কে বাঁচিয়েছিল?
এভাবে আপনার প্রাণ বাঁচিয়েছিল এই পুলিশ। তাই তো আপনি আজ আমেরিকায়। কিন্তু যার প্রাণ দিয়ে আপনার এ ভীরু প্রাণটি বাঁচিয়ে রেখেছিল, একটিবারের জন্যও কি আপনি তার পরিবারের খবর নিয়েছিলেন ? এতটা ভীরু, কাপুরুষ আর সংকীর্ণমনা আপনি। আমার ধিক্কার আপনায় ! থু-থু-থু জানাই ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের এ অপচেষ্টাকে।
আপনার মত সংকীর্ণমনা উদ্ভট চরিত্রের কুৎসিৎমনা শিক্ষিত ভীরু কাপুরুষের জীবন না বাঁচিয়ে নুসরাতের মত মেধাবী ছাত্রীটিকে বাঁচানোই উচিত ছিল পুলিশের। যা ঐ থানার ওসি করেনি। তাই, তার জন্য বড় কোন শাস্তিও অপেক্ষা করছে।।
এর আগে ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানার দেওয়া স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-
আমাকে এটার জবাব দেওয়া লাগতেছে ব্যাপারটা মেনে নেওয়াই কষ্ট।।
যাক, মহামান্য ওসি হুমায়ূনঃ
জবাবে সোনাগাজীর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উনার কাজকর্ম নিয়ে আমি কিছু বলব না। আপত্তিকর ভাষায় তার পরিচয় প্রকাশ পায় এটাও বলব না। কারণ, আমি এই শ্রেণীর মানুষ হতে চাই না।
১) উনি বলেছেন বদরপুর থেকে আমি সবার আগে কাপুরুষের মত পালিয়ে এসেছি...
বদরপুরের সেদিনের সেই ঘটনায় আমিই ছিলাম শেষ ব্যাক্তি যে ওখান থেকে এসেছে। আমার সাথে পুলিশের দুজন কনস্টেবল আর আনসারের সদস্য ছিলো দুজন। তবে আমাদের একটা গ্রুপ আগেই পালিয়েছিল। সেই গ্রুপে পুলিশ ও আনসার ছিলো। আমরা ভেবেছিলাম নওশের বোধহয় ঐ দলের সাথে আছে। তাই আমরা ফেরত আসি। পরে আমরা জেনেছি নওশের ফিরে আসতে পারেননি। নওশরের স্ত্রী সরকার থেকে তার পেনশনের ২০ লক্ষ টাকা পেয়েছে। এটা নিশ্চিত করা হয়েছে।
সেদিন আমার সাথে যারা গিয়েছিল তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে আমি কখন এসেছিলাম। আফসোস, এটা ফেনীর সবাই জানে, খালি এই ওসি জানেনা।
২) উনি বলেছেন, রামপুরে আমাদের মারধর করার সময় পুলিশ আমাদের উদ্ধার করে
রামপুরে অবৈধ গ্যাসের লাইন বিচ্ছিন্ন না করার জন্য আমাকে খুব চাপ প্রয়োগ করা হয়। এক পর্যায়ে কাউন্সিলরের নেতৃত্বে একদল লোক গ্যাসের গাড়ির উপর হামলা করে। আমার কোন স্টাফ বা কারও গায়ে তারা হাত দেয়নি। আমরা র্যাব ক্যাম্প পর্যন্ত আসার পর র্যাব একটু এগিয়ে আসলে আমরা ওদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দেই। এরপর আমি দুজন আনসার নিয়ে গুলির নির্দেশ দিয়ে এক কি.মি. ভিতরে প্রবেশ করি এবং বিচ্ছিন্ন করার কাজ শুরু করি। কাজ শুরুর পর পুলিশ আসে। পুলিশ আমাদের সাহায্য করে।
এই পুলিশ অফিসার এটাই জানেনা যে, বাংলাদেশের আইনে কোন একজন লোক আইনি সাহায্য চাইলে তাকে সেটা প্রদান করা পুলিশের কাজ। এরা এখন আইন-কানুন আর পড়ে বলে মনে হয় না। বিভিন্ন আইনের একাধিক ধারায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চাইলে পুলিশ তাকে সহায়তা করতে বাধ্য। এই আইনও সে জানে বলে আমার মনে হয় না।
সে মনে হয় এটাও জানেনা তার পোশাক আর অস্ত্র এই দেশের মানুষের নিরাপত্তা দেবার জন্য। এটাই তার কাজ। তার ধারণা পুলিশ আমাকে বাঁচিয়েছে। প্রথমত, পুলিশ আসার আগেই গুলি করে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। দ্বিতীয়ত, পুলিশ আমাকে নিরাপত্তা দিতেই পারে। সেজন্য আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
সে বিষয়টাকে সমগ্র পুলিশ ইস্যু বানাচ্ছ। সিন্ডিকেটবাজ, অস্বচ্ছ, দুর্নীতিবাজদের একটা প্রচেষ্টা হলো সবাইকে তার সাথে জড়িয়ে ফেলা। ওসি হুমায়ূন, ঐ কনস্টেবল, নায়েক এরা আপনার লোক না। এরাও বাংলাদেশ সরকারের কাজ করে। আপনি এদের মনিব না। শুধুমাত্র কমান্ডিং অফিসার। তাও অন্যায় কমান্ড করার এখতিয়ার সরকার আপনাকে দেয় নাই। এরা সিন্ডিকেটের না, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজও না। আপনারা এদের ব্যবহার করেন এদের আইন না জানার সুযোগ নিয়ে।
৩) উনি বলেছেন, গ্রান্ড হক টাওয়ারে ব্যবসায়ীরা আমাদের পিটিয়েছে। আমি ভীতুর মত পালিয়ে এসেছি।
গ্র্যান্ড হক টাওয়ারে নাকি আমাকে প্রহার করা হয়েছে। পুরো ফেনী শহর জানে গ্র্যান্ড হক টাওয়ারে কি হয়েছে, সে দাবি করছে প্রহার হয়েছে। হাজার হাজার লোক দেখেছে কি হয়েছে।
এসব ফালতু কথার কি জবাব দেওয়া যায়? যারা সেখানে ছিলেন তারাই বলতে পারবে ভালো। তাদের জিজ্ঞেস করলে এটার সত্যতা পাওয়া যাবে।
৪) উনি বলেছেন ওসি ও ইউএনওকে না জানিয়ে বদরপুরে আমরা চুরি করে অভিযান করেছি।
বাংলাদেশের কোন আইনে বলা আছে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইউএনও ও ওসিকে জানিয়ে অভিযান করবে? আর অভিযানের গোপনীয়তা কেন রাখতে হয় এটা শুনলে তো আরেক দফা লজ্জা পাবে এরা।
আচ্ছা তা নাহয় বুঝলাম আমি জানাই নাই। ফুলগাজীর ওসি যদি আমার সেদিনের অভিযান সম্মন্ধে নাই জানত তাহার ফুলগাজী থানা পুলিশ আমার নির্দেশে গুলি কিভাবে করল? তারা কি থানা থেকে পালিয়ে আমারা সাথে যোগা্যোগ করেছিল? ফুলগাজীর ইউএনও স্যার যদি না-ই জানত তাহলে আমরা ইউএনও স্যারের অফিসে বসে কার সাথে কথা বললাম?
এতগুলা ফালতু কথা যে মানুষ বলে এবং সেইটা যে মিডিয়া নিউজ করে তাদের সম্মন্ধে আমার এক শব্দের উত্তর-ফালতু। বরং ঐ ওসির স্ট্যাটাসে সাধারণ মানুষ কমেন্ট করেছে ও জবাব দিয়ে তাকে জব্দ করেছে।
সবচেয়ে যেটা ভয়ংকর সেটি হলো আমি দুর্নীতিবাজ, সিন্ডিকেটকারী প্রশাসনিক ( পুলিশ ও প্রশাসন) কর্মকর্তা নিয়ে লিখলাম। আর সে চারটে মিথ্যা তথ্য দিয়ে, কিছু অযুক্তি দিয়ে আমার চরিত্রহননের চেষ্টা করল। অনেকটা ঠাকুর ঘরে কে রে আমি কলা খাই না এর মত হয়ে গেল না?
সর্বশেষ আমি সাহসী না ভীতু তার সাথে সিন্ডিকেটধারীদের অভিযোগের সম্পর্ক কি? আমি কি এটা কি আমি বলব, সেটা তো মানুষ বলবে..