Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ম্যাজিস্ট্রেট চাইলে পুলিশ সহায়তা করতে বাধ্য, এই আইনও জানে না ওসি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৪৩ PM
আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৪৩ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


গত ৬ এপ্রিল মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত রাফি পরীক্ষা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা তার গায়ে আগুন দেন। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় ওইদিন রাতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। গত বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান।

এ ঘটনার পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে (১৮) অধ্যক্ষের যৌন নিপীড়নের পর কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ফেঁসে যাচ্ছেন তৎকালীন সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। যৌন নিপীড়নের ঘটনাকে ‘নাটক’ ও পরবর্তীতে অগ্নিদগ্ধের ঘটনাকে ‘আত্মহত্যার’ রূপ দিতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন ওসি মোয়াজ্জেম।

দুটি ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাসহ তার সহযোগীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মোয়াজ্জেম। এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগে ১০ এপ্রিল বুধবার সোনাগাজী মডেল থানা থেকে তাকে প্রত্যাহার করা হয়। ফেনীতে হওয়া বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন জেলার সাবেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা।

এরপর আজ শনিবার বিকালে আবারও এসব ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন সোহেল রানা।

তার স্ট্যাটাসটি বিডিমর্নিং পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-

আমাকে এটার জবাব দেওয়া লাগতেছে ব্যাপারটা মেনে নেওয়াই কষ্ট।।

যাক, মহামান্য ওসি হুমায়ূনঃ

জবাবে সোনাগাজীর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উনার কাজকর্ম নিয়ে আমি কিছু বলব না। আপত্তিকর ভাষায় তার পরিচয় প্রকাশ পায় এটাও বলব না। কারণ, আমি এই শ্রেণীর মানুষ হতে চাই না।

১) উনি বলেছেন বদরপুর থেকে আমি সবার আগে কাপুরুষের মত পালিয়ে এসেছি...

বদরপুরের সেদিনের সেই ঘটনায় আমিই ছিলাম শেষ ব্যাক্তি যে ওখান থেকে এসেছে। আমার সাথে পুলিশের দুজন কনস্টেবল আর আনসারের সদস্য ছিলো দুজন। তবে আমাদের একটা গ্রুপ আগেই পালিয়েছিল। সেই গ্রুপে পুলিশ ও আনসার ছিলো। আমরা ভেবেছিলাম নওশের বোধহয় ঐ দলের সাথে আছে। তাই আমরা ফেরত আসি। পরে আমরা জেনেছি নওশের ফিরে আসতে পারেননি। নওশরের স্ত্রী সরকার থেকে তার পেনশনের ২০ লক্ষ টাকা পেয়েছে। এটা নিশ্চিত করা হয়েছে।

সেদিন আমার সাথে যারা গিয়েছিল তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে আমি কখন এসেছিলাম। আফসোস, এটা ফেনীর সবাই জানে, খালি এই ওসি জানেনা।

২) উনি বলেছেন, রামপুরে আমাদের মারধর করার সময় পুলিশ আমাদের উদ্ধার করে

রামপুরে অবৈধ গ্যাসের লাইন বিচ্ছিন্ন না করার জন্য আমাকে খুব চাপ প্রয়োগ করা হয়। এক পর্যায়ে কাউন্সিলরের নেতৃত্বে একদল লোক গ্যাসের গাড়ির উপর হামলা করে। আমার কোন স্টাফ বা কারও গায়ে তারা হাত দেয়নি। আমরা র‍্যাব ক্যাম্প পর্যন্ত আসার পর র‍্যাব একটু এগিয়ে আসলে আমরা ওদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দেই। এরপর আমি দুজন আনসার নিয়ে গুলির নির্দেশ দিয়ে এক কি.মি. ভিতরে প্রবেশ করি এবং বিচ্ছিন্ন করার কাজ শুরু করি। কাজ শুরুর পর পুলিশ আসে। পুলিশ আমাদের সাহায্য করে।

এই পুলিশ অফিসার এটাই জানেনা যে, বাংলাদেশের আইনে কোন একজন লোক আইনি সাহায্য চাইলে তাকে সেটা প্রদান করা পুলিশের কাজ। এরা এখন আইন-কানুন আর পড়ে বলে মনে হয় না। বিভিন্ন আইনের একাধিক ধারায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চাইলে পুলিশ তাকে সহায়তা করতে বাধ্য। এই আইনও সে জানে বলে আমার মনে হয় না।

সে মনে হয় এটাও জানেনা তার পোশাক আর অস্ত্র এই দেশের মানুষের নিরাপত্তা দেবার জন্য। এটাই তার কাজ। তার ধারণা পুলিশ আমাকে বাঁচিয়েছে। প্রথমত, পুলিশ আসার আগেই গুলি করে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। দ্বিতীয়ত, পুলিশ আমাকে নিরাপত্তা দিতেই পারে। সেজন্য আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

সে বিষয়টাকে সমগ্র পুলিশ ইস্যু বানাচ্ছ। সিন্ডিকেটবাজ, অস্বচ্ছ, দুর্নীতিবাজদের একটা প্রচেষ্টা হলো সবাইকে তার সাথে জড়িয়ে ফেলা। ওসি হুমায়ূন, ঐ কনস্টেবল, নায়েক এরা আপনার লোক না। এরাও বাংলাদেশ সরকারের কাজ করে। আপনি এদের মনিব না। শুধুমাত্র কমান্ডিং অফিসার। তাও অন্যায় কমান্ড করার এখতিয়ার সরকার আপনাকে দেয় নাই। এরা সিন্ডিকেটের না, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজও না। আপনারা এদের ব্যবহার করেন এদের আইন না জানার সুযোগ নিয়ে।

৩) উনি বলেছেন, গ্রান্ড হক টাওয়ারে ব্যবসায়ীরা আমাদের পিটিয়েছে। আমি ভীতুর মত পালিয়ে এসেছি।

গ্র‍্যান্ড হক টাওয়ারে নাকি আমাকে প্রহার করা হয়েছে। পুরো ফেনী শহর জানে গ্র‍্যান্ড হক টাওয়ারে কি হয়েছে, সে দাবি করছে প্রহার হয়েছে। হাজার হাজার লোক দেখেছে কি হয়েছে।

এসব ফালতু কথার কি জবাব দেওয়া যায়? যারা সেখানে ছিলেন তারাই বলতে পারবে ভালো। তাদের জিজ্ঞেস করলে এটার সত্যতা পাওয়া যাবে।

৪) উনি বলেছেন ওসি ও ইউএনওকে না জানিয়ে বদরপুরে আমরা চুরি করে অভিযান করেছি।

বাংলাদেশের কোন আইনে বলা আছে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইউএনও ও ওসিকে জানিয়ে অভিযান করবে? আর অভিযানের গোপনীয়তা কেন রাখতে হয় এটা শুনলে তো আরেক দফা লজ্জা পাবে এরা।

আচ্ছা তা নাহয় বুঝলাম আমি জানাই নাই। ফুলগাজীর ওসি যদি আমার সেদিনের অভিযান সম্মন্ধে নাই জানত তাহার ফুলগাজী থানা পুলিশ আমার নির্দেশে গুলি কিভাবে করল? তারা কি থানা থেকে পালিয়ে আমারা সাথে যোগা্যোগ করেছিল? ফুলগাজীর ইউএনও স্যার যদি না-ই জানত তাহলে আমরা ইউএনও স্যারের অফিসে বসে কার সাথে কথা বললাম?

এতগুলা ফালতু কথা যে মানুষ বলে এবং সেইটা যে মিডিয়া নিউজ করে তাদের সম্মন্ধে আমার এক শব্দের উত্তর-ফালতু। বরং ঐ ওসির স্ট্যাটাসে সাধারণ মানুষ কমেন্ট করেছে ও জবাব দিয়ে তাকে জব্দ করেছে।

সবচেয়ে যেটা ভয়ংকর সেটি হলো আমি দুর্নীতিবাজ, সিন্ডিকেটকারী প্রশাসনিক ( পুলিশ ও প্রশাসন) কর্মকর্তা নিয়ে লিখলাম। আর সে চারটে মিথ্যা তথ্য দিয়ে, কিছু অযুক্তি দিয়ে আমার চরিত্রহননের চেষ্টা করল। অনেকটা ঠাকুর ঘরে কে রে আমি কলা খাই না এর মত হয়ে গেল না?

সর্বশেষ আমি সাহসী না ভীতু তার সাথে সিন্ডিকেটধারীদের অভিযোগের সম্পর্ক কি? আমি কি এটা কি আমি বলব, সেটা তো মানুষ বলবে..

Bootstrap Image Preview