Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বিজয়ীনি বীর নুসরাতকে নিয়ে আবেগঘন স্ট্যাটাস তারানা হালিমের

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০১৯, ০৭:৪০ PM
আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৯, ০৭:৪০ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


ডাক্তারদের প্রাণপণ চেষ্ট, কোটি মানুষের প্রার্থনা ব্যর্থ করে দিয়ে গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাত জাহান রাফি মারা যান। পাষণ্ড মাদ্রাসা শিক্ষকের সমর্থকগোষ্ঠীর দেওয়া আগুনে ঝলসে মরতে হয়েছে তাকে।

মৃত্যুর আগে লাইফসাপোর্টে থেকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে গেছেন এ বিজয়ীনি বীর।

আজ বৃহস্পতিবার নুসরাতকে নিয়ে ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম।

তারানা হালিমের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেয়া স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-

‘নুসরাত, তোমার অগ্নিদগ্ধ শরীর, অসীম সাহসিকতার সঙ্গে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা, ব্যান্ডেজে বাঁধা শরীরের মাঝে বেরিয়ে থাকা ফুটফুটে সুন্দর মুখ আর পা-জোড়া, তোমার “ডায়িং ডিক্লারেশন” – এর দৃপ্ত উচ্চারণ –‘এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করব’- আবারও এই সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করল যে সমাজের বিবেক এখন লাইফ সাপোর্টে, তুমি নও।

তুমি বরং লাইফ সাপোর্ট থেকে এই অচল সমাজের অমানবিকতাকে প্রতিবাদ করতে বলে শান্তির জগতে চলে গেছ। নারী-শিশু ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির ঘটনা এখন সড়ক দূর্ঘটনার মতই কেবল সংখ্যা হয়ে যাচ্ছে। এটি হতে দেয়া যাবে না। মাদ্রাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানীর প্রচেষ্টার অভিযোগ করার জন্য তোমার ভাষ্যমতে, মিথ্যা কথা বলে কয়েকজন নারী তোমাকে ছাদে নিয়ে মামলা প্রত্যাহারের চাপ দিলে তুমি তাতে রাজী না হয়ে ‘এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করব’ বললে তোমার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

তুমি তাদের ‘নারী কন্ঠে’র কথা বলেছ। দুঃখ এটাই যে, কাকের মাঝে ‘নারী-কাক’ বা ‘পুরুষ কাক’-এমন লিঙ্গ বিভাজন করি না আমরা। কিন্তু মানুষ বিভাজিত হয়ে যায় নারী ও পুরুষে। একটি কাক বিদ্যুৎপৃষ্ট হলে মারা গেলে অনেক কাক কোথা থেকে যে এসে জড়ো হয়। তাড়স্বরে আওয়াজ করে। ওরা চীৎকার করে, না কাঁদে জানি না। কিন্তু কিছু একটা করে। আর আমরা? যখন তোমার ডায়িং ডিক্লারেশনে কয়েকজন নারী তোমার গায়ে আগুন দিয়েছে বলো-তখন মনে হয় মানুষ কি কাকের মত হতে পারে না? মানুষ নাই হোক। কারণ আমরা মানুষতো নই, কাকও নই।

তুমি যখন তোমার মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললে তখন মাদ্রাসার অন্য শিক্ষকরা ও ছাত্রছাত্রীরা তোমার পক্ষে লড়ে গেলে তুমি শক্তি পেতে। কিন্তু তা হয় নি। যখন ফায়ার সার্ভিসের লড়াকু সোহেল জীবন বাঁচাতে জীবন দেয়, জসিম নামের মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া ছেলেটি, চারতলার গ্রিল বেয়ে উঠে বনানীর এফ আর টাওয়ারের আগুন থেকে নারীর জীবন বাঁচায়, তখনই একদল মানুষ আরেক নারীর গায়ে আগুন দেয়। এত ছোট একটি জীবন কেবল মানুষের ভালো করার জন্য বড় সংক্ষিপ্ত। সেই জীবনে এত হিংসা, এত লোভ, এত প্রতিহিংসা, এত অমানবিকতা, এত পাষন্ডতা!

নুসরাত, তুমি বলেছ- প্রতিবাদ করে যাবে, তোমার কাজ তুমি করেছ। তোমার কাছ থেকে শিখে, এবার নারী পুরুষ নির্বিশেষে আমাদের প্রতিবাদ করার পালা। শেষ থেকে শুরু হোক,নতুন করে পুরনো প্রতিবাদ। এই প্রতিবাদে তোমার সহযাত্রী হবে-বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট।’

Bootstrap Image Preview