সোনালি আঁশ পাট নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। তাদের এ স্বপ্ন শুরু হয়েছে নতুন একটি জাত নিয়ে। এ জাতটি দেশের উদ্ভাবিত যে কোনো জাতের চেয়ে ২০ থেকে ২৪ ভাগ বেশি ফলন দেবে। নির্দিষ্ট সময়ের আগে বীজ সংগ্রহ করা হলেও তাতে ফলন কমবে না। বাড়তি ফলনের জন্য ভারত থেকে যে জাতের বীজ আমদানি করা হয় তার চেয়েও নতুন উদ্ভাবিত এ জাতের ফলন ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি হবে।
গতকাল রবিবার নতুন এ জাতটির অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড। নতুন এ জাতটির নাম বিজেআরআই তোষা পাট-৮। পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) ৫১তম জাত এটি।
তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে সাড়ে ৬ লাখ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়। আর উত্পাদন হচ্ছে ৭২ লাখ বেল। হেক্টর প্রতি ফলন সোয়া ১২ বেল। নতুন এ জাতের মাধ্যমে হেক্টর প্রতি ফলন বাড়বে ৩ বেল। আর সার্বিক উত্পাদন বাড়বে প্রায় ১৮ লাখ বেল। দেশের চাহিদার পাট বীজের প্রায় পুরোটাই আমদানি নির্ভর। বাংলাদেশে পাট বীজের চাহিদা ৬ হাজার টন। এর মধ্যে ভারত থেকে ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টন পাট বীজ আমদানি করতে হয়।
পাট বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন এ জাতের মাধ্যমে বীজ উত্পাদন করে আমদানি নির্ভরতা অনেকটাই কমানো যাবে। ধীরে ধীরে আমদানি শূন্যের কোটায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। ভারত থেকে জেআরও ৫২৪ জাতের পাট বীজ আমদানি করা হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ আমদানি করা বীজের চেয়েও নতুন উদ্ভাবিত জাতের ফলনও ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি। নতুন এ জাতটির গাছ লম্বা, গাঢ় মসৃণ ও দ্রুত বর্ধনশীল। জাতটি ২০১৮-১৯ মৌসুমে ঢাকা, খুলনা ও রংপুরসহ তিনটি অঞ্চলের ১২টি স্থানে ট্রায়াল হয়েছে। সব স্থানেই ফলন বেশি পাওয়া গেছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রধান বীজতত্ত্ববিদ কৃষিবিদ আজিম উদ্দিন বলেন, নতুন জাতটি আগামী মৌসুম থেকে বিএডিসি বীজ উত্পাদন থেকে শুরু করে মাঠে কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করলে পাট বীজের আমদানি নির্ভরতা কমবে। সাশ্রয় হবে বৈদেশিক মুদ্রা।
পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মোঃ মনজুরুল আলম ইত্তেফাককে বলেন, পাটের আবাদের এলাকা বাড়ানোর সুযোগ কম। তাই ফলন বাড়িয়ে মোট উত্পাদন বাড়াতে হবে।
পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ আল মামুন বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে কাঁচাপাট ও পাটজাত পণ্য রফতানিতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে ১০২ কোটি ৫৫ লাখ মার্কিন ডলার। বর্তমানে বাংলাদেশে উত্পাদিত পাট ও পাটপণ্য তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে কেবল পাটজাত ব্যাগের চাহিদা ১০ কোটি থেকে ৭০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে।
এ ছাড়া দেশে অন্যান্য পাটপণ্যের চাহিদা রয়েছে প্রায় সাতশ ১৬ দশমিক ৫২ কোটি টাকার। পাট দিয়ে তৈরি শাড়ি, লুঙ্গি, খেলনা, গহনা ও গহনার বক্সসহ ২৮৫ ধরনের পণ্য দেশে ও বিদেশে বাজারজাত করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের পাট এখন পশ্চিমা বিশ্বের গাড়ি নির্মাণ, পেপার অ্যান্ড পাম্প, জিওটেক্সটাইল হেলথ কেয়ার, ফুটওয়্যার, উড়োজাহাজ, কম্পিউটারের বডি তৈরি, ইলেকট্রনিক্স, মেরিন ও স্পোর্টস শিল্পে ব্যবহূত হচ্ছে। পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার আগামী দু্ই থেকে তিন বছরের মধ্যেই সারা বিশ্বে তিনগুণ বেড়ে যাবে। নতুন জাতের আবাদের মাধ্যমে উত্পাদন বাড়িয়ে এ সুযোগটিও কাজে লাগাতে পারবে বাংলাদেশ।