ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে গাড়ি বোমা হামলায় দেশটির সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) ৪০ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিরা যত হামলা চালিয়েছে বৃহস্পতিবারের হামলাটিই তার মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী।
এই বর্বর হামলায় অন্যতম হামলাকারী হিসেবে উঠে এসেছে আদিল হুসেন দার ওরফে ওয়াকাস নামে এক জঙ্গির নাম। প্রাথমিক তদন্তে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ জানতে পেরেছে বৃহস্পতিবার সিআরপিএফ-এর কনভয়ে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে ছিলেন তিনিই।
ওই হামলার পর জঙ্গি সংগঠনটির পক্ষ থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। পিছনে জইশ-ই-মোহাম্মদের পতাকা আর সামনে সাজানো অসংখ্য স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিয়ে ওই ভিডিওতে গোটা কাশ্মীরকে ভারত বিরোধী সংগ্রামে যোগ দেওয়ার ডাক দিয়েছে আদিল হুসেন দার ওরফে ওয়াকাস।
এদিন হামলার পর আদিলের যে ভিডিও সামনে এসেছে, তাতে সে বলেছে, গত এক বছর সে জইশ-ই-মোহাম্মদ জঙ্গি হিসেবে কাটিয়েছে। কাশ্মীরিদের উদ্দেশ্যে সে বলছে, ‘এই ভিডিও যখন তোমাদের কাছে পৌঁছবে তখন আমি জান্নাতে থাকব।’
উত্তর কাশ্মীরের বার্তাবাহক হিসেবে সে বলে,‘এবার কাশ্মীরের বাকি অংশ এবং জম্মুর সময় এসেছে ভারত বিরোধী সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার।’ বিভিন্ন সময়ে জইশ-ই-মোহাম্মদের চালানো একাধিক হামলার কথাও সে তুলে ধরেছে ওই ভিডিওতে।
পুলিশ রেকর্ড বলছে, পুলওয়ামা জেলার গুন্ডিবাগে থাকত আদিল। তার দুই ভাই আছে। মাঝপথেই সে স্কুলের লেখাপড়ায় ইতি টেনে রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ শুরু করে। তৌসিফ নামে আদিলের এক বন্ধুর দাদা মঞ্জুর আহমেদ দার ছিল জঙ্গি। ২০১৬ সালে সেনা অভিযানে তার মৃত্যু হয়। আর ওই বছরই মার্চ মাসে তৌসিফ এবং ওয়াসিম নামে আরও এক বন্ধুর সঙ্গেই নিখোঁজ হয়ে যায় আদিল।
জম্মু-কাশ্মীরে সামরিক বহরে সিআরপিএফের বাসে আত্মঘাতী হামলায় পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। এমন ভয়াবহ হামলার সমুচিত জবাবের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং।
এ বিষয়ে দিল্লির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কাশ্মিরে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলায় ৪৬ সেনার নিহত হওয়ার ঘটনায় পাকিস্তানকে পুরোপুরি একঘরে করবে ভারত।
বৃহস্পতিবার ভারতের তরফ থেকে অভিযোগ আনা হয়েছে যে, কাশ্মিরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় মদদ রয়েছে পাকিস্তানের। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছে নয়াদিল্লি।
ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এক বিবৃতিতে বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে পাকিস্তানকে একঘরে করতে সব ধরনের কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে ভারত।
অরুন জেটলি আরও বলেন, পুলওয়ামার ঘটনার সঙ্গে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত তারা কোনভাবেই রেহাই পাবে না। দোষীদের জন্য বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ অপেক্ষা করছে।
এক বিবৃতিতে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছেন, জঙ্গি হামলার যোগ্য জবাব দেবে ভারত। এই হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে তিনি বলেন, যারা যারা জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেবে না ভারত।
তিনি আরো জানান, আমরা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই, নিশ্চিন্ত থাকুন হামলার যোগ্য জবাব দেওয়া হবে।
হামলার ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, পুলওয়ামায় সিআরপিএফ জওয়ানদের ওপর হামলার ঘটনা নিন্দনীয়। আমি এই ধরণের কারপুরুষোচিত হামলার তীব্র নিন্দা করছি। আমাদের বীর নিরাপত্তাকর্মীদের বলিদান বিফলে যাবে না।বীর শহিদদের পাশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবে গোটা দেশ।আহতরা দ্রুত আরোগ্যলাভ করুন।
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেছেন, সিআরপিএফ জওয়ানদের ওপর এভাবে কাপুরুষোচিত হামলায় তিনি অত্যন্ত বিরক্ত। পুলওয়ামায় হামলা নিয়ে তিনি ট্যুইটে লিখেছেন, শহিদদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।এমন হামলায় দেশটির সকল রাজনৈতিক নেতারা সরব হয়ে উঠেছেন। সকলে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এছাড়া দেশটির ক্রিকেটার থেকে শুরু করে বলিউডের তারকারা এমন হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে এ হামলার তদন্ত শুরু করেছে দেশটির পুলিশ।
প্রসঙ্গত, কয়েক দশকের মধ্যে এটাই ছিল কাশ্মিরে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার ঘটনা। ৩৫০ কেজি বিস্ফোরক বোঝাই একটি গাড়ি থেকে সেনাবাহিনীর গাড়ি বহর লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়।