Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রকৃতিতে বসন্তের রঙ ছড়াচ্ছে পলাশ

ফিরোজ আহমেদ, নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৭:১৯ PM
আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৭:১৯ PM

bdmorning Image Preview
ছবি: বিডিমর্নিং


বসন্ত মানেই শিমুল পলাশের রঙ ছড়ানো। ঋতু পরিক্রমায় বসন্ত এখনো না আসলেও নাটোরের প্রকৃতিতে বসন্তের উপস্থিতি দৃশ্যমান। শহরের পলাশ গাছগুলোর রাশি রাশি ফুল জানান দিচ্ছে, ঋতুরাজ বসন্ত এসেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পলাশের রুপে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন, রাঙ্গা হাসি রাশি রাশি অশোকে পলাশে।

বসন্তের বার্তা বাহক পলাশ ছাড়া বসন্তের কথা ভাবাই যায়না। তাই বসন্তের কবিতা আর গানে বারবার পলাশের উপস্থিতি। কবিরাদ্বিধান্বিত, বসন্তের পলাশ নাকি পলাশের বসন্ত! তবে পলাশ ছাড়া বসন্তপূর্ণতা পায়না বলে জানান নাটোর এম কে অনার্স কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক জেসমিন আরা লাকী। লাল, লালচে কমলা আর হলুদ রঙেপ লাশ ফুল পাওয়া গেলেও হলুদের দেখা মেলাভার। নাটোরে চোখে পড়া প্রায় সব গাছের ফুলই লালচে কমলা রঙের।

নাটোরে এখন আর নতুন কোন পলাশ ফুলের গাছ চোখে পড়েনা। তবে পুরনো স্থাপনার কয়েকটি স্থানে পলাশ দেখা যায়। রাণী ভবানী রাজবাড়ী চত্বরের অফিসার্স কোয়ার্টারের সামনে সম্ভবত এই শহরের সবচে’ প্রাচীনশত বর্ষী পলাশ ফুলের  গাছ। শত বছরের অধিক পুরনো এই গাছটি তিনতলা ভবনের ছাদের উচ্চতা ছাড়িয়ে ডালপালা মেলে সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ ছোঁয়ার অপেক্ষায় থাকা গাছটিতে রাশি রাশি ফুল। ফুল ধরেছে ভূমি অফিসের পেছনের উত্তর প্রান্তের গাছটিতে। রাজবাড়ীর জলটুংগি দীঘির উত্তর প্রান্তে এখনো কোন রকম দাঁড়িয়ে আছে দু’টো পলাশ ফুলের গাছ। গাছের মুলের মাটি সওে যাওয়ায় হেলে পড়া গাছ দু’টোর ফুলগুলো যেন দীঘির পানি স্পর্শ করতে চাইছে! ভূমি অফিসের গাছটি’রও একই দশা। এর আগে এই আঙিনার গোপি পুকুর পাড়ের তিনপ্রান্তে থাকা তিনটি পলাশ ফুলের গাছ মাটি ধ্বসে হারিয়ে গেছে পুকুরে। এই অবস্থা আর কাঙ্খিত নয়। পুকুওে পড়ে যাওয়ার আগেই এই গাছ তিনটি রক্ষা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন নাটোরের সুধীজনরা।

রাণী ভবানী রাজবাড়ী পেরিয়ে একটু উত্তরে গেলে মহারাজা জগদিন্দ্র নাথ স্কুল এন্ড কলেজের সামনে টিসিসিএ চত্বরে শোভা বর্ধন করছে আরো একটি পলাশ ফুলের গাছ। এই গাছে বর্তমানে ফুল কম থাকলেও অসংখ্য ফুলের কুঁড়ি বসন্তকে রাঙিয়ে যাবে অনেক দিন ধরে।

তবে শহরের আনসার একাডেমী চত্বরের পলাশ ফুলের গাছ সেজেছে অপরুপ সাজে। গাছের প্রায় সব ফুলফুটে দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে। দূরদুরান্ত থেকে মানুষ আসছেন এক ঝলক দেখতে। কেউ বা কুঁড়োচ্ছেন তলায় পড়ে থাকা ফুল। ফুল কুঁড়োতে কুঁড়োতে ছোট্ট সিদরা তুল মুনতাহা বললো, বাবার সাথে কয়েক বার আসলাম, পলাশ ফুল চিনলাম।

পলাশ ফুল এই অফিসের আঙিনাকে সুশোভিত করেছে উল্লেখ করে আনসারের জেলা কমান্ড্যান্ট শাহ আহমদ ফজলে রাব্বী বলেন, আগন্তুকরা ফুল দেখতে এসে মুগ্ধ হলে আমরা অভিভূত হই। বসুন্ধরা সিটি সেন্টারের ডেপুটি ম্যানেজার ও নাটোর চাঁদের হাট কলেজ শাখার সাবেক আহ্বায়ক শরীফুল আযম উজ্জল বললেন, ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে এবারের বসন্তে নাটোরে যাব পলাশ ফুল দেখাতে।

প্রকৃতিতে ইদানিং দূর্লভ হয়ে উঠছে পলাশ ফুলের গাছ। নতুন প্রজন্মেও অনেকেই পলাশ ফুলের সাথে পরিচিত নয়। কিন্তু এভাবে পলাশের বর্ণচ্ছটা ছাড়া বর্ণহীন হতে দেয়া যাবেনা বসন্তকে। তাই রাণী ভবানী রাজবাড়ী চত্বরের দীঘিতে হেলে পড়া পলাশের গাছ তিনটিকে বাঁচাতে ইহবে। নতুন করে শহরময় পলাশ ফুলের গাছ ছড়িয়ে দিতে হবে। এ ব্যাপারে ‘পুষ্পিত নাটোর’ কর্মসূচীর মত কোন কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে স্বজন সমাবেশের মত কোন সামাজিক প্রতিষ্ঠান।

রাণী ভবানী রাজবাড়ী উদ্যান ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোছা: শরীফুন্নেচ্ছা বলেন, এই আঙিনার পলাশ ফুলের তিনটি গাছ রক্ষায় দ্রুতই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।

পলাশ ফুলের চারা উৎপাদনে হর্টিকালচার সেন্টারের কোন কার্যক্রম নেই। তবে দূর্লভ হয়ে ওঠার আগেই এই গাছের চারা উৎপাদনে নাটোর হর্টিকালচার সেন্টার ব্যবস্থা গ্রহন করবে। আর এভাবেই বসন্তকে রঙিন করতে পলাশের অবদান থাকবে অব্যাহত বলে আশাবাদ ব্যক্ত করলেন নাটোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক স.ম. মেফতাহুল বারি।

Bootstrap Image Preview