জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ৪র্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু ২০১৭ সালের সাত ডিসেম্বর ৪র্থ বর্ষের ক্লাস শুরু হয়! ফলে ২০১৮ সালের ১৮ই নভেম্বর সেই পরীক্ষা শুরু হয়ে ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি শেষ হয়েছে।
এদিকে নির্ধারিত সময়ে টিউটোরিয়াল পরীক্ষা শেষ না হওয়ায় চূড়ান্ত পরীক্ষার মাঝে টিউটোরিয়াল পরীক্ষা দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে ওই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সাথে। একই অবস্থা ৪৪ তম ব্যাচেও। ওই ব্যাচের ৩য় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা ২০১৭ সালে হওয়ার কথা থাকলেও এক বছর পর ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে। কিন্তু ল্যাবরুম সংকটের কারণে দেড় মাসেও তাদের ল্যাব পরীক্ষা শুরু করা যায় নি।
এছাড়া ৪১তম ব্যাচের স্নাতকোত্তর পরীক্ষা ২০১৮ সালের ১৫ই নভেম্বর শেষ হয়। ৪২তম আবর্তনের শেষ বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয় ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে। ৪৬তম আবর্তনের ১ম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা ২০১৮ সালের ২৭ জুন শেষ হয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের এক বছর পর পরীক্ষা শেষ হলেও এখানো ফলাফল প্রকাশিত হয়নি। এদিকে আগামী পাঁচ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪৭ তম আবর্তনের ১ম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হবে বলে জানা গেছে।
বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. পীযূষ সাহা বলেন, ক্লাস ও ল্যাব রুম সংকট এবং ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রিতার কারণেই ছয় বছরের শিক্ষাজীবন আট বছরেও শেষ হচ্ছে না।
ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়ে বিভাগের দুই জন অধ্যাপকের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তারা বলেন, অধিকাংশ শিক্ষক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়ার কারণে বিভাগে ঠিকমতো সময় দেন না। এছাড়া দুই-তিন জন শিক্ষকের কারণে সব সময় ফলাফল প্রকাশ করতে বিলম্ব হয়।
এ বিষয়ে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে জানানো হলেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয় না। এদিকে সহকারী অধ্যাপক পদমর্যাদার একজন শিক্ষক ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশে ফিরেছেন। কিন্তু গত এক বছরেও তিনি কোন ক্লাস নেন নি। উপাচার্যপন্থী শিক্ষক হওয়ায় তিনি বহাল তবিয়তে থাকেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষকদ্বয়। ক্লাস না নেয়ার বিষয়টি নিয়ে শির্ক্ষাথীদের সাথে কথা বলেও ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়।
বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, তাকে কোন কোর্স পড়াতে দেয়া হয়নি বিধায় তিনি কোন ক্লাস নেন না। এবার তিনি কোর্স পাওয়ার পর থেকে ক্লাস নেয়া শুরু করবেন।
এদিকে শিক্ষার্থীরা জানান, বর্তমানে বিভাগে সাতটি ব্যাচের জন্য মাত্র চারটি ক্লাসরুম আছে। ক্লাসরুম সংকট সেশনজটের অন্যতম একটি কারণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের ৪১তম ব্যাচের স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত পরীক্ষাক শেষ হয় গত বছরের জানুয়ারী মাসে। কিন্তু ৫০১ নং কোর্সে শিক্ষার্থীদের ‘অভিনব নম্বর’ পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলায় ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। সেই ফলাফল এই বছরের ১৫ ই জানুয়ারি প্রকাশ করে। ফলে তিন মাস আগে ক্লাস শেষ করেও ৪২তম ব্যাচের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় বসতে পারেনি। অন্যদিকে ৪২ তম ব্যাচের পরীক্ষা শুরু না হওয়ায় স্নাতকোত্তরে ভর্তি হতে পারছে না ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষর্থীরা।
এ দুটি বিভাগ সহ জাবির বেশ কিছু বিভাগে সেশনজটে ঝুলে আছে শিক্ষার্থীদের জীবন।
বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে জানা যায়, আইন অনুষদ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিয়ারিং বিভাগ, পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ, রসায়ন বিভাগ, ভূতাত্তি¡ক বিজ্ঞান বিভাগে এক বছর করে, পরিসংখ্যান বিভাগ, গণিত বিভাগ, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে ছয় মাস করে, ব্যবসায় অনুষদের চারটি বিভাগেই রয়েছে ছয় মাস থেকে এক বছরের সেশনজট।
এছাড়া, কলা ও মানবিকী অনুষদে বাংলা বিভাগ ছাড়া সব বিভাগেই ছয় মাস এবং সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সরকার ও রাজনীতি বিভাগ ছাড়া বাকি পাঁচটি বিভাগেও ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সেশনজট রয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. নুরুল আলমের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি এই প্রতিবেদকের কাছ থেকে বিষয়গুলো শুনলেন বলে জানান।
তিনি বলেন, এসব বিষয় গুরুত্বসহ বিবেচনা করে দ্রুত সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট ডিনদের সাথে কথা বলবেন।