Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

লাউয়াছড়ায় পাহাড় কেটে চাষাবাদ, হুমকির মুখে বন্যপ্রাণী

হৃদয় দেবনাথ,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি।।
প্রকাশিত: ২৮ জানুয়ারী ২০১৯, ০৭:০৫ PM
আপডেট: ২৮ জানুয়ারী ২০১৯, ০৭:০৫ PM

bdmorning Image Preview
ছবি: বিডিমর্নিং


মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া এলাকার কালাছড়া বনে ফরেস্ট ভিলেজারদের বিরুদ্ধে পাহাড় কেটে বন উজাড় করে লেবু, আনারস, কাঁঠাল বাগান গড়ে তুলছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ের গাছ পালা উজাড় করে বাগান গড়ে তোলার কারণে সংকুচিত হয়ে পড়ছে ঐতিহ্যবাহী এই বনটি। সেই সাথে আবাসস্থল এবং খাদ্য সংকটে দিন দিন বিলুপ্ত হচ্ছে এই বনে বসবাসরত বিরল প্রজাতির সব বন্যপ্রাণী আর মূল্যবান সব বৃক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনেক দিন ধরেই বনভূমি রক্ষণাবেক্ষণের নামে অবৈধভাবে বনভূমি দখলে নিয়ে পাহাড় আর পাহাড়ের মূল্যবান বৃক্ষ কেটে লেবু ও আনারস আর কাঁঠাল বাগান গড়ে তোলা হয়েছে।

বনবিভাগের কাছ থেকে বসবাসের নামে জমি বরাদ্ধ নিয়ে পর্যায়ক্রমে এসব জমির সাথে টিলা ভূমিগুলোও দখলে নিয়ে নিয়েছেন ফরেষ্ট ভিলেজাররা। ফলে বনের টিলা সাবার ও সংকোচিত হবার পাশাপাশি প্রচন্ড হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ এবং প্রাণীর আবাসস্থল। ক্রমান্বয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্যে।

রবিবার (২৭ জানুয়ারি) সরেজমিনে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের কালাছড়া বিট সংলগ্ন সম্পূর্ণ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বন্যপ্রাণী বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিট অফিসের অদূরেই ভিলেজাররা নতুন নতুন টিলাভূমি দখলে নিয়ে উঁচু টিলাগুলোকে কেটে আনারস, লেবু এবং কাঁঠাল বাগান করেছেন। কালাছড়া বিট সংলগ্ন এলাকায় বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চোখের সামনে দীর্ঘদিন ধরে এসব চলতে দেখেও রহস্যজনক কারণে তারা নীরব ভূমিকা পালন করছেন। এদিকে ফরেস্ট ভিলেজার ছাড়াও লাউয়াছড়ার আশেপাশের এলাকায় সরকারি খাস ভূমি দখলে নিয়ে তৈরী হচ্ছে বাংলো বাড়ী এবং রিসোর্ট যাদের বেশিরভাগেরই নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র।

কালাছড়া বনে স্থানীয় কয়েকটি পরিবার জানায়, তারা কয়েক যুগ ধরেই বনের টিলাভূমিতে বসবাস করছে। ফরেস্ট ভিলেজার হিসেবে তারা বনভূমি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বনবিভাগের কাছ থেকে দুই কিয়ার, আড়াই কিয়ার হারে ভূমি বরাদ্ধ নেয়। এসব ভূমির সাথে পর্যায়ক্রমে নতুন নতুন টিলাভূমি দখলে নিয়ে কয়েক একর উচুঁ নিচু টিলাভূমিতে নতুন নতুন বাড়িঘর গড়ে তোলা হচ্ছে। এসব টিলার ঝোপঝাড় ও গাছগাছালি কেটে চাষাবাদের জন্য সম্পূর্ণ উজার করা হচ্ছে।

সেই সাথে নতুন করে বনের টিলাভূমি দখল বিষয়ে গত বছরের ১৬ আগষ্ট কালাছড়া বিট সংলগ্ন সরইবাড়ি ও বাদে উবাহাটা গ্রামের আবুল হোসেন, ইসমাইল মিয়া, রহমান মিয়াসহ স্থানীয় এলাকাবাসী বন্যপাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগও প্রদান করেন।

লিখিত অভিযোগে তারা জানান, বাগান থেকে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ জোর করে কেটে জবর দখল করে নিয়ে যাচ্ছে। তবে বনের টিলায় বসবাসরত বশির মিয়া ও স্থানীয় কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবুল কালাম সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের বাপ-দাদার আমল থেকে ভিলেজার হিসেবে এখানে বসবাস করছি। ২০০১ সনে ২৫ হেক্টর ফলজ বাগানের জন্য ফরেস্ট প্রস্তাবনা দেয়। এরপর আমাদের প্রায় পৌণে দুই একর জমি দেয়া হলে আমরা সেখানে কাঁঠাল, লেবু বাগান গড়ে তুলি। নতুন করে কোন বাগান গড়ে উঠছে না। তারা আরও জানান, যেখানে আনারস বাগান গড়ে উঠছে সেখানে বাফারজোন ছিল। বাফারজোনের গাছ কেটে আনারস বাগান করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে কালাছড়া বনবিট কর্মকতা মিজানুর রহমান বলেন, এই বাসিন্দারা অনেকদিন ধরে ভিলেজারদের অংশে বসবাস করছে। তারা তাদের অংশে বাগান করছে। তবে টিলাকাটা, গাছ কাটা ও নতুন বাগান বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, তারা প্রতিবছরই বাড়িঘর করছে। তবে এসব বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবহিত আছে। বন্যপ্রাণী ব্যাবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা আবু মোহিত মোঃ মুছা বলেন,আসলে তারা এখন প্রকৃত ভিলেজার নয়। অনেক আগে তাদের ভূমি বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। অভিযোগের ব্যাপারটি তদন্তের মাধ্যমে খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

Bootstrap Image Preview