Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

কিসের এত তাড়া ছিলো, ভাই লিটু?

হুমায়ুন কবির ভূইয়া
প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারী ২০১৯, ০৫:৩০ PM
আপডেট: ১৮ জানুয়ারী ২০১৯, ০৫:৩০ PM

bdmorning Image Preview


মাস তিনেক আগের কথা। আমি তখন দি ইন্ডিেনডেন্ট এ কাজ করি। একদিন অফিসের গাড়ীতে ফিরছিলাম বাসায়। বুকে ব্যথা অনুভব করছিলাম, সেই সাথে সামান্য শ্বাস কষ্ট।

উত্তরাতেই লুবানা হাসপাতাল। গেলাম ওখানে। কর্তব্যরত ডাক্তার ইসিজি করলেন। বললেন, "ভালোই।" কিন্তু, খুব একটা আত্মবিশ্বাসী মনে হলো না তাকে। "সেফ সাইডে থাকার জন্য উপরে স্যারকে একবার দেখান," উপদেশ দিলেন তিনি। আমি স্যারের নাম জানতে চাইলে উনি বললেন রাকিবুল ইসলাম লিটু।

আমি জানতে চাইলাম আর কোন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ আছেন কিনা। না সূচক জবাব পেলাম। তাই বাধ্য হয়েই গেলাম। কেন তাকে দেখাতে চাইছিলাম না একটু পরেই বোঝা যাবে।

গিয়ে দেখি তার রুমে অনেক রোগী। আমি ফাইল জমা দেয়ার জন্য ঢুকতেই দাঁড়িয়ে গেলেন। "আরে, বস, আপনি", স্বভাবসুলভ উচ্ছসিত ভঙ্গিতে বললেন। জানি না কেন যেন বিচিত্র কারণে উনি আমাকে বস ডাকতেন। তার সাথে আমার পরিচয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকে। তারপর থেকে আমার প্রয়োজন ছাড়া তেমন যোগাযোগ হত না।

সে যাই হোক। উনি আমাকে খুব ভালোভাবে দেখলেন। আধা ঘণ্টা শুইয়ে রাখলেন হাসপাতালের খুব একটা দামী কেবিনে। তারপর, আবার ইসিজি করালেন। বললেন আগের ইসিজির সাথে একটা পার্থক্য দেখতে পাচ্ছেন। উপদেশ দিলেন আমার নিয়মিত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ইউনাইটেডের মোমেনুজ্জামান সাহেবকে দেখাতে। কঠিন করে বললেন সিগারেট ছাড়তে।

আমাকে বিদায় করার আগে সহকারীকে ডেকে বললেন কোন টাকা না নিতে। আমি তাকে বললাম যে এই কারণেই তার কাছে আমি আসতে চাই না। উনি হাসলেন। আমি অনুরোধ করলাম অন্তত হাসপাতালের খরচটা নিন। পাত্তাই পেল না আমার অনুরোধ। ২০০৮ সালে আমি উনার অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলাম প্রায় ১৫ দিন উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে। তখনও উনি আমার কাছ থেকে অর্ধেক টাকা নিয়েছিলেন। খোঁজ নিয়ে জেনেছি অনেকের সাথেই বিশেষ করে গরীব রোগীদের সাথে তিনি এই কাজটা করতেন।

তার আরো কয়েকটা জিনিস আমার ভালো লাগতো। রোগীদের সাথে তার সহজ ও সাবলীল ভঙ্গি এবং কম ব্যবসায়িক মানসিকতা তাদের অন্যতম।

যে লোক পুরো পেশাদারী জীবনে মানুষের হৃদপিণ্ডের সমস্যার সমাধান করেছেন তিনিই কিনা এতো অল্পবয়সে সেই হৃদপিণ্ডের সমস্যায় আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেলেন। এটা মেনে নেয়া খুবই কষ্টকর।

আমারতো এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে লিটু নেই এবং আমি তার হাস্যোজ্জ্বল মুখে আর বস ডাকটা শুনতে পারবো না।

পরম করণাময়ের কাছে প্রার্থনা উনি যেন এই ভালোমানুষটাকে উনার হেফাজতে রাখেন।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক

Bootstrap Image Preview